২৬/১১ মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলেন আমেরিকায় তাঁর আইনজীবী জন ডি ক্লাইন। মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিওকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ভারতে রানাকে প্রত্যর্পণ করা হলে তাঁর উপর অত্যাচার করা হতে পারে, চিঠিতে সেই আশঙ্কার কথাও ছিল। কিন্তু আইনজীবীর ওই চিঠির আবেদনে সাড়া দেননি রুবিও। জানিয়েছিলেন, প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত আদালতের। সেখানে রানার আর্জি একাধিক বার খারিজ হয়ে গিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দেয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তার আগে জানুয়ারিতে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট রানার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। হিন্দুস্তান টাইম্স জানিয়েছে, সেই সময়েই রুবিওকে চিঠি লিখে রানাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলেন তাঁর আইনজীবী। চিঠিতে তিনি রানার বয়স, স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সমস্যার কথা জানান। সেই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রত্যর্পণ করা হলে ভারতে রানার উপর অত্যাচার হতে পারে। রুবিওর দফতর থেকে এই চিঠির উত্তর দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
মার্কিন বিদেশসচিব জানিয়েছিলেন, রানাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্যাতনবিরোধী নীতির অধীনে নেওয়া হয়েছে। ক্যালিফর্নিয়ার আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই আদালত ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে পর পর দু’বার প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে রানার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
রুবিওর দফতরে চিঠি লিখেছিলেন রানার আইনজীবী। রুবিওর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। সামনাসামনি আলোচনার মাধ্যমে ভাল করে তাঁকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, কেন রানার আমেরিকায় থাকা জরুরি। মোট চারটি কারণ আবেদনের সপক্ষে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রথমত, শিকাগোর আদালতে একই অপরাধের অভিযোগে রানার বিচার হয় এবং সেখান থেকে তিনি খালাস পান। দ্বিতীয়ত, ডেভিড হেডলির পরিকল্পনায় পার্শ্বচরিত্র ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না রানা। তৃতীয়ত, ভারতে জেলের অবস্থা এবং মানবাধিকার রক্ষার ইতিহাস। চতুর্থত, রানার শারীরিক পরিস্থিতির ক্রম অবনতি।
চিঠিতে রানার আইনজীবী লিখেছিলেন, ভারতে তাঁর মক্কেলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে কঠোর এবং সবচেয়ে অবমাননাকর আচরণের মুখে পড়তে হবে রানাকে।’’ এ ছাড়া, রানার কিডনির সমস্যা, পারকিনসন্স রোগের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন আইনজীবী। জানিয়েছিলেন, এর আগে পর পর দু’বার রানা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আইনজীবীর চিঠির জবাব দিয়ে রুবিওর দফতর জানিয়ে দেয়, তাঁর অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রানাকে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত তিনি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর ১৮ দিনের এনআইএ হেফাজত মঞ্জুর করেছে আদালত। এনআইএ জানিয়েছে, ২৬/১১ হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন পাক বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান রানা। তিনি হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে অভিযোগ। আপাতত দিল্লিতে এনআইএ সদর দফতরে ২৪ ঘণ্টার নজরদারিতে রয়েছেন তিনি।