কুলভূষণ যাদব। -ফাইল ছবি।
পাকিস্তানের জেলে বন্দি কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে দেখা করার জন্য পাকিস্তানের দেওয়া শর্তগুলির একটিও ভারত মানবে না। দিল্লির তরফে শুক্রবার এ কথা জানিয়ে দেওয়া হল। ফলে, এ দিন কুলভূষণের সঙ্গে দেখাও করলেন না ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসাররা। ইসলামাবাদের শর্ত কেন মানবে না, তারও কারণ জানিয়েছে দিল্লি। বলেছে, দ্য হেগে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ইসলামাবাদকে দ্রুত ওই অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার ১০ দিনেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর, বৃহস্পতিবার পাক সরকার ওই অনুমতি দেওয়ার সময় যে শর্ত আরোপ করেছে, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করার অনুমতি দিতে গিয়ে গত কাল ইসলামাবাদের তরফে বলা হয়, সাক্ষাতের সময় হাজির থাকবেন পাক প্রশাসনের এক প্রতিনিধি। আর গোটা সাক্ষাৎপর্বটাই ধরে রাখা হবে সিসিটিভি-র ক্যামেরায়। সেটাই পাকিস্তানের কানুন। যেমনটা হয়েছিল মা ও স্ত্রীর সঙ্গে যখন দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল কুলভূষণকে।
কেন ইসলামাবাদের দেওয়া পূর্বশর্তগুলি ভারত মানবে না, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিদেশমন্ত্রক সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা চুক্তির একটি ধারার উল্লেখ করেছে। চুক্তির ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ১ (ক) প্যারাগ্রাফে লেখা রয়েছে, ‘‘যে দেশের নাগরিক বন্দি রয়েছেন, তাঁকে তাঁর দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে অবাধে দেখা করতে দিতে হবে। সেই দেশের কূটনীতিকরাও যাতে অন্য দেশে তাঁদের বন্দি নাগরিকের সঙ্গে অবাধে দেখা করতে পারেন, সেটাও সুনিশ্চিত করতে হবে।’’
আরও পড়ুন- কুলভূষণের কাছে পৌঁছনোর ছাড়পত্র
আরও পড়ুন- ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে কুলভূষণকে দেখা করতে দিতে বাধ্য পাকিস্তান, বলল বিদেশ মন্ত্রক
বস্তুত, কোন পদ্ধতিতে কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকরা দেখা করবেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর থেকেই তা নিয়ে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। দিল্লি চাইছে, যে ভাবে মা ও স্ত্রীর সঙ্গে পাকিস্তানের জেলে বন্দি কুলভূষণকে দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল, সেই ভাবে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করার অনুমতি যেন না দেওয়া হয়। তা হলে ভারতের পক্ষে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। পক্ষান্তরে, ইসলামাবাদ বলে চলেছে, তারা ‘সেই অনুমতি দেবে তাদের আইন মোতাবেক। আন্তর্জাতিক আদালতও তাই বলেছে।’
গত ১৭ জুলাই দ্য হেগে, আন্তর্জাতিক আদালত কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দেয় ইসলামাবাদকে। এও বলে, জেলে বন্দি কুলভূষণের সঙ্গে যাতে দেখা করতে পারেন ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসাররা, সেই অনুমতিও দিতে হবে পাক সরকারকে।
আন্তর্জাতিক আদালতের সেই রায়কে ভারত ‘বড় জয়’ বলে স্বাগত জানিয়েছিল। ইসলামাবাদের এ দিনের ঘোষণা তারই প্রেক্ষিতে।
ইরান থেকে পাকিস্তানে ঢোকার পর গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে ২০১৬-এর ৩ মার্চ বালুচিস্তান প্রদেশ থেকে কুলভূষণকে গ্রেফতার করে পাক নিরাপত্তা বাহিনী। তার পর ২০১৭-র এপ্রিলে কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাক সামরিক আদালত।
ওই সময় ভারতের তরফে জানানো হয়, নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর ইরানে ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলেন কুলভূষণ। সেখান থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। রায় ঘোষণা পর্যন্ত কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে স্থগিতাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালতের ১০ সদস্যের বেঞ্চ।
আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের আরও অভিযোগ ছিল, ৪৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসার কুলভূষণের সঙ্গে পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্যদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না (কনস্যুলার অ্যাক্সেস)।
কুলভূষণকে কনস্যুলার অ্যাক্সেস না দিলেও পাকিস্তান ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে তাঁর স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে ওই অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসারের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়।পরে যদিও ভারতের তরফে অভিযোগ করা হয়, কুলভূষণকে ‘গুপ্তচর’ প্রমাণ করানোর জন্যেই পাকিস্তানের সেটা একটা কৌশল ছিল।
ভারতের অভিযোগ ছিল, এই ভাবেই ভিয়েনা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে ইসলামাবাদ। পাক সামরিক আদালতের ওই রায়কে ভারতের তরফে আন্তর্জাতিক আদালতে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ বলে অভিযোগ করা হয়। পাকিস্তান ভারতের সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। বলে, কুলভূষণের মতো ‘গুপ্তচর’ দিয়েই ভারত পাকিস্তানের গোপন খবরাখবর সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল।
এই মামলায় ভারতের পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে পাকিস্তানের সামরিক আদালতের কার্যকলাপ নিয়েও আন্তর্জাতিক আদালতে প্রশ্ন তোলেন। তারই প্রেক্ষিতে তিনি যাদবকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে আর্জি জানান। অন্য দিকে, পাকিস্তানের আইনজীবী খায়র কুরেশি আন্তর্জাতিক আদালতকে ভারতের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy