আমেরিকার নয়া শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিন ছাড়া বাকি সব দেশের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দেশগুলিকে আপাতত স্বস্তি দিলেও চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণার পরেও স্বস্তিতে নেই বিশ্ব। বরং, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তেও আর্থিক মন্দা কাটানো যাবে না, এমনটাই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
বিশ্বের অন্যতম ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং সংস্থা জেপি মর্গ্যান চেজ় জানাচ্ছে, ট্রাম্পের নীতির ফলে আগামী দিনে ৬০ শতাংশ মন্দার মুখ দেখতে চলেছে বিশ্ব। আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিতে বার বার রদবদলের প্রভাব পড়তে চলেছে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ আর্থিক বিকাশে, যা শুধু আমেরিকাতেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মন্দার জন্ম দিতে পারে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। জেপি মর্গ্যান ছাড়াও সাবধানবাণী শুনিয়েছেন মার্কিন পরামর্শদাতা সংস্থা আরএসএম ইউএস-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস। তিনিও জানিয়েছেন, শুল্কনীতিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ মন্দা রোধ করার জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদেরাও আগামী ১২ মাসে অন্তত ৪৫ শতাংশ মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন।
বুধবার রাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জেপি মর্গ্যানের অর্থনীতিবিদেরা লিখেছেন, ‘‘অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে দেখলে ‘মুক্তি দিবসে’ ঘোষিত চড়া পারস্পরিক শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে, অন্য সব কিছু বাদ দেওয়া সহজ নয়। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা এখনও উদ্বেগজনক।’’ বিশেষজ্ঞদের আরও মত, এখনও ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্ক আগের মতোই বহাল রয়েছে, যা বিশ্ববাজারে ‘বড় ধাক্কা’ দিতে পারে। এমনকি, এই ধাক্কা হতে পারে ২০১৮-১৯ সালের বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কার ৭.৫ গুণের সমান! তা ছাড়া, চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা প্রায় ৮৬০ বিলিয়ন ডলার কর বৃদ্ধির সমান (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৪০০ কোটি টাকা)। এর পরেই প্রতিবেদনে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, বরং এটা কেবল শুরুর শেষ।’’
সম্প্রতি আমেরিকার বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর ‘পারস্পরিক শুল্কে’র কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তালিকায় চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি ভারত বা ইজ়রায়েলের মতো আমেরিকার ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ ছিল। ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল আমেরিকার অন্দরেও। গত সপ্তাহে আমেরিকায় ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে ব্যাপক পরিসরে আন্দোলন শুরু হয় মার্কিন মুলুকে। হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি-সহ আমেরিকার সব বড় শহরে ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় মার্কিন জনতা। আমেরিকার শেয়ার বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে বুধবার চিন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর নয়া শুল্কনীতি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। ভারতীয় সময় অনুসারে বুধবার রাতে চিন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন। যদিও কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত হোয়াইট হাউস থেকে মেলেনি। তবে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, বুধবার ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর পরই বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে হাল ফিরতে শুরু করেছে। আমেরিকার শেয়ার বাজারের দু’টি সূচক ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’ এবং ‘ন্যাসড্যাক’ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে মেক্সিকো, কানাডা-সহ বেশির ভাগ দেশের পণ্যের উপরেই প্রাথমিক ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্ক এখনও রয়েছে। আমেরিকার কোষাগার সচিব স্কট বেসান্ত জানিয়েছেন, যে সব দেশ আমেরিকার উপর ‘পাল্টা’ শুল্ক চাপায়নি, তাদের ‘পুরস্কৃত’ করা হবে। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে যে দেশগুলি আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক প্রসঙ্গে যোগাযোগ করেছে, আগামী ৯০ দিন ওই দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে।