৯/১১-র স্মৃতি-সৌধে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি (বাঁ দিকে)। সঙ্গে অন্য কূটনীতিকেরা। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে। পিটিআই
আর পাঁচটা দিনের মতোই স্ত্রী জিলের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন জো। উইলমিংটন থেকে ট্রেনে করে ডিসি— এটাই তাঁর কাজের দিনের নিত্যকার রুটিন। হঠাৎ ফোনের ও-প্রান্ত থেকে চিৎকার করে ওঠেন জিল— ‘হে ভগবান, এ কী কাণ্ড!’ নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারে তখন ধাক্কা মেরেছে দ্বিতীয় অপহৃত বিমানটি।
সে দিনের সেই জো অধুনা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জোসেফ বাইডেন। ২০০১-এ যখন আমেরিকার উপরে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালায় আল কায়দা, তখন সেনেটর বাইডেন সেনেটের ‘ফরেন রিলেশনস কমিটি’র চেয়ারম্যান। ‘প্রমিসেস টু কিপ: অন লাইফ অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামের আত্মজীবনীতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন লিখেছেন ৯/১১-র সেই দিনটির কথা— ‘‘ট্রেন থেকে নেমেই দেখি, ক্যাপিটলের পিছনের আকাশে ধূসর ধোঁয়া। ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে দশটা। পরে জেনেছিলাম, ৯-৩৭-এ পেন্টাগনের পশ্চিম দেওয়ালে ধাক্কা মেরেছিল তিন নম্বর অপহৃত বিমানটি।’’
স্টেশন থেকে হেঁটে ক্যাপিটলে পৌঁছে বাইডেন দেখেন, হাউস এবং সেনেটের সব ভবন থেকে বার করে আনা হচ্ছে কংগ্রেস সদস্য ও কর্মীদের। কিন্তু ফিরে যাওয়ার বদলে ক্যাপিটলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন সেনেটর বাইডেন। পুলিশ আটকে দেয় তাঁকে। বাইডেনের কথায়, ‘‘আমি আসলে চেয়েছিলাম, কংগ্রেসের অধিবেশন ফের শুরু করে দেওয়া হোক। সন্ত্রাসবাদীদের এই বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে, যাই হোক না কেন, আমেরিকা কখনও থেমে থাকে না।’’
ক্যাপিটলে বা হোয়াইট হাউসে হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় তখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে তুলে দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানে। তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুরক্ষিত বাঙ্কারে। এই পরিস্থিতিতে ক্যাপিটলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, বাইডেন এবং রিপাবলিকান সেনেটর জন ওয়ার্নার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। বাইডেন একই কথা বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘আমাদের থেমে গেলে চলবে না। স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে যেতে হবে। কিছুতেই সন্ত্রাসবাদকে জিততে দেওয়া যাবে না। ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান— সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কিছুতেই আমাদের ভেঙে ফেলা যাবে না।’’
বাইডেনের মতে, ‘‘এই হামলার পরে যে আমরা, জাতি হিসেবে, ভেঙে পড়িনি, এটা দেশবাসীকে তখন বোঝানোর খুব দরকার ছিল। সেই তাগিদ থেকেই ফোন করি প্রেসিডেন্ট বুশকে। বলি, ‘আপনার ওয়াশিংটনে ফিরে আসা খুব প্রয়োজন’।’’ বাইডেনের কথায়, ‘‘বুশকে সে দিন শার্ল দ্য গলের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ফরাসি নেতা দ্য গল। শঁসে লিজ়েতে মিছিলের উপরে কেউ গুলি চালায়। সবাই এ-দিক ও-দিক পালিয়ে গেলেও থামেননি দ্য গল। সোজা হেঁটে গিয়েছিলেন। ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের মনে দ্য গলের সেই ছবিটাই চিরকাল গাঁথা হয়ে থাকবে।’’ বাইডেনের কথা শুনে এয়ার ফোর্স ওয়ান ঘুরিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন প্রেসিডেন্ট বুশ।
আগামী কাল, ৯/১১-র কুড়িতম বর্ষপূর্তিতে নিউ ইয়র্কের গ্রাউন্ড জ়িরো (যেখানে ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার), ভার্জিনিয়ার পেন্টাগন এবং পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে (যেখানে চতুর্থ বিমানটিকে ক্র্যাশ করান যাত্রীরা) যাবেন সস্ত্রীক বাইডেন। শ্যাঙ্কসভিলের স্মৃতি-সৌধে কালকের অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশ ও তাঁর স্ত্রী লরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy