(বাঁ দিকে) জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহের সুপার মঙ্গলবারের লড়াইতেই ছবিটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বোঝাই গিয়েছিল, চূড়ান্ত লড়াইয়ে আরও একবার মুখোমুখি হতে চলেছেন জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত কাল আমেরিকার মিসিসিপি, জর্জিয়া, ওয়াশিংটনের মতো বেশ কিছু প্রদেশে দুই দলেরই প্রাথমিক নির্বাচন ছিল। তার ফলাফল যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ‘ডেলিগেট ভোটের চৌকাঠ’ পেরিয়ে গিয়েছেন বাইডেন এবং ট্রাম্প। ফলে বহু বছর পরে আরও এক বার ‘রিম্যাচ’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেখতে চলেছে আমেরিকা। অর্থাৎ গত বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, এ বারও চূড়ান্ত পর্বে সেই দুই প্রার্থীই ফের মুখোমুখি হতে চলেছেন।
৬৮ বছর আগে, ১৯৫৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী অ্যাডলাই স্টিভেনসনকে হারিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেছিলেন রিপাবলিকান নেতা ডুইট ডি আইজ়েনহাওয়ার। সেটা ছিল আমেরিকান রাজনীতির ইতিহাসে শেষ ‘রিম্যাচ’ নির্বাচন। অর্থাৎ তার আগের বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও মুখোমুখি হয়েছিলেন স্টিভেনসন এবং আইজ়েনহাওয়ার। সেটা ছিল ১৯৫২ সালের নির্বাচন। পরিসংখ্যান বলছে, ’৫৬-তে আরও অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে স্টিভেনসনকে হারিয়েছিলেন আইজ়েনহাওয়ার। ১৯৫৬-র পরে ২০২৪-এ আবার মুখোমুখি হবেন একই প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
আগামী ৫ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ দেশে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে গেলে প্রাথমিক পর্বেই বেশ কিছু নির্বাচন জিতে আসতে হয়। মূলত সেগুলি হয় প্রাদেশিক ভোট। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীদের নিজেদের মধ্যেই প্রথমে লড়াই হয়। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হয় আদতে কোন দু’জন দুই দল থেকে লড়বেন। সেই হিসেব মতো ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে গেলে যথাক্রমে বাইডেনকে ১৯৬৮টি এবং ট্রাম্পকে পেতে হত ১২১৫টি ডেলিগেট ভোট। কালকের প্রাথমিক নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, বাইডেনের ঝুলিতে রয়েছে ২০৯৯টি এবং ট্রাম্পের ঝুলিতে রয়েছে মোট ১২২৮টি ভোট। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও আলাদা। এ বার বাইডেনের সামনে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে প্রায় কেউই ছিলেন না। ফলে প্রাথমিক পর্বে জেতা তাঁর পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়েছে। উল্টো দিকে, ট্রাম্প প্রথম থেকেই প্রাথমিক নির্বাচনে এগিয়েছিলেন। বিবেক রামস্বামী এবং রন ডিস্যান্টিস অনেক আগেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড় থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেন। একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিকি হেলি ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহের সুপার মঙ্গলবারের লড়াইয়ের পরে সেই দৌড় থেকে সরে আসেন নিকি-ও। ট্রাম্পের রাস্তা আরও মসৃণ হয়।
তবে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা বলছে, ট্রাম্প আর বাইডেনের এই লড়াইকে আদৌ ভাল চোখে দেখছেন না আমেরিকার অধিকাংশ নাগরিক। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এ বার অন্তত তাঁরা অন্য মুখ চেয়েছিলেন। এক দিকে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে যৌন হেনস্থা, অজস্র ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে, বাইডেনের মূল সমস্যা তাঁর বয়স। ৮০ পেরোনো প্রেসিডেন্ট দেশ চালনার কাজ কতটা দৃঢ় ভাবে করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান আমেরিকার আমজনতা।
তবে গত কাল প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ের পরে লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিয়েছেন বাইডেন। জানিয়েছেন, তাঁকে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বাছার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘এই নভেম্বরে আমরা রেকর্ড ভোট পাব। আমি জানি আমরাই পারব। আপনারা কি প্রস্তুত? আমাদের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে? আপনারা কি প্রস্তুত, স্বাধীনতা রক্ষা করতে? এই ভোটে জিততে কি আপনারা
প্রস্তুত?’’ এ বারও রিপাবলিকানদের প্রার্থী ট্রাম্প হওয়ায় তা দেশের জন্য আরও বড় সঙ্কট বলে বার্তায় উল্লেখ করেছেন বাইডেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমেরিকার মানুষ আমাদেরই বাছবেন।’’ উল্টো দিকে ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানো
থেকে শুরু করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো অজস্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরও কয়েকটি প্রদেশের প্রাথমিক নির্বাচন এখনও বাকি। তবে ইতিমধ্যেই ডেলিগেট ভোট পেয়ে যাওয়ায় ট্রাম্প-বাইডেন দ্বৈরথের জন্যই তৈরি হচ্ছেন আমেরিকার মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy