একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা মহম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল বাংলাদেশ সরকার। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১ মিনিটে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান। একাধিক খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে কামারুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন। পাঁচ দিন আগে সর্বোচ্চ আদালতও তাঁর আপিল খারিজ করে দেয়। কিন্তু জামাতে ইসলামির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান (৬৫) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে অস্বীকার করেন। তার পরে এ দিনই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হল।
মৌলবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ হিসেবে মঙ্গলবার নববর্ষ পালন করবেন বাংলাদেশের মানুষ। তার আগে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় উল্লাসে ফেটে পড়েন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। শাহবাগে জমায়েত হাজার হাজার মানুষ এ দিন ফাঁসির ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। ঘোষণার পরেই স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা চত্বর।
মশাল জ্বেলে মিছিলে পা মেলান মানুষ। উৎসব পালিত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র। কামারুজ্জামানের নিজের এলাকা শেরপুরে মিষ্টি বিলি করেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া সোহাগপুরের এক মহিলা বলেন, ‘‘ও আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমার ভাইকে মেরেছে। আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। এই দিনটি দেখব বলে এত দিন কষ্ট করে বেঁচে ছিলাম!’’
জয়োল্লাস: শেরপুরের কসাই নামে পরিচিত জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ
নেতা মহম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির ঘোষণার পরে শনিবার রাতে উল্লাস ঢাকার শাহবাগ চত্বরে।
শেরপুর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে সন্ত্রাসের নেতৃত্বে ছিলেন কামারুজ্জামান। আল বদর বাহিনী গ্রাম কে গ্রাম উজাড় করেছে তাঁর উপস্থিতিতে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচারক রায় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘জামাতের এই নেতা যে ভয়ানক সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন, কোনও মানুষ তা করতে পারে না। একমাত্র জানোয়ারের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা যেতে পারে। এ নির্যাতন নাৎসিদের চেয়েও ভয়াবহ।’ সোহাগপুরে একটি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছিল কামারুজ্জামানের বাহিনী।
গত কয়েক দিন ধরেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছিল। জেলের মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। শেরপুরে কামারুজ্জামানের পরিবার তাঁর শেষকৃত্যের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত তাঁর আপিল খারিজ করার পরে প্রাণভিক্ষা চাওয়া না-চাওয়া নিয়ে তিনি কালক্ষেপ করছিলেন। কাল সকালে দুই ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে আসেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল
আজ জানান, ‘‘আসামি প্রাণভিক্ষা করতে রাজি নন।’’
জামাত নেতার দেহ নিতে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এর পরে আজ বিকেলে জামাত নেতার পরিবারের লোককে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ডাকা হয়। তার পরে ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগারে যান। সন্ধ্যায় চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। জেলের মৌলভি ধর্মগ্রন্থ পড়ে শোনান। সে খবর বাইরে আসার পরে জেলের বাইরে তখন উল্লাস। তার পরে জহ্লাদরা কামারুজ্জামানকে মঞ্চে তুলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন।
জামাত শীর্ষ নেতার ফাঁসির তোড়জোড়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছিল সরকার। পুলিশের পাশাপাশি কয়েকশো আধাসেনাও মোতায়েন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কামারুজ্জামানের আপিল খারিজ করার পরেই দেশজুড়ে দু’দিন হরতাল ডেকেছিল জামাতে ইসলামি। কিন্তু তাতে কোনও সাড়া মেলেনি।
ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy