মাকরঁ ও বোলসোনারো।
আমাজনের বৃষ্টি বনানীকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থসাহায্য ব্রাজিল নেবে না বলেই প্রথমে জানিয়েছিল এ দেশের সরকার। সঙ্গে খোঁচা দিয়ে বলেছিল, এ সবে মাথা না দিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বরং তাঁর ‘‘নিজের বাড়ি আর উপনিবেশের যত্ন নিন।’’ তবে দিন গড়াতেই প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো ভোল বদলে বলেছেন, মাকরঁ যে ভাবে তাঁকে অপমান করেছেন, তা যদি ফিরিয়ে নেন, তা হলে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থসাহায্য নিতে কোনও আপত্তি নেই তাঁর।
বোলসোনারো বলেছেন, মাকরঁ তাঁকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে আক্রমণ করেছেন এবং তিনি ব্রাজিলের সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ব্রাসিলিয়ায় সাংবাদিকদের সামনে আজ দেশের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আগে উনি সব অপমান ফিরিয়ে নিন। উনি তো আমায় মিথ্যেবাদী বলেছেন। উনি যদি অপমান ফিরিয়ে নেন, তা হলে আমরা কথা বলতে পারি।’’
গত কাল ফ্রান্সের বিয়ারিৎজ়ে জি-৭ সম্মেলনে দেশগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমাজন বাঁচাতে ২ কোটি ২০ লক্ষ ডলারের অর্থসাহায্য দেওয়া হবে ব্রাজিলকে। কিন্তু আজ প্রথমে বোলসোনারোর চিফ অব স্টাফ অনিক্স লোরেনজ়োনি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘‘ওই প্রস্তাবের প্রশংসা করেও বলছি অর্থসাহায্য বরং ইউরোপের অরণ্য ফেরানোর কাজে ব্যবহার করা হোক।’’ এই সূত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে ব্রাজিল সরকারের শ্লেষ ছিল, ‘‘বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাওয়া একটা গির্জায় (নোত্র দাম) আগুন লাগার আশঙ্কার কথা আগে থেকে জেনেও সেটা আটকাতে পারেননি মাকরঁ। উনি আমাদের দেশকে কি শেখাবেন বলে ভাবছেন?’’
অথচ লোরেনজ়োনির বক্তব্য প্রকাশের আগে ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী রিকোর্ডো সালেস আবার জানিয়েছিলেন, জি-৭-এর অর্থসাহায্যের সিদ্ধান্তে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো তাঁর মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকে আলোচনার পরে তখন তাঁদের সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। চিফ অব স্টাফ লোরেনজ়োনি বলেন, ‘‘ব্রাজিল একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন দেশ যেখানে কোনও দিনই ঔপনিবেশিক, সাম্রাজ্যবাদী রীতিনীতি কাজ করেনি। সেই কাজটা করাই প্রকৃতপক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁর উদ্দেশ্য।’’ বোলসোনারোর সঙ্গে মাকরঁর দ্বন্দ্ব ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। গত কাল মাকরঁর স্ত্রী ব্রিজেটকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করায় বোলসোনারোকে এক হাত নেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। আজ আমাজন বাঁচানোর অর্থসাহায্য নিয়ে পাল্টা বিতর্কে নামলেন বোলসোনারো।
বিপুলায়তন আমাজনের ৬০ শতাংশ ব্রাজিলের অংশে হলেও আরও ৮টি দেশের কিছু অংশ বা সীমান্ত ছুঁয়ে গিয়েছে এ অরণ্য। তার মধ্যে আছে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অতলান্তিক উপকূলে ফ্রেঞ্চ গিয়ানা অঞ্চল। সোমবারের পাওয়া তথ্য বলছে, দাবানলে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোয় সেনা হেলিকপ্টার জলবর্ষণ শুরু করলেও আরও নতুন নতুন জায়গায় কয়েকশো আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ধোঁয়ায় দমবন্ধ অবস্থা পোর্তো ভেলো শহরে। যার জেরে সেখানে দু’ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিতে হয় বিমানবন্দর। আগুন নেভানোর কাজ পুরোদমে চললেও এখনও লেলিহান দাপটের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম রনডোনিয়া প্রদেশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy