প্রতীকী ছবি।
খচখচ করছে ব্রেক্সিট-কাঁটা। তবু টেমসের পাড়ে পুজোর গন্ধ যেন কাটতেই চাইছে না। প্রবাসী বাবু-বিবিদের অভ্যর্থনায় মা দুর্গা প্রত্যেক বছরই কয়েকটা দিন কাটিয়ে যান এই সাহেবদের দেশে। তার পর বিষাদের বিজয়ার। তবু মন বলে, ‘আরে, লক্ষ্মী তো আছে!’ সে-ও হল। পর-পরই দীপাবলির রোশনাই। কিন্তু এ বার? বড়দিনের তো ঢের দেরি! অফিসেও চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততা। ও-দিকে হাজার হাজার মাইল দূরে আমার প্রাণের কলকাতা আর চন্দননগর তখনও আলোর জ্যোৎস্নায় হাতছানি দিয়ে ডাকত। কিন্তু যাই কী করে? প্রথম প্রথম খুব মিস করতাম। বিলেতে কি আর জগদ্ধাত্রী আসবেন? বছর চারেক হল সেই সাধও মিটছে।
সৌজন্যে, ‘বিলেতে বাঙালি’। আরে বাবা, বাঙালি থাকবে আর মরসুমের শেষ পুজোর গন্ধ বিলেত কাঁপাবে না, তা হয় নাকি! ইংল্যান্ডের ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রবাসী বাঙালির এই ‘ক্লাব’ ২০১৫ সাল থেকে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করছে লন্ডনে।
এ বার পাঁচে পা। হ্যারোর জ়োরাস্ট্রিয়ান সেন্টারের হলঘরে তাই আয়োজন আরও বিপুল। আজকের রাত ফুরোলেই শনিবার। উইকেন্ড, তবে আর পাঁচটার মতো নয়। কুমোরটুলি থেকে সেই প্রথম বার আনা ১২ ফুটের প্রতিমা আবার সেজে উঠেছে নতুন করে। অফিস আর বাড়ি সামলে একটু একটু করে আমরাই নিজেদের মতো করে সাজিয়েছি। ভোগ রান্না থেকে প্রসাদ বিতরণ— কোনটা কার ভাগে, সেই তালিকাও তৈরি। চন্দননগরের লাইটিং না-থাক, সাহেবি ঝাড়বাতির রোশনাই তো থাকছে। সঙ্গে ঢাকের তালে ধুনুচির নাচ। দেদার আড্ডা, বাঙালি খানাপিনা আর নানাবিধ বুটিকের স্টল থেকে চুটিয়ে কেনাকাটি। সব মিলিয়ে মরসুমের শেষ পুজোর স্বাদ চেটেপুটে নিতে তৈরি আমরা সবাই। পছন্দের আনকোরা শাড়িটা আগেই বার করে রেখেছি আলমারি থেকে।
পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, গ্রেট ব্রিটেন তথা গোটা ইউরোপের মধ্যে এটাই একমাত্র জগদ্ধাত্রী পুজো। কোনও পুজোয় এত বড়
প্রতিমাও আর হয় না কোত্থাও। উদ্যোক্তাদের আশা, শুধু লন্ডন নয়, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ছোট-বড় শহর থেকেই কাল ফের একজোট হবে বাঙালি। এক দিনের উৎসবের আনন্দে মুছে যাবে ধর্ম-বর্ণ-জাতির সব ভেদাভেদও।
তবে ভিতরে-ভিতরে একটা চাপা টেনশনও কাজ করছে। ‘বিলেতের সেরা জুটি’ আর ‘বিলেতের সেরা রাঁধুনি’— জোড়া প্রতিযোগিতাও যে রয়েছে এ বার! মোট কথা, উদ্বেগে আর উত্তেজনায় আজ রাতটা মনে হয় জেগেই কাটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy