সেন্ট্রাল গাজ়ার নুসেরাত ক্যাম্পে হামাসের ডেরা থেকে ২৬ বছর বয়সি নোয়া আরগামানিকে উদ্ধার করল ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ছবি: রয়টার্স।
২৪৫ দিন। তিনি কোথায় আছেন, কী ভাবে আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কি না, কেউ জানত না। গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজ়রায়েলের নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল প্যালেস্টাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস। ৮ মাস পরে সেন্ট্রাল গাজ়ার নুসেরাত ক্যাম্পে হামাসের ডেরা থেকে ২৬ বছর বয়সি নোয়া আরগামানিকে উদ্ধার করল ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ফিরিয়ে দিল তাঁর পরিবারের কাছে।
নোয়াকে শেষ দেখা গিয়েছিল একটি ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিয়ো ফুটেজে। নোয়া ও তাঁর প্রেমিক অ্যাভিনাটাল ওর, দু’জনকেই বন্দি করেছিল হামাস। ভিডিয়োতে দেখা যায়, জোর করে মোটরসাইকেলে বসিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নোয়াকে। বাঁচার জন্য মরিয়া তরুণী প্রাণপণ বাধা দিচ্ছিলেন। চিৎকার করছিলেন, কাঁদছিলেন। লাভ হয়নি। এর পরের ২৪৫ দিন গাজ়ায় বন্দি ছিলেন। শনিবার নুসেরাত ক্যাম্পে অভিযান চালায় আইডিএফ। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে নোয়াকে। তাঁর পাশাপাশি মুক্তি পেয়েছেন আরও তিন বন্দি— আন্দ্রে কোজ়লোভ, অ্যালমোগ মের জান এবং শ্লোমি জ়িভ।
উদ্ধারের পরেই নোয়াকে তেল আভিভের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি রয়েছেন নোয়ার মা লিওরা। তিনি ক্যানসার আক্রান্ত। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। নোয়ার অপহরণের পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। বহু দিন পরে ফের মা-মেয়ের মিলন ঘটল।
বন্দিদের মুক্তির খবরে আজ হাজার হাজার ইজ়রায়েলি সেন্ট্রাল তেল আভিভের ‘হোস্টেজ স্কোয়ার’-এ জড়ো হয়েছিলেন। আনন্দ-উৎসব করেন তাঁরা। বাকি বন্দিদের মুক্তির দাবি জানান। এখনও ১১৬ জন বন্দি রয়েছে গাজ়ায়। তবে সেনাবাহিনীর সন্দেহ, এর মধ্যে ৪১ জন আর বেঁচে নেই।
নোয়াকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রেসিডেন্ট আইজ়্যাক হারজ়গ। নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমরা এক মুহূর্তের জন্যেও আশা ছাড়িনি। আমি জানি না, তুমি বিশ্বাস করবে নাকি, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল তুমি বেঁচে আছ। সেটা সত্যি হয়েছে। আমরা খুব খুশি।’’
সেন্ট্রাল গাজ়ার নুসেরাত ক্যাম্পে গত কাল থেকে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। আজও হামলা অব্যাহত। নিহতের সংখ্যা ২৭৪ ছাড়িয়েছে। জখম কমপক্ষে ৬৯৮। আল-আকশা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ঢুকলে মনে হবে কোনও কসাইখানা।’’ জখম ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। কারও কারও অবস্থা সঙ্কটজনক। মৃতদেহ ও আহত রোগীদের ভারে চিকিৎসকদের কাহিল দশা। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানাচ্ছেন, নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। নুসেরাত ক্যাম্প এখন ইঁট-কাঠ-পাথরের ভগ্নস্তূপ। কংক্রিটের চাঁইয়ের নীচে আরও অনেকে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে সন্দেহ। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ ও জখম কেউ থাকলে, তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে, নুসেরাতে ফের আকাশপথে হামলা চালাতে পারে ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই ইজ়রায়েলের নিন্দায় সরব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পোপ ফ্রান্সিস অবিলম্বে শান্তি-চুক্তির দাবি জানিয়েছেন। ইজ়রায়েল যদিও নিজেদের অবস্থানে অনড়। তাদের কথায়, হামাসের শেষ না-হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy