সারা দিন দাঁড়িয়ে সশস্ত্র যুদ্ধযান। তার সামনে মাটিতে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটছেন এক ইজ়রায়েলি সেনা। বৃহস্পতিবার গাজা়-ইজ়রায়েল সীমান্তের কাছে। ছবি: রয়টার্স।
হয়েও হচ্ছে না। গত কাল কাতারের মধ্যস্থতায় চুক্তিবদ্ধ হয় হামাস ও ইজ়রায়েল। স্থির হয়, সাময়িক ভাবে যুদ্ধ বন্ধ রাখা হবে এবং বন্দি বিনিময় করা হবে। হামাস জানিয়েছিল, আজ সকাল ১০টা থেকে চার দিনের জন্য গাজ়ায় সাময়িক সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হবে। আজই প্রথম দফার বন্দি-বিনিময়ও হবে বলে শোনা যায়। কিন্তু শেষমেশ তা হল না। ইজ়রায়েলের একটি সূত্রের দাবি, হামাস অতিরিক্ত আরও অনেক দাবিদাওয়া জানাচ্ছে। আবার অন্য একটি পক্ষের দাবি, দোহায় পৌঁছেছেন ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া। কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, মোসাদ-প্রধানের অঙ্গুলি হেলনেই থমকে রয়েছে সংঘর্ষ-বিরতি। তবে দিনশেষে কাতার জানিয়েছে, আগামিকাল, অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হবে। বিকেল ৪টে নাগাদ বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। কাল ১৩ জনকে ছাড়বে হামাস।
গাজ়ায় আজও ইজ়রায়েলি হামলা অব্যাহত। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-র দাবি, গত এক দিনে তারা হামাসের ৩০০-রও বেশি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। কোনওটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কোনওটি মাটির নীচে সুড়ঙ্গ, অস্ত্র ভান্ডার কিংবা অস্ত্র তৈরির কারখানা। আকাশপথে হামলা ও স্থল-অভিযান, দু’টিই চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েল। আইডিএফ-কর্তা পিটার লার্নার জানিয়েছেন, চুক্তি চূড়ান্ত হলে, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে নির্দেশ হলে, তখনই যুদ্ধ থামানো হবে। তিনি বলেন, ‘‘হামাস যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, আমরা হামলা চালিয়ে যাব। ...এটা লিখে নিতে পারেন। ওরা একটা নৃশংস সংগঠন, ক্ষমার অযোগ্য।’’ একটি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, শুক্রবারের মধ্যে হয়তো চুক্তিপত্রের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কাতারের ঘোষণায় আশা আরও বেড়েছে।
প্যালেস্টাইনিদের অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যুদ্ধ থামতে পারে শুনেও খুশি হতে পারছেন না গাজ়াবাসী। তাঁদের বক্তব্য, ইজ়রায়েল প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি দেবে বলেছে ঠিক-ই, কিন্তু প্রিয়জনকে সামনে না দেখলে বিশ্বাস নেই। তা ছাড়া, এখন মুক্তি দিলেও পরে আবার গ্রেফতার করতে পারে ইজ়রায়েল। এ ঘটনা তাঁরা আগেও বহুবার দেখেছেন। একটি বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত, দু’পক্ষের মধ্যে যে চুক্তিই হোক না কেন, সেটা কোনও মতেই মসৃণ ভাবে কার্যকর হবে না।
প্যালেস্টাইনিদের চিন্তার আরও কারণ কাছে। ইজ়রায়েলের জেল থেকে যাঁরা ফিরবেন, তাঁরা কোথায় যাবেন! অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপ। গোটা পরিবারই হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কেউ বেঁচে থাকলেও তাঁরা কোথায় আছেন জানা নেই। তা ছাড়া, দিনরাত বোমা পড়ছে। চার দিনের বিরতির পরে যুদ্ধ তো ফের শুরু হবে! জেল থেকে ছাড়া পেলেও বাঁচতে পারবেন কি! ইতিমধ্যেই গাজ়ার যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ৭২০০-র বেশি প্যালেস্টাইনি ইজ়রায়েলের জেলে বন্দি রয়েছেন। এর এক-তৃতীয়াংশ বন্দি হয়েছেন যুদ্ধ চলাকালীন। গত ২৪ ঘণ্টাতেই ৯০ জনকে গ্রেফতার করেছে ইজ়রায়েল। এর মধ্যে গাজ়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের ডিরেক্টর আবু সালমিয়াও রয়েছেন। ‘ইজ়রায়েলি সিকিয়োরিটি অথরিটি’ (আইএসএ)-র দাবি, ‘‘হাসপাতালটি সরাসরি ওঁর পরিচালনায় হামাসের জন্য কাজ করত। হামাসের ঘাঁটি ছিল ওই হাসপাতাল।’’ তাদের আরও অভিযোগ, ‘‘৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হামলার পরে হামাস-জঙ্গিরা আল-শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকে বন্দিদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছিল।’’
আজ ইজ়রায়েল সফরে এসেছেন ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁকে বলেন, ‘‘আশা করছি, বন্দিরা মুক্তি পাবেন। কিন্তু এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ। আগে প্রথম দলটি মুক্তি পাক। এক-এক করে সকলকে ফিরিয়ে আনব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy