Advertisement
০১ জানুয়ারি ২০২৫
International News

তেল, সোনার দাম চোকাতে ভারতের মাথাব্যথা বাড়বে, মাথাচাড়া দিতে পারে আইএস

আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের টানাপড়েন অবশ্য নতুন কিছু নয়।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সংযুক্তা ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৩২
Share: Save:

চার বছর আগেকার কথা। তখনও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬-য় নির্বাচনী প্রচারে ভোটারদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘আজীবন যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার মোহ থেকে আমেরিকাকে বের করে আনবেন। তাঁর লক্ষ্যটা ছিল ইরাক। চার বছর পর ইরানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংকট ঘনীভূত হয়েছে, তাতে ফের আমেরিকার সেই ‘আজীবন যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই জোরালো হল। ঘটনাচক্রে, ইরাকই হল যার ভিত্তিভূমি।

দিনকয়েক আগে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত হলেন ইরানের সেনাকর্তা জেনারেল কাসেম সোলেমানি। তার পর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ল ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটির উপর। যাতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে কেউ নিহত হননি। যদিও তেহরানের পাল্টা দাবি, বহু মার্কিন সেনার প্রাণহানি হয়েছে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হানাদারিতে।

আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের টানাপড়েন অবশ্য নতুন কিছু নয়। সেই টানাপড়েনের বেশির ভাগ সময়েই এখনকার মতো আমেরিকার চক্ষুশূল হয়ে থেকেছে ইরান।

মোসাদেঘেকে গদিচ্যূত করে শুরুটা করেছিল আমেরিকাই

শুরুটা হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর আগে। সেটা ১৯৫৩। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মোসাদেঘের নেতৃত্বাধীন ইরানের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে গদিচ্যূত করেছিল আমেরিকা। সিআইএ/এম-১৬-র আঁটা ফন্দিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। মোসাদেঘের ‘অপরাধ’ ছিল, তাঁর সরকার ইরানের তেল শিল্পের জাতীয়করণের পথে এগিয়েছিল। যা আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী ছিল।

চাই মধ্যপ্রাচ্যের দখল। ইরাকে টহলদার মার্কিন সেনা।

আমেরিকার সঙ্গে সেই তিক্ততার সম্পর্ক তিক্ততর হয়ে ওঠে ১৯৭৯-এ। ইরানি বিপ্লবের সময়। মার্কিন মদতপুষ্ট মহম্মদ রেজা পহ্‌লভির রাজন্যতন্ত্রের উৎপাটনের মাধ্যমে। ওই সময় ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে নিয়েছিলেন। টানা ৪৪৪ দিন বন্দি করে রেখেছিলেন মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের। সেই ইরানি বিপ্লবের হোতা আয়াতোল্লা খোমেনি আমেরিকার নাম দিয়েছিলেন ‘মহা শয়তান’।

ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দামের বন্ধু হয়েছিল আমেরিকা!

তার পর আটের দশকের সেই দীর্ঘমেয়াদি ইরাক-ইরান যুদ্ধ। যাতে প্রকাশ্যেই ইরাককে সামরিক সহায়তা দিয়েছিল আমেরিকা। ইরানের নতুন জমানার অবসান ঘটাতে পেন্টাগন যতটা সম্ভব সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল তদানীন্তন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনকে।

সেটা ২০০২ সাল। ইরানের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ফাঁস করে দিল, গোপনে পরমাণু অস্ত্র বানানোর কর্মসূচি নিয়ে‌ছে তেহরান। কপালে ভাঁজ বাড়ল আমেরিকার। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর দেশগুলি আর রাষ্ট্রপুঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করল আমেরিকা।

কাছে আসা, দূরে হঠা

সেই নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বেরিয়ে আসতে ইরানের সামনে তখন একটাই রাস্তা খোলা ছিল। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। ২০১৫-য় স্বাক্ষরিত হল ‘জেসিপিওএ পরমাণু চুক্তি’। যে চুক্তির শর্ত ছিল, পরমাণু অস্ত্র বানানোর কর্মসূচিতে কাটছাঁট করতে হবে ইরানকে। তাতেও কাজ হবে না। নিষেধাজ্ঞা উঠতে পারে আন্তর্জাতিক পরিদর্শক দলকে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে ঢুকতে দেওয়া হলে।

তবে সেই ‘ছাইচাপা আগুনে’র সম্পর্ক বেশি দিন টিঁকল না। তিন বছরের মধ্যেই ইরানের সঙ্গে ফের ‘ডিভোর্স’ আমেরিকার। ২০১৮-য় ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আরও কড়া হল। শুধু তাই নয়, যারা ইরানের তেল কিনবে বা ইরানের সঙ্গে রাখবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, সেই দেশগুলির বিরুদ্ধেও একই রকমের নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইরানের তেল রফতানির উপরেও জারি হল নিষেধাজ্ঞা। হাতে না মেরে তেহরানকে ভাতে মারার কৌশল নিল ওয়াশিংটন!

মার্কিন নাগরিকদের ৪৪৪ দিন পণবন্দি রেখেছিল ইরান!

কিন্তু তাতেও সম্ভবত দমানো যায়নি ইরানকে। তার কারণ, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার গর্ব করার মতো সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ঐতিহ্য, পরম্পরা রয়েছে।

তেহরানই পেরেছিল। মার্কিন নাগরিকদের ৪৪৪ দিন পণবন্দি রেখে। ইরানি বিপ্লবের সময়।

ইরান ছাড়া আধুনিক বিশ্বে আর কোনও দেশের নাম বলতে পারবেন কি যারা একটানা ৪৪৪ দিন মার্কিন নাগরিকদের নজরবন্দি করে রাখতে পেরেছে? তা-ও আবার কোন সময়ে জানানে? যখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরান নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে চাইছে!

কেন আমেরিকার টার্গেট হয়ে উঠেছিলেন সোলেমানি?

ইরাক যুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব, প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করে। সেই প্রক্রিয়ার কাণ্ডারীদের মধ্যে একেবারে সামনে থাকা নামটি হল, জেনারেল কাসেম সোলেমানি। এই সে দিন যিনি মার্কিন ড্রোন হানায় প্রাণ হারালেন বাগদাদ বিমানবন্দরে। ইরানের সেনাবাহিনী ‘ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কোর কুদ্‌স ফোর্স’-এর সর্বাধিনায়ক হিসাবে সোলেমানিই এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। পশ্চিমি দেশগুলির অভিযোগ, সোলেমানিই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে ইরানের তাঁবে রাখতে মদত দিচ্ছিলেন ‘কাতায়েব হেজবোল্লা’র মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে। অস্ত্রে, অর্থে। সোলেমানির বিরুদ্ধে এও অভিযোগ, তিনিই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করে দীর্ঘ দিন ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করেছিলেন। এটা অনস্বীকার্য, সোলেমানির দৌলতেই সিরিয়া, ইরাক ও লেবানন-সহ মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় অংশে ইরান তার প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেছিল। বাড়িয়ে চলছিল।

একজোট! সোলেমানির মৃত্যু কি কাছে আনবে মধ্যপ্রাচ্যের বিবদমান দেশগুলিকে?

আর ততই আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে তার বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততর হয়ে উঠছিল ইরানের। গত ডিসেম্বরে রকেট হানায় এক মার্কিন কনট্রাকটরের মৃত্যু হলে আমেরিকা তার দায় চাপায় ইরানের মদতপুষ্ট একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের উপর। তার বদলা নিতে ইরাক ও সিরিয়ায় কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ডেরায় বিমান থেকে বোমা ফেলে আমেরিকা। মৃত্যু হয় ২৫ জনের। সেই ঘটনার জেরে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস আক্রান্ত হয়। সেই সময়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, ‘‘এর বড় মূল্য দিতে হবে’’। হতেই পারে, বাগদাদ বিমানবন্দরে এই সে দিনের মার্কিন ড্রোন হানাদারির মাধ্যমে আমেরিকা সেই ‘মূল্য’ই চুকিয়ে দিল!

তবে মনে রাখতে হবে, ইরানে কিন্তু শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যাঁরা শহিদ হতে ভয় পান না। ইমাম হুসেন দিয়ে শুরু। ইরানের ইতিহাস সেই কথাই বলে যে। সোলেমানির মৃত্যুর পর ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটির উপর ক্ষেপণাস্ত্র হানাদারি চালাল ইরান।

ভোটের বছর, ট্রাম্প দায় চাপালেন ওবামার ঘাড়ে!

তা হলে কি এ বার ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? গত ৮ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের আগে পর্যন্ত সেই সন্দেহটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল সর্বত্র। কিন্তু এটাই যে মার্কিন মুলুকে ভোটের বছর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর। তার উপর দিনকয়েক আগেই মার্কিন কংগ্রেসের হাইস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হয়েছে। ফলে, সরাসরি যুদ্ধঘোষণার পথে গেলেন না রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। বরং ভোটের বছরে দায়টা চাপিয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাঁধে। পূর্বতন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাঁধে। বললেন, ‘‘ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ছুড়েছে আমাদের সেনা ও মিত্রবাহিনীর উপর সেগুলি বানানো হয়েছিল ওবামা প্রশাসনের দেওয়া অর্থেই।’’ আসলে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ওবামা প্রশাসন ওই অর্থ দিয়েছিল তদানীন্তন ইরান সরকারকে।

ট্রাম্প সে দিন হোয়াইট হাউসে এও বললেন, ‘‘ওই হানাদারিতে কোনও মার্কিন সেনারই মৃত্যু হয়নি।’’

এগিয়ে, পিছিয়ে। যুদ্ধঘোষণা করলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট, দায় চাপালেন আগের জমানার ঘাড়ে

হয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেরিতে হলেও বুঝেছেন, যুদ্ধঘোষণা বা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় মার্কিন সেনার মৃত্যুর খবর দিলে তা ভোট বৈতরণী পেরতে তাঁকে আদৌ সাহায্য করবে না।

প্রশ্ন ইরানকে নিয়েও...

ইরানের দিকটাও দেখতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা এই সন্দেহও উস্‌কে দিল, তা হলে কি জেনারেল সোলেমানির মৃত্যুর পর মুখরক্ষার খাতিরেই ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হানাদারি চালিয়েছিল?

আবার, ওই ঘটনা পর কিন্তু ইরানের সর্বময় প্রধান আয়াতোল্লা খামেনেই ঘোষণা করেন, ‘‘আমেরিকার মুখে সপাটে চড় কষানো হয়েছে।’’ তা হলে কি আগামী দিনে আমেরিকার বিরুদ্ধে কোনও বড়সড় অভিযানে নামতে চলেছে ইরান?

প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ইরান। পুড়ল আমেরিকা ও ইজরায়েলের পতাকা। সোলেমানির মৃত্যুর পর।

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকাও চাইবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব, প্রতিপত্তি কমাতে। ফলে, কী ঘটতে চলেছে আগামী দিনে তা স্পষ্ট নয় এখনও পর্যন্ত।

তেল, সোনা: নাভিশ্বাস উঠতে পারে ভারতের

ইরানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যে সংকটের জন্ম হয়েছে আর তা উত্তরোত্তর গভীরতর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে ভারত-সহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে। আমেরিকার সঙ্গে ইরানের যুদ্ধটা অনিবার্য ধরে নিয়ে এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে তেলের দাম চড়ে হয়েছিল ৭১.৭৫ ডলার। হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর অবশ্য তা মাত্র ০.৯৭ ডলার নেমেছে। একই কারণে অসম্ভব চড়ে গিয়েছিল সোনার দামও। প্রতি আউন্স সোনার দাম হয়েছিল ১,৫৭০.২২ ডলার (ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম ওজনের সোনার দাম বেড়ে হয়েছিল ৪১ হাজার ৭৩০ টাকা)। গত সাত বছরে সর্বোচ্চ। ফলে, যুদ্ধের আশঙ্কাটা একেবারে উবে যায়নি কিন্তু।

ফলে, আমেরিকার সঙ্গে যদি শেষমেশ যুদ্ধটা বেধেই যায় ইরানের, তা হলে আকাশছোঁয়া তেল ও সোনার দামের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে ভারতের মতো সেই সব দেশের নাভিশ্বাস উঠবে, যাদের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়তে পড়তে অভূতপূর্ব সংকটের গভীর খাদের কিনারায় চলে গিয়েছে।

‘সপাটে চড় আমেরিকার গালে’! ইরানের সর্বময় কর্তা আয়াতোল্লা খামেইনি।

ভারতের অবস্থা আরও করুণ হবে। ইতিমধ্যেই দেশের জিডিপি-র হার নামতে নামতে গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। ভারত প্রয়োজনের ৮০ শতাংশ তেল আনে পারস্য উপসাগর থেকে। গত মে মাসের আগে পর্যন্ত ইরান ছিল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ। দিনে ভারতকে ৪৫ লক্ষ ব্যারেল পরিমাণে তেল আনতে হয় পারস্য উপসাগর-সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে গত বছরের মে মাস থেকে ইরানি তেল আমদানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ভারত। এই পরিস্থিতির আঁচ করে অবশ্য ২০১৭ থেকেই ভারতকে তেল বেচতে শুরু করে আমেরিকা। যার পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। যুদ্ধটা শেষমেশ বাধলে ভারতেক সেই তেল কিনতে হবে বাড়তি দাম চুকিয়ে। তেলের ট্যাঙ্কারগুলির জন্য গুনতে হবে বাড়তি বিমার খরচ। আর তেল, সোনা কিনতে কালঘাম ছুটবে আমার, আপনার মতো সাধারণ মানুষের।

তেল আর সোনার জন্য বাড়তি দাম চোকানো মানেই দেশের বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডারে হাত দেওয়া। তার ফলে, দেশের অর্থনৈতিক সংকট গভীরতর হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হবে। জিডিপি বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখা ভুলতে হবে ভারতকে। বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের আশাকে জিইয়ে রাখতে ভারতকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দেখতে হবে মুদ্রাস্ফীতির উত্তরোত্তর উল্লম্ফন। যার বড় খেসারত দিতে হবে আমজনতাকেই।

সম্ভবত, সে জন্যই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন তেল-সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ওমানের মতো দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে। সেটা কি আগেভাগে ‘বিপদের বন্ধু’ বেছে রাখতেই?

ভারত নয়, পাকিস্তানকেই ‘বন্ধু’ ভাবছে আমেরিকা!

যাঁরা ভাবছেন, শ্যাম আর কূল দু’টিই রাখতে গিয়ে ভারত ইরান সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নিতে পারে, শান্তি-দৌত্যের মাধ্যমে। যদিও আমার মনে হয়, সেই আশার গুড়েও বালি! কারণ, ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে পেন্টাগন। সন্ত্রাসবাদ দমনে পাক অনীহার যুক্তিতে যা ২০১৮-য় বন্ধ করে দিয়েছিল আমেরিকা। এটা ভারতের পক্ষে দুঃসংবাদই বটে।

তা ছাড়াও, পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের কট্টর বিরোধী দেশ সৌদি আরবের সম্পর্ক যথেষ্টই মধুর। সৌদি আমেরিকারও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই মধ্যপ্রাচ্যকে হাতে রাখতে ভারতের চেয়ে পাকিস্তানকেই আমেরিকার বেশি গ্রহণযোগ্য ভাবার কারণ কিন্তু রয়েছে যথেষ্টই।

ইরাকে ফের মাথাচাড়া দেবে ইসলামিক স্টেট?

কট্টর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)’-কে নিকেশ করতেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত ইরানি জেনারেল সোলেমানি। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির বিমান থেকে ফেলা বোমায় ইরাকে আইএসের ঘাঁটি যত না গুঁড়িয়েছে, সন্ত্রাসবাদীদের গোপন ঘাঁটিগুলিতে চোরাগোপ্তা হানা দিয়ে আইএস-এর অনেক বেশি ক্ষতি করেছিলেন জেনারেল সোলেমানি। তাঁর মৃত্যুতে আইএস ফের মাথাচাড়া দিতে পারে ইরাকে।

আত্মরক্ষার কৌশলে? মার্কিন ড্রোন হানার পর তেল উৎপাদন অর্ধেক করেছে ইরান

সোলেমানির মৃত্যুর পর বাগদাদ ও লাগোয়া এলাকাগুলি বধ্যভূমি হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় বিদেশি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ইরাকের সংসদে। যার জেরে ইরাক থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে জার্মানি, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া। এর ফলে, আইএস-এর ফের মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা বাড়বে বই কমবে না বলেই আমার মনে হয়।

লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

ছবি: এএফপি।

ফাইল ছবি।

অন্য বিষয়গুলি:

Prof. Sanjukta Bhattacharya General Quasem Soleimani Middle East US Iran Iraq অধ্যাপক সংযুক্তা ভট্টাচার্য জেনারেল কাসেম সোলেমানি ইরান সমস্যা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy