তেহরানের আমির কবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা।—ছবি এএফপি।
ইরানে সরকারের বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ বাড়ছে। সেই বিক্ষোভ-কর্মসূচিতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।
ইউক্রেনের যাত্রিবাহী বিমানে তাদের সেনাবাহিনীই যে ভুল করে হামলা চালিয়েছে, দু’দিন আগে তা স্বীকার করে নিয়েছে ইরান সরকার। যাঁরা ওই ভুল করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। গত বুধবার বিমান ভেঙে পড়ার পরে ক্রমাগত সেটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দাবি করা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ জানাতে গত দু’দিন পথে নেমেছেন তাঁরা।
সংবাদ সংস্থা এ পি জানিয়েছে, গত কাল রাতে তেহরানের আজাদি স্কোয়ারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কয়েকশো মানুষ। অভিযোগ, তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। অনেকেই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরেও বিক্ষোভস্থল থেকে মানুষ সরে না-যাওয়ায় গুলি চালায় পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া দু’টি ভিডিয়োতে পুলিশকে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি সংবাদ সংস্থার।
একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের মাঝে হঠাৎই এসে পড়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল। এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা আজাদি স্কোয়ার। ওরা মানুষকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। একনায়কের মৃত্যু হোক।’’ অন্যটিতে দেখা গিয়েছে, মাটিতে চাপ চাপ রক্ত। কয়েক জন যুবক এক মহিলাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে। এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘প্রচুর রক্ত বার হচ্ছে। এখনই ব্যান্ডেজ লাগবে।’’
পুলিশ গুলি চালালেও তাঁরা প্রতিবাদের পথ থেকে সরবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিক্ষোভকারীরা। জ়াহরা রাজ়েঘি নামে এক বিক্ষোভকারী বললেন, ‘‘যখনই বিমান ভেঙে পড়ার কথা ভবাছি, আমার হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাচ্ছে। মৃতদের পরিবারের কথা ভেবে লজ্জায় ডুবে যাচ্ছি। তিন দিন ধরে ধোঁয়াশায় রেখেছিল সরকার।’’ আর এক বিক্ষোভকারী সইদ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সত্যটা চাপা দিয়েছিল সরকারি সংবাদ সংস্থা। পরে অবশ্য সব কিছুই সামনে এসেছে। ওদের সত্যিটা বলতেই হয়েছে।’’
সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান সরকারকে তাঁর টুইট-বার্তা, ‘বিক্ষোভকারীদের হত্যা করবেন না’। ইংরেজির পরে একই বার্তা তিনি ফার্সিতেও লিখেছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘গোটা দেশ দেখছে। সব চেয়ে বড় কথা আমেরিকা সব দেখছে’।
কাল রাতে গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি প্রশাসন। তাই কোনও বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছেন কি না, স্পষ্ট নয়। তবে ইরান সরকারের তরফে আজ দাবি করা হয়েছে, বিমান ধ্বংসের ঘটনায় তারা কোনও কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে না। সরকারের যে শীর্ষ আধিকারিকেরা বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের শাস্তি হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।
একই সঙ্গে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকেয়াররে গ্রেফতারি নিয়েও মুখ খুলেছে তেহরান। ইরানের উপবিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির দাবি, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত যে গ্রেফতার হয়েছেন, তা প্রথমে বোঝা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘এক বিদেশি নাগরিক বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন বলে প্রথমে জানা যায়।
পরে রব যখন ফোনে কথা বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আমি জানার ১৫ মিনিটের মধ্যেই রাষ্ট্রদূতকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’’ পরে অবশ্য অবৈধ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইরানের বিদেশ মন্ত্রক। চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনের সদস্যেরা রবের দফতরের সামনে গিয়ে আজ বিক্ষোভও দেখান। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘ইংল্যান্ডের মৃত্যু’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy