Advertisement
E-Paper

শোভন নন, ‘প্রভাবশালী’ রত্না! বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় দলেরই বিধায়কের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ

রত্না বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক। অন্য দিকে, কল্যাণ তৃণমূলেরই প্রবীণ সাংসদ। তাই শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়াল শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষিতেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

Ratna Chatterjee influential, Kalyan Banerjee argues for Shovan Chatterjee in divorce case

(বাঁ দিক থেকে) শোভন চট্টোপাধ্যায়, রত্না চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৩
Share
Save

বিবাহবিচ্ছেদ মামলাতেও ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বের কথা উঠল আদালতে। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বিধায়ক স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় সওয়াল করতে দলের বিধায়কের বিরুদ্ধেই প্রভাবশালী তত্ত্বের কথা বললেন তৃণমূলেরই সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের এজলাসে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে শোভন-রত্নার বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা। শুনানি শেষ হয়েছে। পরের সপ্তাহে রায় ঘোষণা হতে পারে।

কল্যাণ যে শোভনের হয়ে বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় সওয়াল করছেন, গত বৃহস্পতিবার তা প্রথম লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। শুক্রবার শুনানি চলাকালীন রত্নার আইনজীবী রঞ্জন বচাওয়াত বলেন, এই মামলায় যে হেতু দু’জনেই প্রভাবশালী, তাই সময় নিয়ে শুনানি হোক। শুনেই রুখে দাঁড়ান কল্যাণ। বিচারপতির উদ্দেশে কল্যাণ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল (শোভন) প্রভাবশালী নন। রত্না চট্টোপাধ্যায় প্রভাবশালী। উনি বিধায়ক। উনি সশস্ত্র নিরাপত্তা নিয়ে ঘোরেন। আলিপুর কোর্টে গেলে সঙ্গে বেহালার বাহিনী নিয়ে যান।’’

২০১৭ সালে আলিপুর আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন শোভন। কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের পক্ষে যাঁরা সাক্ষী, তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রত্নার পক্ষেও চার জন সাক্ষী দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রত্না নিম্ন আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে আরও কিছু সাক্ষী রয়েছেন। তাঁদেরও সাক্ষ্য নেওয়া হোক। কিন্তু আলিপুর কোর্ট তা খারিজ করে শুনানি শুরুর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই হাই কোর্টে মামলা করেন বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না।

শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়াল করা তৃণমূলের অভ্যন্তরে নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, শোভন শুধু প্রাক্তন মেয়র নন, তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শোভন এখন থাকেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অন্য দিকে, রত্না শোভনেরই ছেড়ে-যাওয়া বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। আবার কল্যাণ তৃণমূলেরই প্রথম সারির সাংসদ। তাই শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়াল শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষিতেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই একান্ত আলোচনায় বলছেন, কল্যাণ যখন শোভনের হয়ে হাই কোর্টে লড়তে নেমেছেন, তখন ‘অনুমোদন’ বা ‘অনুমতি’ ছাড়া সে কাজ করেননি।

কল্যাণ তাঁর হয়ে মামলা লড়ায় শোভনও ‘অভিভূত’। তাঁর কথায়, ‘‘এই সওয়াল-জবাবে আমার আট বছরের ক্ষতে প্রলেপ লাগল। এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে কখনও নিজেকে দুর্বল ভাবিনি। কিন্তু এত দিন রত্না এবং তাঁর পরিবার আইনি লড়াইকে ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কলুষিত করছিল। ক্ষমতার আস্ফালনে আইনকে চাপা দিতে চাইছিল।’’ শোভন বলছেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়দীপ কর যে ভাবে আমার সমস্ত বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তাতে আমি মক্কেল হিসেবে কৃতজ্ঞ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। সেই কারণেই হয়তো তাঁর সওয়ালে আইনি বক্তব্যের সঙ্গে আবেগের সংমিশ্রণও ছিল। কী ভাবে আমার কাছ থেকে সম্মানজনক জীবনযাপন করার অধিকারটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল, উনি সেটা আদালতের সামনে তুলে ধরেছেন।’’

তৃণমূল ছাড়ার পরে বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন। যদিও গত বিধানসভা ভোটের অব্যবহিত পরেই পদ্মশিবিরের সঙ্গে সখ্য ঘুচে যায় শোভনের। তার পর থেকে তিনি রাজনীতি ছাড়াই আছেন। তবে মমতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখনও অটুট। প্রত্যেক ভাইফোঁটায় ‘দিদি’ মমতার হাতে শোভনের ভাইফোঁটাও বাঁধা। এর মধ্যে কয়েক বার শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনাও তৈরি হয়েছে। বিশেষত, যখন তিনি বৈশাখীকে নিয়ে নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘প্রত্যাবর্তন’ বাস্তবায়িত হয়নি। সেই সূত্রেই শোভনের হয়ে কল্যাণের মামলা লড়া নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছে।

শুক্রবারের শুনানিতে রত্নার বিরুদ্ধে মামলায় বিলম্বের অভিযোগও তোলেন কল্যাণ। উল্লেখ্য, রত্নার বাবা দুলাল দাস মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান এবং সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক। শুনানির মধ্যে আসে তাঁর প্রসঙ্গও। তিনি কেন এখনও কোর্টে এসে সাক্ষ্য দেননি, সেই প্রশ্নে রত্নার আইনজীবী বলেন, দুলালের বয়স ৭০ বছরের বেশি। তাই কিছু অপারগতা রয়েছে। কল্যাণ পাল্টা বলেন, ‘‘চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক হিসাবে তিনি সব কাজ করতে পারছেন! আর কোর্টে আসতে পারছেন না?’’ রত্নার আইনজীবী কল্যাণের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার মতো ওঁর (দুলালের) তারুণ্য নেই।’’ জবাবে কল্যাণের টিপ্পনী, ‘‘উনি আমার চেয়ে বেশি কালারফুল।’’ সে দিক থেকে দেখতে গেলে তৃণমূলের কল্যাণ তৃণমূলেরই দুই বিধায়ককে আদালতে নাস্তানাবুদ করতে চেয়েছেন। এক দিকে রত্না। অন্য দিকে দুলাল। গোটা ঘটনাকে অনেকেই ‘ভবিষ্যতের সূচক’ হিসাবে অভিহিত করছেন।

Shovan Chatterjee Ratna Chatterjee Divorce Case Kalyan Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}