Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫
Russia Ukraine War

Russia-Ukraine war: আরও বিধ্বংসী রাশিয়া

পরশু ইউক্রেন-বেলারুস সীমান্তে শান্তি বৈঠক বসেছিল। তাতে কোনও সমাধান মেলেনি। শুধু প্রতিশ্রুতি মিলেছিল ফের বৈঠকে বসার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৬:০১
Share: Save:

দু’পক্ষই বলে চলেছে, যুদ্ধ থামাতে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। সমাধানসূত্রেরও কোনও আশা নেই। আজ নতুন করে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। কৃষ্ণসাগরের তীরে মারিউপোল বন্দরে লাগাতার গোলা ছুড়ছে তারা। খেরসন এলাকাকে প্রায় ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। জ্বলছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ। রাজধানী কিভের বাইরে জড়ো হয়েছে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনা কনভয়। হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ধর্মস্থান, জনবসতি, কোনও কিছুকেই রেয়াত করছে না রুশরা। থেকে-থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ, আকাশ ফুঁড়ে ওঠা অগ্নিপিণ্ড, পোড়া গন্ধ ও কালো ধোঁয়ায় দমবন্ধ করা যুদ্ধ-পরিস্থিতি।

পরশু ইউক্রেন-বেলারুস সীমান্তে শান্তি বৈঠক বসেছিল। তাতে কোনও সমাধান মেলেনি। শুধু প্রতিশ্রুতি মিলেছিল ফের বৈঠকে বসার। এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, কবে-কখন-কোথায় ফের আলোচনায় বসবে দুই দেশ। বা তাতে আদৌ কোনও দিশা মিলবে কি না। বরং ক্রমেই তৈরি হচ্ছে নতুন জল্পনা। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচকে বেলারুসের মিনস্কে নিয়ে গিয়েছে রাশিয়া। তাঁকে ইউক্রেনের নতুন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করতে পারে মস্কো। আজ যুদ্ধের সপ্তম দিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি একটি ভিডিয়ো-বার্তায় দাবি করেছেন, তাঁদের দেশের ইতিহাস, মানুষ, তদুপরি অস্তিত্বকেই শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

গত দু’দিনে ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বহু দেশ ইউক্রেনের হয়ে সরব হতে কিছুটা মনের জোর পেয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। আজ ভিডিয়ো-বার্তায় দেখা গেল, মুখে গত কয়েক দিনের না-কাটা দাড়ি, চোখের নীচে কালি, একরাশ ক্লান্তি ও ম্লান হাসি। হতাশা প্রকাশ করে তিনি জানান, পশ্চিম আমাদের যে সাহায্য করছে, তা কোনও ভাবেই যথেষ্ট নয়। বিশ্বের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আর নিরপেক্ষ থাকার সময় নেই।’’

জ়েলেনস্কি দাবি করেছিলেন, দ্বিতীয় বৈঠকে বসার আগে যুদ্ধ বন্ধ করুক রাশিয়া। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করেন, ‘‘বরাবর ইতিহাস থেকে আমরা শিখে এসেছি— কোনও স্বৈরাচারী শাসক যদি তাঁদের হামলার দাম না দেন, তা হলে একটা দেশেই আগ্রাসন থেমে থাকে না।’’ একাধিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে রাশিয়ার উপরে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বহু দেশ। চিন, বেলারুস, উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশ ছাড়া তাদের সমর্থনে আর কেউ নেই। প্রায় একঘরে রাশিয়া। এমনকি ঘরেও চাপে পুতিন। কিন্তু তবুও তিনি অনড়।

রুশ প্রেসিডেন্টের অঙ্গুলি হেলনেই আজ নতুন করে হামলার গতিবেগ বেড়েছে। কিভের বাইরে জড়ো হয়েছে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনা কনভয়। তারা ধীরে ধীরে রাজধানীর দিকে এগিয়ে চলেছে। অনেকেরই আশঙ্কা, ইউক্রনের বর্তমান সরকারকে ফেলে দিয়ে নিজের পছন্দের শাসককে ‘পুতুল’ হিসেবে গদিতে বসাবে ক্রেমলিন। উত্তরের শহর চেরনিহিভে আজ দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের হাসপাতালটি। ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের মূল ভবনের একাংশ। মৃতের সংখ্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এর বেশি কিছু জানানো হয়নি। প্রশাসনের প্রকাশ করা ভিডিয়ো ও ছবিতে দেখা গিয়েছে, একটি পাঁচ তলা পুলিশ-ভবনেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে রুশ সেনা। বোমা পড়ে বাড়িটির ছাদে। উপরের তলায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে বাড়িটির ভাঙা অংশ। বন্দর-শহর মারিউপোলে লাগাতার গোলা ফেলছে রুশরা। শহরের মেয়র বেডিম বয়চেঙ্কো বলেন, ‘‘হামলা থামছেই না। রাস্তাঘাটে, বাড়িতে অনেকে জখম অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁদের যে হাসপাতালে নিয়ে যাব, তার উপায় নেই।’’ বয়চেঙ্কোর কথায়, ‘‘গণহত্যা চালাচ্ছে রাশিয়া।’’

সাত দিনে ইউক্রেনে কত প্রাণহানি ঘটেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, ৮ লক্ষ ৭৪ হাজার বাসিন্দা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। শীঘ্রই এই সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়াবে। অগুণতি মানুষ মাটির নীচে লুকিয়ে রয়েছেন। ইউক্রেন বা রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কত জন নিহত হয়েছেন, কোনও দেশই তা ঘোষণা করেনি। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, ইউক্রেনে ১৩৬ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেই সংখ্যা গত তিন-চার দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। বাস্তবে মৃতের সংখ্যা বহু গুণ বেশি। ইউক্রেন সরকার দাবি করেছে, ২ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ইউক্রেনের বিখ্যাত বাবি ইয়ার হলোকস্ট মেমোরিয়ালে হামলা করা হয়েছে আজ। ক্ষতিগ্রস্ত সৌধের একাংশ। মেমোরিয়ালের দায়িত্ব থাকা এক কর্মী জানান, ১৯৪১ সালে দু’দিনে ৩৩ হাজারেরও বেশি ইহুদিকে হত্যা করেছিল নাৎসিরা। মেমোরিয়ালটি ওই ইহুদিদেরই কবরস্থান।

যুদ্ধ ঘোষণার সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, ইউক্রেনে নব্য-নাৎসিদের অত্যাচার বাড়ছে। এ দেশকে ‘নাৎসিদের’ হাত থেকে বাঁচাতে চান তিনি। বাবি ইয়ারে হামলার পরে সেই ‘নাৎসি অত্যাচারের’ কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেনের এ ধরনের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানগুলিকে আরও বেশি করে নিশানা করা হতে পারে। যেমন, সেন্ট সোফিয়া ক্যাথিড্রাল। ‘হাসিডিক ইহুদি’ গোষ্ঠীর তীর্থক্ষেত্র বলে পরিচিত উমান শহরে ইতিমধ্যেই হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী।

জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের ইতিহাস জানে না। ওদের কাছে শুধু নির্দেশ রয়েছে, আমাদের ইতিহাসকে, আমাদের দেশকে, আমাদের সবাইকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে হবে।’’ জ়েলেনস্কি নিজে ইহুদি। তাঁর পূর্বসুরিদের হত্যা করা হয়েছিল হিটলারের নাৎসি ক্যাম্পে। সে প্রসঙ্গ তুলে জ়েলেনস্কি আরও বলেন, ‘‘বাবি ইয়ারে আমরা আবার মরব। যদিও এই পৃথিবী বারবার প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না, কী ঘটছে? গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিদের বলছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ সময়, চুপ করে থাকবেন না। এই চুপ করে থাকা দিয়েই নাৎসিবাদ জন্ম নিয়েছিল। এত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, প্রতিবাদ করুন। এত ইউক্রেনীয়কে হত্যা করা হচ্ছে, চিৎকার করুন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy