ভারত-চিন সীমান্তের সমস্যা মেটাতে আগ্রহী এবং প্রস্তুত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।—ছবি পিটিআই।
হিমালয় আর পামিরের মাঝে তৈরি হওয়া উত্তেজনার আঁচ পৌঁছে গেল প্রশান্ত মহাসাগরের ও পারে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে লাদাখে। দু’পক্ষই সৈন্য সংখ্যা দ্রুত বাড়াচ্ছে সঙ্ঘাতের ভরকেন্দ্রে। সে দিকে যে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বই, বুধবার তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্তায়। ভারত-চিন সীমান্তে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা মেটাতে আমেরিকা আগ্রহী এবং প্রস্তুত— জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভারত-চিন সীমান্ত হিসেবে যা গণ্য হয়, লাদাখে সেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) বরাবর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে সম্প্রতি। চলতি মাসেই প্রথমে লাদাখে এবং পরে উত্তর সিকিমের নাকু লা অঞ্চলে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল ভারত ও চিনের বাহিনী। তার পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি বরাবর চিন বিপুল সৈন্য সমাবেশ শুরু করার পরে। চিন বাহিনী বাড়াচ্ছে দেখে ভারতও পাল্টা সেনা সমাবেশ শুরু করেছে গালওয়ান উপত্যকায়। তার মাঝেই সামনে এসেছে উপগ্রহ চিত্র, যাতে দেখা গিয়েছে যে, তিব্বতের এক বিমানঘাঁটিতে দ্রুত পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে চিন। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর এলএসিতে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবারই সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্তাদের ডেকে বৈঠক করেন। চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-ও নিজের বাহিনীকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দেন।
পরিস্থিতি যে যথেষ্ট গুরুতর, তা বুঝতে আন্তর্জাতিক মহলের অসুবিধা হচ্ছে না। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তি আমেরিকাও মধ্যস্থতায় আসতে চাইছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ দিন টুইট করেছেন ভারত-চিন সীমান্তের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা ভারত ও চিন উভয়কেই জানিয়েছি, তাদের সীমান্তে এখন যে সমস্যা চলছে, তার মধ্যস্থতা ও মিমাংসা করতে আমেরিকা প্রস্তুত, ইচ্ছুক এবং সক্ষম।’’
আরও পড়়ুন: উচ্চস্তরীয় বৈঠকে জেনারেল নরবণে, লাদাখে বড় সৈন্য সমাবেশ ভারতের
ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্তের কিছু এলাকা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে ১৯৬২-র যুদ্ধ বা ১৯৬৭-র গোলাগুলি বিনিময়ের পর থেকে ভারত-চিন সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োগ প্রায় হয়নি বললেই চলে। ২০১৭ সাল থেকে অবশ্য পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। সে বছর ডোকলামে টানা ৭৩ দিন দু’দেশের বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। পরে কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে বা সিকিম এবং লাদাখের নানা অংশে এলএসি লঙ্ঘনের চেষ্টা করে চিন উত্তাপ বাড়িয়েছে বার বার। ফলে ডোকলামের ঘটনার বছর তিনেকের মধ্যেই আবার বড়সড় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারত-চিন সীমান্তে। এই উত্তেজনা এতটাই উদ্বেগের যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিতে শুরু করেছেন।
আরও পড়়ুন: যুদ্ধ বাধলে কতটা তৈরি ভারত? এক নজরে দেখে নিন দেশের স্থল-জল-অন্তরীক্ষের অস্ত্র সম্ভার
মধ্যস্থতার প্রস্তাব অবশ্য ট্রাম্পের তরফ থেকে এই প্রথম নয়। কাশ্মীর ইস্যু নিয়েও একাধিক বার মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে আমেরিকা। দিল্লি প্রতি বারই জানিয়েছে, কাশ্মীরের বিষয়ে ভারত কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না। ডোকলামে যখন চিনের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত, তখনও কারও মধ্যস্থতার অপেক্ষায় ভারত ছিল না। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ বারের টুইট প্রসঙ্গে নয়াদিল্লি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy