Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

ভারতীয় স্ট্রেনের দাপট বাড়ছে ব্রিটেনে, আতঙ্ক

মোটের উপর দেশ জুড়ে থাবা বসালেও বর্তমানে ইংল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চল এবং লন্ডন শহরেই ভারতীয় স্ট্রেনের সংক্রমণের বহর সবচেয়ে বেশি।

— ছবি সংগৃহীত

— ছবি সংগৃহীত

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৫:৩৩
Share: Save:

ব্রিটেনে প্রকোপ বাড়াচ্ছে ‘ভারতীয় স্ট্রেন’। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক স্ট্রেনগুলির মধ্যে অন্যতম এই ‘বি.১.৬১৭.২’ এতটাই দ্রুত ছড়াচ্ছে সে দেশে যে কেন্ট, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেনের পর এটিকেও তাড়াতাড়ি ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর তালিকায় নথিভুক্ত করার উপদেশ দিচ্ছেন ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মোটের উপর দেশ জুড়ে থাবা বসালেও বর্তমানে ইংল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চল এবং লন্ডন শহরেই ভারতীয় স্ট্রেনের সংক্রমণের বহর সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যেই কমপক্ষে ৫০০ জনের শরীরে এর সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় স্ট্রেনে স্ট্রেনে সংক্রমিতের সংখ্যাটি ছিল ২০২। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমিতদের চিহ্নিত করতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা এবং ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সঙ্গে ভারত থেকে কাউকে ব্রিটেনে আসতে দেওয়া নিয়ে কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞদের মতে, সে দেশে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার জন্য দায়ী ছিল ‘কেন্ট ভ্যারিয়্যান্ট’। যার চেয়েও বেশি সংক্রামক ভারতীয় স্ট্রেন। প্রতিবেশী দেশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডেও ভারতীয় স্ট্রেনে সংক্রমিত সাত জনের হদিস মিলেছে সম্প্রতি।

অন্য দিকে, দু’দিন আগেই ব্রিটেনে জি-৭ বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া ভারতীয় দলের দুই সদস্য করোনা আক্রান্ত হন। যার জেরে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ গোটা ভারতীয় প্রতিনিধি দলকেই নিভৃতবাসে যেতে হয়। এ দিকে গতকাল বিদেশ মন্ত্রকের টুইট করা একটি ছবিতে দেখা যায়, ব্রিটিশ বিদেশ সচিব ডমিনিক রাবের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মাস্ক ছাড়াই যোগ দিয়েছেন জয়শঙ্কর! আরও এক আধিকারিকের মুখেও নেই মাস্ক। যা ঘিরে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। শুরু হয়েছে বিতর্ক।

অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার প্রতিষেধক নেওয়ার পর ব্রিটেনে ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সি কমপক্ষে ২৪২ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার খবর মেলার পর এই বয়সসীমার টিকাকরণের ক্ষেত্রে এ বার নয়া সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটেনের ‘জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনাইজ়েশন অ্যান্ড ইমিউনাইজ়েশন’ (জেসিভিআই)। সম্ভব হলে এই বয়সিদের অ্যাস্ট্রেজ়েনেকার পরিবর্তে ফাইজ়ার আর বায়োএনটেক তৈরি টিকা কিংবা মর্ডার্নার প্রতিষেধকের ডোজ় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংগঠনের তরফে জারি করা এক নির্দেশিকায়।

জেসিভিআই-এর বিবৃতি অনুযায়ী, যাঁদের শরীরে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া গিয়েছে ঘটনাচক্রে তাঁদের সকলের বয়সই ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তবে যাঁদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাঁদের প্লেটলেট সংখ্যাও কম বলে জানানো হয়। ফলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন এখনই তোলা যায় না বলে জানিয়েছে জেসিভিআই। কারণ, লক্ষাধিক মানুষ এই টিকা নিয়েছেন এবং সুস্থ আছেন। যদিও সাবধানতা হিসেবে শুধু ৩০-৩৯ বছর বয়সিদের মর্ডার্না বা ফাইজ়ারের টিকাই দিতে বলা হয়েছে (যদি সংশ্লিষ্ট টিকাকরণকেন্দ্রটির কাছে সেগুলির জোগান থাকে)। যদিও প্রথম ডোজ় অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার নিয়ে থাকলে বয়স নির্বিশেষে দ্বিতীয়টিও সেটিরই নিতে হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে ।

অতিমারি পরিস্থিতিতে আমেরিকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ফাইজ়ার এবং বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনটিকে। তবে শুক্রবার থেকে ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)-এর কাছ থেকে পূর্ণ অনুমোদনের আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করে দিল এই টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য জমা দেবে তারা। সংস্থার তরফে ‘প্রায়োরিটি রিভিউ’-এর দাবি জানানো হয়েছে। ফলে নিয়ম মতো দশ মাসের বদলে আগামী ছ’মাসের মধ্যেই পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে এফডিএ-কে। অন্য দিকে শুক্রবারই রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন ‘একে-৪৭-এর মতো মারণ ক্ষমতা রাখে’ বলে দাবি করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুতিন। তবে এই মন্তব্য তাঁর নয়, এক ইউরোপীয় স্বাস্থ্যকর্তার বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্কুল থেকে রেস্তরাঁ করোনা পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে বন্ধ সবই। শত্রু মোকাবিলার বদলে সেনাবাহিনীকে হাত লাগাতে হয়েছে কোভিড মোকাবিলায়। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাকিস্তানে ভিড়ের কমতি নেই মসজিদে মসজিদে। যা চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের। কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, ইদের প্রাক্কালে সরকার কড়া হাতে নিয়ম বলবৎ করতে গেলে হিংসা ছড়াতে পারে দেশ জুড়ে। কারণ ইতিমধ্যেই একাধিক ধর্মীয় সংগঠনের কাছে কোভিড পরিস্থিতিতে ধর্মীয় জমায়েত নিয়ন্ত্রণে রাখার আর্জি জানিয়েও তেমন সাড়া মেলেনি বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

এ দিকে পারস্পরিক দূরত্ব এবং ব্যাপক হারে টিকাকরণ কর্মসূচির দৌলতে জার্মানিতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শেষের পথে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার নিরিখে এই সপ্তাহান্তেই সুস্থ এবং টিকাকরণ সম্পূর্ন করা নাগরিকদের ‘স্বাধীনতা ফেরাতে’ নয়া আইন আনতে চলেছে দেশের সরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Great Britain coronavirus Coronavirus Indian Strain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE