Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেয়েছে দেশের ভাবমূর্তি, বৈষম্যমূলক আইন, বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জও

নরেন্দ্র মোদী সরকারের পর পর কিছু পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতির জগতের লোকজন।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৫
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের পর পর কিছু পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতির জগতের লোকজন। অথচ এই মোদী জমানার প্রথম দফায় ছবিটা এমন ছিল না। আন্তর্জাতিক নানা মঞ্চে গুরুত্ব পাচ্ছিল ভারত। পশ্চিমের দেশগুলি ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবেই মান্যতা দিচ্ছিল। চিনের আগ্রাসী মনোভাব রুখতে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিকে গুরুত্ব দিচ্ছিল আমেরিকাও।

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির পরেও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান, তুরস্কের মতো হাতে গোনা কয়েকটি দেশই শুধু বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছিল প্রকাশ্যে। ভারত তার পদক্ষেপরে তাৎপর্য বিশ্বের দেশগুলির কাছে নিজে থেকেই ব্যাখ্যা করার পরে আরব দুনিয়া, আমেরিকা বা রাশিয়ার কাছ থেকে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসেনি। যে ঘটনা যারপরনাই হতাশ করেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। কিন্তু ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি, সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপরে প্রশাসনিক কড়াকড়ি, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে রাখা ও হালে নাগরিকত্ব আইন স‌ংশোধনকে কেন্দ্র করে দেশজোড়া বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ছবিটা ম্লান হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞেরা। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি এর পর ভারতে বিনিয়োগ করার আগে দু’বার ভাববে— এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা

কূটনৈতিক ভাবে গত কয়েক দিনে পর পর ধাক্কা খেয়েছে সাউথ ব্লক। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার আসার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তিস্তার মতো বিষয়ে মতপার্থক্যও চিড় ধরাতে পারেনি সুসম্পর্কে। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পরে বাংলাদেশের দু’জন শীর্ষ মন্ত্রী ভারত সফর বাতিল করেছেন। হাসিনা জমানায় যা কখনও হয়নি। প্রায় একই সঙ্গে ভারত সফর বাতিল করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। গুয়াহাটিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্রে রেখে দু’দেশের শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বিতর্কিত আইনকে ঘিরে সেখানে এখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। আবের সফরে বাতিলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে জাপানের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টাই আপাতত জলে গিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতের অ্যাক্ট-ইস্ট নীতির প্রশ্নে এই ঘটনা মোটেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না।

শুধু সফর বাতিল বা পিছিয়ে যাওয়াই নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সচিবালয় এক বিবৃতিতে কড়া সমালোচনা করেছে মোদী সরকারের চালু করা সংশোধিত নাগরিকত্ব

আইনের। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান— এই তিন দেশ থেকে শুধু অ-মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্য, এই আইন মৌলিক ভাবে বৈষম্যমূলক এবং বিশ্বের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

এখানেই শেষ নয়। মার্কিন কংগ্রেসের দু’টি প্যানেল আলাদা ভাবে সমালোচনায় মুখর হয়েছে মোদীর ওই নয়া আইন নিয়ে। তাদের বক্তব্য, এই আইন গণতন্ত্রের মূল ভিতকেই দুর্বল করে দিল। এর পর গত কাল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের উপর পুলিশি হামলার ঘটনা, গোটা বিষয়টিতে ঘৃতাহুতি দিল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। একটি আইন ভবিষ্যতে দেশের ভাবমূর্তির আর কতটা ক্ষতি করে, সে দিকে উদ্বিগ্ন নজর রাখছেন কূটনীতিকেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy