গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিশ্বে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর তালিকায় এক নম্বরে উঠে এল ভারত। আইএস-এর আঁতুড়ঘর সিরিয়া, যুদ্ধবিধ্বস্থ আফগানিস্তানের মেয়েরাও ‘ভাল আছেন’ ভারতের তুলনায়। নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, দুর্ভিক্ষপীড়িত সোমালিয়া— প্রতিটি দেশই এখন ভারতের থেকে তুলনামূলকভাবে ভাল জায়গায়। থমসন রয়টার্সের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এল এই তথ্য।
সাত বছর আগে প্রথম এই সমীক্ষা করেছিল থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। সেই তালিকায় ভারত ছিল চার নম্বরে। এক নম্বরে ছিল আফগানিস্তান। কিন্তু শেষ সাত বছরে আরও খারাপ হয়েছে ভারতের অবস্থা।
এই মুহূর্তে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপদের দেশের তালিকায় ভারতের পরেই আছে আফগানিস্তান। পাকিস্তান আগে ছিল তিন নম্বরে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পাকিস্তান ছয় নম্বরে। তালিকায় দশটি দেশের নটিই এশিয়া বা আফ্রিকার। এর বাইরের একমাত্র দেশ আমেরিকা। আব্রাহাম লিঙ্কনের দেশ এখন দশ নম্বরে।
সারা দুনিয়ায় ৫৫০ জন বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করেছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। মোট ছটি বিষয়কে সূচক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্য, লিঙ্গবৈষম্য, যৌন নিগ্রহ, অন্যান্য নিগ্রহ, নারীপাচার, নারী নির্যাতনকারী সামাজিক কুপ্রথা— এই ছটি বিষয়ের ভিত্তিতেই সমীক্ষাটি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- শরীর দিলে লোন পাইয়ে দেবেন, অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার
আরও পড়ুন- শুল্কে সুর নরম, তৈরি বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে
কুপ্রথা, যৌন নিগ্রহ ও নারীপাচারে এক নম্বরে ভারত। বাকি সূচকগুলোতে কোথাও দুই, কোথাও তিনে। যদিও অনেকের মতে, এই সমীক্ষা ভারতের ক্ষেত্রে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তাঁরা সামনে আনছেন ২০১৭ সালে ন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষাকে। যে সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, ৭০ শতাংশ যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রেই অভিযোগ জানান না মহিলারা। আসলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর।
যদিও মহিলাদের ওপর অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে, এমনটা মানতে নারাজ জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তাঁর দাবি, এখন অনেক বেশি সংখ্যক মেয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করেন। অপরাধের সংখ্যা আসলে সে ভাবে বাড়েনি— এমনটাই দাবি রেখার। রয়টার্স জানাচ্ছে, সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকও।
রাজ্যে নারী অধিকারের সক্রিয় কর্মী ও শিক্ষাবিদ শাশ্বতী ঘোষ অবশ্য মনে করেন না, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের থেকেও খারাপ আছেন ভারতের মহিলারা। থমসন রয়টার্সের বিশেষজ্ঞরা কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই মতামত দিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কতটা নথিভুক্ত হয়, এই দুটি বিষয় নিয়েই সন্দিহান তিনি। তবে সমীক্ষাটিকে একেবারে উড়িয়ে দিতে নারাজ সমাজতাত্ত্বিক প্রশান্ত রায়। তাঁর বক্তব্য, আমাদের আশপাশে অনেক ঘটনাই ঘটে, যা সাধারণত নজরে আসে না। ফলে অনেক সময়ই সমীক্ষার ফল চমকে ওঠার মতো হয়। তবে সমীক্ষাটিতে বিভিন্ন সূচক কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy