গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।
সারা বিশ্বের কোথাও না কোথাও, কোনও না কোনও সময়ে সূর্য ঠিকই আকাশে থাকে। এই মন্ত্রে ভর করেই ভারত ও ব্রিটেনের যৌথ উদ্যোগে গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে সূচনা হল শক্তি ক্ষেত্রে এক নয়া উদ্যোগের, যার পোশাকি নাম ‘এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’। আর সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন, সারা বিশ্বের জন্য শীঘ্রই একটি সোলার ক্যালকুলেটর তৈরি করবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’। কোন কোন অঞ্চলে বেশি সৌরশক্তি উৎপাদিত হওয়া সম্ভব, সে বিষয়ে দিশা দেখাবে ওই ক্যালকুলেটর।
বিভিন্ন দেশের মরু অঞ্চলে বসানো সৌর প্যানেল কিংবা সমুদ্রতটে বসানো উইন্ডমিল থেকে সংগৃহীত পরিবেশবান্ধব শক্তি পরিবাহিত হবে একটি অভিন্ন বিদ্যুৎ-গ্রিডে। তার ফলে সূর্যাস্তের পরেও বা প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ পাবে কোনও না কোনও দেশ। ‘গ্রিন গ্রিড’ তথা ‘এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’ প্রকল্পের মূল ভাবনা এটিই। অনুষ্ঠানে মোদী আজ বলেন, ‘‘সূর্যোপনিষদ বলছে, সব কিছুই সূর্য থেকে উৎপন্ন। সূর্যই সমস্ত শক্তির উৎস। এক সময়ে দৈনন্দিন জীবন বাঁধা থাকত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের চক্রে। কিন্তু মানুষ তাকে ছাপিয়ে যেতে গিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করেছে। মানবতার ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে হলে আবার আমাদের সূর্যের সঙ্গেই চলতে হবে।’’
মোদীর মতে, এক ঘণ্টায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যতটা সূর্যালোক পায়, তা প্রত্যেকটি মানুষের এক বছরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারে। তবে সমস্যা হল, সৌরশক্তি শুধু দিনেই পাওয়া যায় এবং প্রকৃতির উপরেও তা নির্ভররশীল। ‘এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’ প্রকল্প’ এই সমস্যারই সমাধান। একটি বিশ্বব্যাপী গ্রিড সর্বত্র, সব সময়ে পরিবেশবান্ধব শক্তি পৌঁছে দেবে। এর ফলে বিদ্যুতের দাম কমবে, সৌর প্রকল্পের ব্যবহারযোগ্যতা বাড়বে। বিভিন্ন ক্ষেত্র ও দেশের মধ্যে সহযোগিতার রাস্তাও খুলবে। এই প্রসঙ্গেই ইসরোর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন মোদী। অনুষ্ঠানে মোদীর প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার পথটি যে রাষ্ট্রনেতারা সব চেয়ে ভাল ভাবে বোঝেন, মোদী তাঁদের অন্যতম। মোদী ও জনসনের বক্তৃতার সময়ে দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তাঁর সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছেন মোদী। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি উন্নয়ন এবং টিকা সংক্রান্ত গবেষণা নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছে।
গত কাল সম্মেলনে মোদী বলেছিলেন, ২০৭০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনবে ভারত। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ সেই প্রসঙ্গে টুইটারে লেখেন, ‘‘গ্লাসগোয় প্রধানমন্ত্রীর বড় বড় ঘোষণা এক কথা, আসল বিষয় হল দেশে কী ঘটছে। বন ও পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত আইন লঘু করা হচ্ছে, বেঁধে দেওয়া মাত্রা শিথিল করা হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি দুর্বল হচ্ছে। বাস্তব এটাই— বহু দূরের ২০৭০ সালের প্রতিশ্রুতি নয়।’’
জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে জনসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেছেন মোদী। সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির মোকাবিলার বিষয়টি সেই সংক্ষিপ্ত বৈঠকে উঠেছে বলে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy