ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে এ বার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের দ্বারস্থ হলেন তাহাউর রানা। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত রানা আবেদনপত্রে এ বার তাঁর অসুস্থতার অজুহাত দিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল বিচারপতি রবার্টসের বেঞ্চে আবেদনের শুনানি হতে পারে।
ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য চলতি মাসের আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন রানা। আবেদনপত্রে লিখেছিলেন, ‘‘আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর অত্যাচার চালাবেন বলে আশঙ্কা করছি।’’ কিন্তু গত ৭ মার্চ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের নবম সার্কিটের বিচারপতি এলেনা কাজ়ান প্রত্যর্পণের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রানার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
কিন্তু নতুন আবেদনের ফলে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষত, রানা তাঁরা ‘অসুস্থতা এবং মৃত্যুর আশঙ্কার’ যুক্তি দিয়ে মার্কিন মানবাধিকার আইনের সুবিধা পেতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। প্রসঙ্গত, গত ২৫ জানুয়ারি ২৬/১১ হামলার অন্যতম চক্রী রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিয়েছিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমানে আমেরিকার জেলে তিনি বন্দি রয়েছেন। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলায় তাঁর যোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এর পর থেকেই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী রানাকে ভারতে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়েছিল।
বস্তুত, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাঁকে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে। প্রথমে নিম্ন আদালতে, তার পরে ওয়াশিংটনের প্রাদেশিক আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন করেন রানা। কোথাও সুরাহা হয়নি। সান ফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতেও প্রত্যর্পণের পক্ষেই রায় গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রানাকে দ্রুত ভারতে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে শ্লথ করে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে আগত ১০ লশকর-এ-ত্যায়বা জঙ্গির মুম্বইয়ে হামলার পরিকল্পনায় রানা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল ভারতের। মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গী রানাকে পাওয়ার জন্য প্রায় দেড় দশক আগে ওয়াশিংটনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে সায় মেলেনি। বরং পরবর্তী কালে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান। পরবর্তী সময়ে দ্বিপাক্ষিক বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে আবার রানাকে আমেরিকার থেকে ফেরত চায় ভারত। তার পরে ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বই নাশকতার ঘটনাতেই ফের রানাকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকার পুলিশ। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে রানার তরফে জামিনের আবেদন জানানো হলেও বছর দেড়েক আগে তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বইয়ে পাক জঙ্গি আজমল কসাব এবং তার সঙ্গীদের হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছ’জন মার্কিন নাগরিকও। ২৬/১১ সন্ত্রাসের অন্যতম চক্রী রানা গত দেড় দশকে আইনের ফাঁকফোকর এবং মানবাধিকারের বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে বার বার প্রত্যর্পণ এড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। এ বারও সেই পথই নিয়েছেন তিনি।