Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পরপর গণপ্রহার, আতঙ্কে বাংলাদেশ

সম্প্রতি ঢাকার একটি স্কুলে মেয়ের ভর্তির খোঁজখবর নিতে গিয়ে উন্মত্ত জনতার প্রহারে মারা গিয়েছেন তসলিমা আক্তার রেণু নামে এক মহিলা।

কুদ্দুস আফ্রাদ
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশু-কিশোরদের মাথা লাগবে— সোশ্যাল সাইটে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এই গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। আর তার জেরে ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় দু’সপ্তাহে ১০ জন মারা গিয়েছেন। পুলিশ সময়ে পৌঁছে উদ্ধার করতে পেরেছে অন্তত ২৭ জনকে। এ ছাড়াও গণপিটুনিতে মারাত্মক জখম হয়েছেন শতাধিক মানুষ। পুলিশ এর পিছনে সরকার-বিরোধী চক্রান্তের ছায়া দেখছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলছে, হঠাৎ এই ঘটনা বাড়লেও বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে গুজবের ভিত্তিতে গণপিটুনি ও হত্যা চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা শাস্তি না-পাওয়ায়, এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি ঢাকার একটি স্কুলে মেয়ের ভর্তির খোঁজখবর নিতে গিয়ে উন্মত্ত জনতার প্রহারে মারা গিয়েছেন তসলিমা আক্তার রেণু নামে এক মহিলা। বাস্তবে এই ঘটনার পরেই মাঠে নেমেছে প্রশাসন। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর দায়ে এ পর্যন্ত ১০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৬০টি ফেসবুক আইডি, ২৫টি ইউটিউব চ্যানেল এবং ১০টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী আনসারের ৬১ লক্ষ সদস্যকে দেশ জুড়ে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার ও নজরদারিতে নিয়োগ করা হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেই পুলিশকে জানানোর জন্য একটি বিশেষ ফোন নম্বর নির্দিষ্ট করে প্রচার শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার বেসরকারি সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ গণপিটুনি নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত খবর থেকে এই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত সাড়ে আট বছরে বাংলাদেশে গণপিটুনিতে খুন হয়েছেন ৮২৬ জন মানুষ। সোমবার পর্যন্ত দুই সপ্তাহে দেশে ৩১টি এমন ঘটনা ঘটেছে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজের কথায়, গণপিটুনির ঘটনা আটকাতে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে বিচার করতেই হবে। সংশ্লিষ্টেরা বলছেন, মামলার এজাহারে ‘গণ’ বা ‘গণপিটুনি’ শব্দটি থাকলেই সাতখুন মাফ। ঘটনার তদন্ত গতি পায় না, চার্জশিট হয় না। এক দশকে বাংলাদেশে গণপিটুনির কোনও একটি ঘটনারও বিচার শেষ হয়ে দুষ্কৃতীরা শাস্তি পায়নি।

এ বারের গুজব ছড়ানোর ঘটনার পিছনে অবশ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত দেখছে পুলিশ। পুলিশের ডিজি জাবেদ পাটোয়ারি বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত যে ক’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গেই সরকার-বিরোধী রাজনীতির যোগ পাওয়া গিয়েছে। সরকার-সমর্থক এক জনকেও পাওয়া যায়নি।’’ পুলিশ প্রধানের অভিযোগের জবাবে বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে এখন তারা বিরোধীদের দোষারোপ করছে।’’

ডিজি পাটোয়ারি বলেন, ‘‘স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিত ভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। বিদেশ থেকেও এ ধরনের পোস্ট এসেছে।’’ ডিজি জানান— প্রথম যে পোস্টটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করে, তার মূল খুঁজতে গিয়ে দুবাইয়ের এক জনের যোগ মিলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Mob Lynching Mob Violence Abduction Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy