ইমরান খান ছবি—রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক শিবিরের সামনে নিজেদের ভাবমূর্তি মেরামত করতে হঠাৎই প্রবল তৎপর হয়ে উঠেছে পাকিস্তান সরকার। ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে সীমান্তে সংঘর্ষ বিরতি সংক্রান্ত বিবৃতি দেওয়া ছিল যার প্রথম ধাপ। আজ তারই পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে, ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করল পাক সামরিক বাহিনীর মিডিয়া বিভাগ। সেখানে অভিনন্দনকে পাক সেনার প্রশংসা করতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় সূত্রের বক্তব্য, ভিডিয়োটি যে সম্পাদনা করা হয়েছে তা স্পষ্ট। কারণ ভিডিয়োটিতে ১৬টি ‘কাট’ রয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, বোঝা যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন ভাবে শব্দগুলি জোড়া হয়েছে। ঠিক দু’বছর আগে আজকের দিনেই কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমানকে ধ্বংস ও পরবর্তী সময়ে পাক সেনার হাতে ধরা পড়েন অভিনন্দন।
সেই ঘটনার বর্ষপূর্তির দিনে ওই ভিডিয়ো প্রকাশের সঙ্গেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে টুইট করেছেন। নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এনেছেন কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গও। সঙ্গে অভিনন্দনকে ভারতের হাতে ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের ‘দায়িত্বশীল আচরণের’ হয়ে সওয়াল করে তাঁর বক্তব্য, এর পরে উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ভারতের।
ঠিক দু’বছর আগে বালাকোট অভিযানের পরে পাকিস্তানের আকাশপথে উইং কমান্ডার অভিনন্দনের মিগ বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। যার জেরে পাক সেনার হাতে পড়েন তিনি। আজ যে ভিডিয়োটি পাক সেনার পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় তাতে অভিনন্দনকে বলতে শোনা গিয়েছে, পাকিস্তানের সেনা ‘অত্যন্ত পেশাদার এবং উদার-হৃদয়’ যা দেখে তিনি ‘মুগ্ধ’। ‘ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোনও ফারাক’ তিনি দেখছেন না বলেও জানিয়েছেন। যে সেনা নিজের প্রাণ বিপন্ন করে শত্রুপক্ষকে আক্রমণে উদ্যত ছিলেন, সেই তাঁকেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে (ভিডিয়োটিতে) শোনা গিয়েছে শান্তির কথা বলতে!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কোনও সেনা শত্রু দেশের হাতে আটক হলে তাঁর এত কথা বলার কোনও কারণ আছে কি না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, শত্রুপক্ষের কাছে স্বেচ্ছায় নিজের নাম এবং পদমর্যাদাটুকুই বলতে পারেন ওই সেনা। কিন্তু কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের সেনাকে শংসাপত্র বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার কথা নয় তাঁর। কিন্তু এখানে যে-ভাবে অভিনন্দন বক্তব্য রেখেছেন তার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি সাজানো। অভিনন্দনকে জোর করে বলানো হয়েছে কথাগুলি। শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়লে কতটুকু নিজে থেকে বলা উচিত তা ভারতীয় সেনারা জানেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণের আগে অভিনন্দনকে দিয়ে ওই কথাগুলি বলিয়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্রের মতে, ভারতে ফেরার পরে অভিনন্দনের যে ডি-ব্রিফিং হয় সেখানে পাকিস্তানের মাটি স্পর্শ করার পর থেকে তাঁর সঙ্গে কী কী হয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ সেনা গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন অভিনন্দন। যার মধ্যে দ্বিতীয় ভিডিয়োর উল্লেখ ছিল। ফলে আজকের ভিডিয়োটি নতুন কিছু নয় বলে জানিয়েছে সেনা সূত্র।
বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের ভাবমূর্তিকে তুলে ধরতেই ওই উদ্যোগ বলেই মত কূটনীতিকদের। ইমরান খান যে-ভাবে ধারাবাহিক শান্তি-প্রচারে নেমে পড়েছেন, তাতে এই সন্দেহ আরও গভীর হচ্ছে তাঁদের। আজ পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন সামরিক দাদাগিরির জবাবে পাকিস্তান কী ভাবে দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার করেছে। তাদের আটক হওয়া পাইলটকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বরাবরই শান্তির পক্ষে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত বকেয়া বিষয়ের সমাধানে উৎসাহী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy