Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2023

কুমোরটুলি থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে প্রতিমা আসছে কোলনে

১৯৯১ সালে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় ‘ভারত সমিতি’, প্রায় এক বছরের প্রস্তুতি পর্ব কাটিয়ে কোলনের মাটিতে, মা দুর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে প্রথম পা রাখেন ১৯৯২ সালে।

An image of Durga Puja

গত বছরের প্রতিমা। —ফাইল চিত্র।

মোহর দে
কোলন (জার্মানি) শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৫২
Share: Save:

১৯৯০ সালের এক শরৎকালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর থেকে দুর্গাপুজো দেখে কোলন শহরে বাড়ি ফিরছিলেন দুই বাঙালি যুবক, এক জন ডাক্তার ও অন্য জন ইঞ্জিনিয়ার। প্রবাসে দুর্গাপুজো করার প্রথম ইচ্ছেটা জেগে ওঠে এই যাত্রাপথেই। ১৯৯১ সালে ১২ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় ‘ভারত সমিতি’, প্রায় এক বছরের প্রস্তুতি পর্ব কাটিয়ে কোলনের মাটিতে, মা দুর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে প্রথম পা রাখেন ১৯৯২ সালে। প্রথম পুজোয় খরচ হয়েছিল ৮৫০০ মার্ক, তখনও ইউরোর চল শুরু হয়নি।

সেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ‘ভারত সমিতি’ এ বার পালন করছে তাদের ৩২তম দুর্গাপুজো। বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ জন, পুজোর গন্তব্যস্থানটি কিন্তু সেই প্রথম বছর থেকেই এক— কোরওয়াইলার হল। এ বারের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ— কলকাতা থেকে সাত সমুদ্র পেরিয়ে আক্ষরিক অর্থেই মায়ের আগমন। কুমোরটুলি থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে, হামবুর্গের পথে রওনা হয়েছেন মা, সেখান থেকে কোলনে আসবেন স্থলপথে। ছুটি কাটাতে যাঁরা দেশে যান, পুজোর যাবতীয় সামগ্রী, যেমন ধুতি, শাড়ি থেকে আরম্ভ করে গঙ্গাজলও নিয়ে আসার দায়িত্বে থাকেন তাঁরা। ।

নির্ঘণ্ট মেনে পাঁচ দিন ধরে পুজো হওয়ায় প্রত্যেকের দায়িত্বের পরিমাণ অনেক বেশি। কাজের ভিত্তিতেই তৈরি হয়ে গেছে বিভিন্ন ওয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ। অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন, মেনু নির্বাচন, স্ন্যাকস কাউন্টার, পুজোর পত্রিকা, মঞ্চসজ্জা— সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার। একুশে আইনের এই দেশে নিয়মের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই, তাই কড়া নজর রাখতে হয় খাবারের গুণগত মানের উপরে। খেয়াল রাখতে হয় হলের সর্বোচ্চ দর্শনার্থীর সংখ্যা যেন থাকে সীমার মধ্যে। পুজো এ বার কিছুটা সপ্তাহান্তে হওয়ায় আমাদের অনুমান, আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ও শহর থেকে যেমন অনেকে কোলনে আসেন পুজো দেখতে, সময় পেলে কোলনবাসীরাও যান ডুসেলডর্ফ বা ফ্রাঙ্কফুটের পুজো দেখতে, সেটাই আমাদের কাছে ‘প্যান্ডল হপিং’।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ বার লেগেছে আন্তর্জাতিক মেলবন্ধনের ছোঁয়া। সিঙ্গাপুর থেকে অতিথি শিল্পীরা থাকছেন গীতিনাট্য পরিবেশনে, সঙ্গে থাকবেন সমিতির সদস্যেরাও, বিষয় ‘নারী’। কচিকাঁচার দল পরিবেশন করবে চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য। এ ছাড়া চিরাচরিত বাংলা গান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মেতে উঠবে পুজোপ্রাঙ্গণ। এখানে ভাসান হয় না, আমাদের আগের সমস্ত প্রতিমার স্থান হয়েছে জার্মানির বিভিন্ন মিউজ়িয়ামে। নতুন প্রতিমা আনা হয় পাঁচ বছর অন্তর।

শরৎ এখানে ক্ষণস্থায়ী, পেঁজা তুলোর মেঘেরা একটু ভাল করে ভাসতেও সময় পায় না, তার আগেই হুড়মুড় করে হেমন্ত এসে গাছের পাতায় ছড়িয়ে দেয় তার আগুন রং। পুজো আসার আগের ব্যস্ততা আর উদ্দীপনার এই আবেশটাই ভাল, নির্দিষ্ট সেই পাঁচটা দিনের যেন চলে যাওয়ার বড্ড তাড়া থাকে। তবে যাওয়ার আগে তাজা হাওয়ায় মতো আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে ভরে দিয়ে যায় অনেকটা আশা, উৎসাহ, ভালবাসা, দেশের ছোঁয়া আর তারই সঙ্গে পরের বছরের অপেক্ষায় থাকার শক্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2023 Germany Frankfurt Durga idol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy