ফাইল চিত্র।
গায়ের রং-এর জন্য এখনও হেনস্থা, অপমানিত হতে হয় আমেরিকায়। আর ঘটনাচক্রে কেউ যদি মুসলিম হন আর কথা বলেন আরবি ভাষায়, তা হলে তাঁকে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমান থেকে নামিয়েও দেওয়া হয়! সঙ্গে বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও। আর সঙ্গে কোনও অবৈধ জিনিসপত্র, অস্ত্রশস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও। এমনটাই অভিযোগ এক মার্কিন নাগরিকের।
গত ডিসেম্বরের ঘটনা। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানে (ফ্লাইট নম্বর- ১৮২১) শার্লট থেকে ডেট্রয়েটে যাচ্ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ আহমেদ রাদোয়ান। শার্লট বিমানবন্দরে তাঁর লাগেজ ‘চেকিং’-এ দিয়ে সবে বিমানে উঠে খুঁজে খুঁজে তাঁর সিটে গিয়ে পৌঁছেছেন রাদোয়ান, তখনও বসতে পারেননি। এমন সময় এক মহিলা বিমানকর্মী লাউডস্পিকারে ঘোষণা করে দিলেন, ‘‘মহম্মদ আহমেদ। সিট নম্বর- ২৫এ। আমি আপনার ওপর নজর রেখে চলেছি।’’ ওই মহিলা বিমানকর্মী ঘোষণাটা এক বার করেই থেমে গেলেন না। মিনিটখানেক পর তাঁর দ্বিতীয় বারের ঘোষণায় ওই মার্কিন মহিলা বিমানকর্মী বললেন, ‘‘মহম্মদ আহমেদ। উফ্! বড্ড লম্বা নাম! সিট নম্বর- ২৫এ। আমি আপনার ওপর নজর রেখে চলেছি।’’ তার মিনিট দু’য়েক পর আবার ঘোষণা ভেসে এল লাউডস্পিকারে। তাতে রাদোয়ানের নামটা পুরোপুরি বাদ দিয়ে অনেকটা যেন জেলের কয়েদির মতো তাঁকে তাঁর সিটের নম্বর ধরে ডাকলেন ওই মহিলা বিমানকর্মী। বলা হল, ‘‘সিট নম্বর- ২৫এ। আপনার ওপর আমরা কড়া নজর রাখব।’’
পর পর ওই অপমানজনক ঘোষণা শুনে হকচকিয়ে যান রাদোয়ান। তাঁর কথায়, ‘‘টানা ৩০ বছর বিমানে যাওয়া-আসা করছি এ মুলুক থেকে সে মুলুকে। কখনও এমন অপমানিত হইনি বিমানে উঠে। এমন অবমাননাকর ঘোষণাও শুনিনি কোনও দিন। প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করেছিলাম।’’ আর কোনও যাত্রীর নাম ধরে ওই বিমানকর্মী ঘোষণা করেননি।
এর পর রাদোয়ান ওই মহিলা বিমানকর্মীর কাছে গিয়ে জানতে চান, ‘‘এমন ভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে কেন?’’ জবাবে ওই বিমানকর্মী বলেন, ‘‘আমরা সকলের ওপরেই নজর রাখছি।’’ এর পর রাদোয়ান ওই বিমানকর্মীকে বলেন, ‘‘তা হলে শুধুই আমার নামটা কেন ঘোষণা করা হল লাউডস্পিকারে?’’ ওই প্রশ্ন শুনে বেশ চটে যান মহিলা বিমানকর্মীটি। বলে ওঠেন, ‘‘সব কিছুকে নিজের দিকে টেনে নেন কেন? গায়ের চামড়া এত পাতলা হলে চলে! ভারী ভদ্রলোক তো!’’ এই বলে বিচিত্র ভঙ্গি করে তাঁর পাশ কাটিয়ে চলে যান বিমানকর্মীটি।
এর পর ওই বিমানের অন্য কর্মীরা রাদোয়ানকে বলেন, ‘‘আপনাকে মনে হয় ওঁর (মহিলা বিমানকর্মীর) ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। আপনার আচরণ ওঁর ভাল লাগছে না। আপনি বরং বিমান থেকে নেমে যান।’’ এর পর রাদোয়ানকে ওই বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়!
গায়ের রং আর ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য রাদোয়ানের অপমানিত হওয়ার ঘটনাটি ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স’ (‘কেয়ার’)-এর বৈঠকে গতকাল তুমুল সমালোচিত হয়। রাদোয়ান এক জন কৃষ্ণাঙ্গ, মুসলিম আর আরবি ভাষায় কথা বলেন বলে কেন তাঁর সঙ্গে ওই ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে (যা, মার্কিন সংবিধানের পরিপন্থী), তার কৈফিয়ত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন পরিবহণ দফতরকে। দাবি করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত।
ওই ঘটনার প্রায় আট মাস পরেও সে দিনের সেই অপমান ভুলে যেতে পারছেন না রাদোয়ান। ক্ষোভে-খেদে বলেছেন, ‘‘গত ১৩ বছর ধরে আমি আমেরিকার নাগরিক। আমেরিকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশেই গিয়েছিলাম মনে-প্রাণে। কিন্তু এখন খটকা লাগছে। মনে হচ্ছে, আমার বোঝাবুঝিতে কোথায় যেন একটা ভুল থেক গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন- জঙ্গি রোখার অজুহাতে অধিকৃত কাশ্মীরে যৌথ টহল চিন-পাকিস্তানের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy