গরমে অসুস্থ ছেলে। তাকে কোলে নিয়েই সাহায্যের আর্তি বাবার। হাঙ্গেরির এক আশ্রয় শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।
শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনার পর অতিথি-আপ্যায়নে আর এক ধাপ এগোল জার্মানি। শরণার্থীদের চাপের কথা মাথায় রেখে বাড়তি ৬০০ কোটি ইউরোর বরাদ্দ ঘোষণা করলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল।
জার্মানির এই উদ্যোগকে অনেকে সাধুবাদ জানালেও এর ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সমস্যা বাড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে। শরণার্থী সঙ্কটে ইন্ধন জোগানো এবং ভুল বার্তা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই জার্মানির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে হাঙ্গেরি। শুধু বাইরেই নয়, শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে ঘরের অন্দরেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন মের্কেল। তাঁর জোট শরিকদের একাংশেরও দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফল ভয়ানক হতে পারে।
ইউরোপের শরণার্থী-সঙ্কটে আশার আলো দেখালেও এই বিশাল সংখ্যক মানুষের ভিড় যে জার্মানির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে তা স্বীকার করে নিয়েছেন মের্কেল নিজেই। গত শনিবার জার্মানির রেল স্টেশনগুলোয় শরণার্থীদের অভ্যর্থনার পর মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা শরণার্থীরা জার্মানি পৌঁছতে চাইছেন। অনেকে জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়ার জন্য ধর্মান্তরণ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র।
বালি শিল্পে স্মরণ আয়লানকে। সোমবার পুরীতে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য বলছে, শুধু গত সপ্তাহান্তেই জার্মানি এসে পৌঁছেছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বরাদ্দ ঘোষণার পর আজ মের্কেল বলেন, ‘‘যা ঘটছে, তা আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। পরিবর্তন আনবে। তবে আমরা আশা করছি সেই পরিবর্তন ইতিবাচকই হবে।’’ শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলায় মের্কেল আজও ইউরোপের সব দেশকে এগিয়ে আসার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শরণার্থীদের সঙ্গে একাত্মবোধ করে ওঁদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমান ভাবে ভাগ করে পাঠানো হোক। ইউরোপ তার মূল্যবোধ দেখাক।’’
জার্মান চ্যান্সেলর মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মানবতা আমাদের কাছে মূল্যবান। বিশেষত আমাদের ইতিহাসের নিরিখে। অন্য দেশের মানুষেরা আমাদের কাজে আশার আলো দেখছেন।’’ আজ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ জানিয়েছেন, ২৪ হাজার শরণার্থীকে জায়গা দিতে প্রস্তুত ফ্রান্স। তবে পাশাপাশি তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভেঙে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সীমান্ত বিধিহীন শেঙ্গেন ব্যবস্থা।’’ কুড়ি হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।
মের্কেল আশার আলো দেখালেও আজ খানিকটা সুর পাল্টেছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ওয়ার্নার ফেম্যান। তাঁর মতে, ‘‘এই জরুরিকালীন পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হবে।’’ বিভিন্ন মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত শরণার্থীদের ভিড় কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই। সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে বা ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়া এবং সার্বিয়া হয়ে এখনও কাতারে কাতারে মানুষ ইউরোপে আসছেন।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের কথায়, ‘‘আমরা যদি ইউরোপের বাইরের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে না পারি, তবে কে কত লোককে আশ্রয় দিতে পারবে সেই প্রশ্নের কোনও মানে নেই।’’ তাঁর মতে, যাঁরা জার্মানিতে আশ্রয় চাইছেন, আসলে তাঁরা জার্মানির মানুষের মতো জীবনধারণ চাইছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘না হলে অন্য কোনও নিরাপদ দেশে যেতে না চেয়ে জার্মানিতেই যাচ্ছেন কেন সবাই?’’
হাঙ্গেরির পার্লামেন্টে ইতিমধ্যেই শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করা এবং প্রয়োজনে সেখানে সেনা মোতায়েন করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
শরণার্থী সঙ্কটে ইউরোপ জুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রাতারাতি লক্ষাধিক মানুষকে দেশে জায়গা দিলে তার ফল নিয়েও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে জার্মানিকে। অর্থনীতি, সমাজ এবং সার্বিক ভাবে জীবনশৈলীতেও প্রভাব ফেলবে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে এলেও তবে সার্বিক সমস্যা সমাধানে এখনও একমত হতে পারছেন না ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা। সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়নও। বরং ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে কূপনৈতিক চাপ এবং চাপানউতোর। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু বিষয়ক বিভাগের প্রধান অ্যান্টোনিও গুটেরেস বলছেন, ‘‘মতবিরোধে সমস্যা মিটবে না। যৌথ ভাবে কোনও মধ্যপন্থার খোঁজে না বসলে সমস্যার সমাধান অধরাই থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy