আরও কঠিন সময়ের মুখে পড়ল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিল্প। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের আমেরিকায় চাকরির সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে গেল। সুযোগ এক লাফে অনেকটাই কমে গেল আউটসোর্সিংয়ের।
ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুলভে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী নিয়ে গিয়ে এত দিন মার্কিন মুলুকে যে রমরমা ব্যবসা চালাত ইনফোসিস, উইপ্রো, টিসিএসের মতো ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি, তার রাশ টানতে একটি মোক্ষম চাল চালল নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। মার্কিন মুলুকে ইনফোসিসের যত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী রয়েছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই অবশ্য মার্কিন নাগরিক, যাঁদের হাতে রয়েছে ‘এইচ-১-বি’ ভিসা। এর ফলে, তাঁদের মাইনে বাবদও খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গেল ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির। ইতিমধ্যেই ভারতের উদ্বেগের কথা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে হোয়াইট হাউসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘এইচ-১-বি’ ভিসায় কিছু রদবদল ঘটিয়ে একটি আইন প্রণয়নের জন্য মার্কিন আইনসভা ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ একটি বিল আনা হল মঙ্গলবার। ওই আইন মোতাবেক ‘এইচ-১-বি’ ভিসা যাদের আছে, তাঁদের ন্যূনতম মাইনে দ্বিগুণ করতে হবে। মানে, তার পরিমাণটা হতেই হবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর ফলে, ওই পরিমাণ মাইনে দিয়ে ভারত থেকে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী আমেরিকায় নিয়ে যাওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়ল ইনফোসিস, উইপ্রো, টিসিএসের মতো ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির। ’৮৯ সাল থেকেই টানা ২৮ বছর ধরে ওই ন্যূনতম মাইনের পরিমাণ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।
এ দিন ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ যে বিলটি আনা হয়েছে, তার নাম- ‘হাই-স্কিল্ড ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড ফেয়ারনেস অ্যাক্ট, ২০১৭’। বিলটি এনেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস সদস্য জো লোফগ্রেন। এই বিলটি মার্কিন আইনসভায় আসার পর ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কতটা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রো, টেক মহিন্দ্রের মতো চারটি বড় সংস্থা সহ সবক’টি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারের দাম গড়ে ৯ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। যার জেরে বাজারের লোকসান হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। টিসিএসের শেয়ার পড়েছে ৫.৬ শতাংশ, টেক মহিন্দ্রার ৯.৭ শতাংশ, ইনফোসিসের ৪.৬ শতাংশ, উইপ্রোর ৪.২৩ শতাংশ এবং এইচসিএল টেকের শেয়ার পড়েছে ৬.২৩ শতাংশ।
কী কী পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে ‘এইচ-১-বি’ ভিসায়?
১) ন্যূনতম মাইনের পরিমাণ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার করা হল।
২) এই ন্যূনতম মাইনে দিতেই হবে ‘এইচ-১-বি’ ভিসা হাতে থাকা মার্কিন মুলুকের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের।
৩) ওই ন্যূনতম মাইনের ব্যাপারে এত দিন যে ‘পার কান্ট্রি’ মোড়ক ছিল, সেটাও তুলে নেওয়া হচ্ছে। তার মানে, মার্কিন মুলুকে ‘এইচ-১-বি’ ভিসা হাতে থাকা কোনও তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী যদি নেদারল্যান্ডস থেকে আসেন, তাঁকে যে ন্যূনতম মাইনে দিতে হবে, একই পরিমাণে ন্যূনতম মাইনে দিতে হবে ভারত থেকে কাজ করতে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদেরও। এত দিন এ ব্যাপারে একটা অসাম্য ছিল। সেটা এ বার তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে নতুন বিলে জানানো হয়েছে।
৪) এর ফলে, নতুন ‘এইচ-১-বি’ আইন সংক্রান্ত বিল মোতাবেক আইটি সংস্থাগুলিকে একমাত্র মেধা বা দক্ষতার ভিত্তিতেই কর্মী নিয়োগ করতে হবে আর তাঁদের একই হারে ন্যূনতম মাইনে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা কোন দেশের নাগরিক বা তাঁদের জাতিসত্ত্বা কী, সেটা বিচার্য বিষয় হতে পারবে না আইটি সংস্থাগুলির।
৫) মার্কিন মুলুকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পেতে গেলে, যাঁদের হাতে ‘এইচ-১-বি’ ভিসা আছে, তাঁদেরও এখন থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
৬) মার্কিন মুলুকে ‘এইচ-১-বি’ ভিসা পাওয়ার নিয়মকানুন শিথিল করা হয়েছে। ওই ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আর আগের মতো জটিল থাকছে না। ‘এফ-১’ ছাত্র ভিসা আর ‘এইচ-১-বি’ ভিসার মধ্যে একটা ‘ব্রিজ’ বা সেতু বানানো হয়েছে।
৭) ‘এইচ-১-বি’ ভিসা যাঁদের হাতে রয়েছে, তাঁদের মৃত্যু বা অনুপস্থিতিতে তাঁদের স্ত্রীরা ওই ভিসার সুযোগ-সুবিধাগুলি আর পাবে না।
আরও পড়ুন- ধর্মের ছোঁয়া নেই, দেশকে নিরাপদ করতেই নির্দেশ, ফের দাবি ট্রাম্পের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy