Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Wuhan

করোনায় মৃত হাসপাতালের ডিরেক্টরও

এখনও পর্যন্ত চিনে যে ছ’জন করোনা-আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ঝিমিংই সব চেয়ে প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্তা। অভিযোগ, এঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যুসংবাদ গোড়ায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রশাসন।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫১
Share: Save:

করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে মৃত্যুমিছিল বেড়েই চলেছে চিনে। এ বার প্রাণ গেল উহানের উচ্যাং হাসপাতালের ডিরেক্টরেরও। যা নিয়ে ফের শুরু হল বিতর্ক। অভিযোগ, বছর বাহান্নর নিউরো-সার্জন লি ঝিমিং গত কাল মারা যান। সেই খবর প্রথমে জানিয়েও চিনা সংবাদমাধ্যমে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রশাসনিক সূত্রে বলা হয়, ওই চিকিৎসককে জীবনদায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার পর আজ সকালে সরকারি ভাবে ঝিমিংয়ের মৃত্যুসংবাদ জানানোর পরেই বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নাগরিকেরা।

এখনও পর্যন্ত চিনে যে ছ’জন করোনা-আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ঝিমিংই সব চেয়ে প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্তা। অভিযোগ, এঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যুসংবাদ গোড়ায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রশাসন। বেজিং অবশ্য সেই অভিযোগে কান না-দিয়েই আজ সব স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানিয়েছে, এঁদের সবাইকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হবে। হুবেই প্রদেশে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের নাগাড়ে হাসপাতালেই পড়ে থাকতে হচ্ছে বলে, তাঁদের সন্তানদের কেউ সিনিয়র হাইস্কুল প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসলে অতিরিক্ত ১০ নম্বর করে পাবে বলে আজই ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

আজ, মঙ্গলবার চিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮৭১। শুধু আজই মারা গিয়েছেন ৯৮ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন হুবেই প্রদেশের। বিশ্ব জুড়ে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার ছোঁয়ার মুখে। যাঁদের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। নাগরিকদের একাংশের দাবি, করোনা-মোকাবিলায় ব্যর্থ প্রশাসন। দেশ জুড়ে ৩২২টি হাসপাতালে যে-প্রায় তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী লাগাতার লড়াই করে চলেছেন, তাঁদেরও যথাযথ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে না। অভিযোগ, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট সরঞ্জাম-ওষুধ ছাড়াই হাসপাতালের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, সংক্রমণ অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। উহানের বাইরে নয়া সংক্রমণের খবর দু’সপ্তাহ ধরেই ক্রমশ কমছে। আর এখন উহানের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের দাবি, ডিসেম্বরে সংক্রমণ শুরু হওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার রোগীকে সুস্থ করে বাড়িতে ফেরানো গিয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় উহানে আরও ১০টি অত্যাধুনিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। যেখানে থাকবে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বেড।

চিন স্বস্তির ছবি দেখাতে চাইলেও আজই করোনা-সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতির হাতের বাইরে না-গেলেও করোনা খুব বিপজ্জনক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বকেই এই বিপদ সামালানোর জন্য তৈরি থাকতে হবে।’’

বিপদ কাটেনি জাপানের ইয়োকোহামাতে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে থাকা যাত্রী ও জাহাজকর্মীদেরও। সূত্রের খবর, আমেরিকা দু’টি বিমানে করে তাদের নাগরিকদের এই জাহাজ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। যাত্রী ও কর্মী মিলিয়ে জাহাজে থাকা প্রায় ৩,৭০০ জনের মধ্যে আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৪২ জন করোনা-সংক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে খবর। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন মেয়াদ শেষ হচ্ছে কাল, বুধবার। সূত্রের খবর, সংক্রমণ হয়নি এমন অন্তত ৫০০ জনকে তাই এ বার ছেড়ে দেওয়া হবে। টোকিয়োও নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ওই জাহাজে থাকা ১৩৮ জন ভারতীয়ের মধ্যে ছ’জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন।

জাপান সরকার জাহাজে কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত নিয়ে বারবার নিজেদের ঢাক পেটালেও, বিশেষজ্ঞরা কিন্তু একেবারেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, যে ভাবে জাহাজের যাত্রী-কর্মীরা অবাধে মেলামেশা করছেন, তাতে আরও নতুন কোনও মারক ভাইরাস ছড়ানোও অসম্ভব নয়।

উহান থেকে ভারতীয়দের আনতে ২০ ফেব্রুয়ারি সেনা বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আজই গুরুগ্রামের দু’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে মোট ৩৪৮ জনকে ছাড়া হয়েছে। এ দিকে, উহানে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের আশ্বস্ত করতে সেখানে দু’জন আধিকারিককে পাঠানো হবে, জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

অন্য বিষয়গুলি:

Wuhan CoronaVirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy