ধৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ। হংকংয়ের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সোমবার। এপি
বুথের বাইরে লম্বা লাইনই ইঙ্গিতটা দিয়েছিল। হংকংয়ের স্থানীয় নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পেলেন গণতন্ত্রকামী প্রতিনিধিরা। ৪৫২ আসনের ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের মধ্যে ৩৯০টিই এখন তাঁদের দখলে। অর্থাৎ ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে এখন কার্যত দশ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব রইল বেজিংপন্থী নেতাদের। যাকে ‘দিন বদলের ইঙ্গিত’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন অধিকাংশ হংকংবাসী।
গত পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে উত্তাল স্বশাসিত এই এলাকা। বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে যে গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, হংকং সরকার শেষমেশ সেই বিল আনুষ্ঠানিক ভাবে বাতিল করে দিলেও আরও বৃহত্তর আন্দোলনের দাবিতে এখনও নিয়মিত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এখানকার গণতন্ত্রকামী মানুষ। সেই বিক্ষোভের মূল দাবিই হল, বেজিং ঘনিষ্ঠ হংকং প্রশাসক ক্যারি ল্যামকে সরিয়ে স্বশাসিত এই এলাকায় চিনের আধিপত্য কমানো। ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের মতো সাধারণ নির্বাচনও এ বার তাই রাজনৈতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। শুধু চিন আর হংকংই নয়, প্রায় গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের নজর ছিল এই স্থানীয় নির্বাচনে।
ফলাফল ঘোষণার পরে আজ সকালেই মুখ খুলেছেন হংকংয়ের কার্যনির্বাহী প্রশাসক ক্যারি ল্যাম। বলেছেন, ‘‘অনেকেই বলছেন এই ফল আসলে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষের প্রতীক। আমি একটা কথাই বলতে চাই, হংকংয়ের সাধারণ নাগরিকের মনের কথা এই সরকার মাথা নত করে শুনবে।’’ এই পরজায়ের জন্য তিনি কোনও অজুহাত খুঁজতে চান না বলেও জানিয়েছেন ল্যাম।
ফল ঘোষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল কাল মাঝ রাত থেকেই। আর প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এত দিন যে কাউন্সিল অবাধে দখলে রেখেছিলেন চিন ঘনিষ্ঠ প্রতিনিধিরা, এ বার তাঁরাই প্রচুর ভোটে হেরে গিয়েছেন গণতন্ত্রকামী নেতাদের কাছে। কাল গভীর রাতেও ফল ঘোষণা কেন্দ্রের বাইরে গণতন্ত্রকামী মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। যেখানেই বেজিংপন্থী প্রতিনিধিরা হেরেছেন, সেখানেই ‘হংকংকে স্বাধীন করো। বিপ্লব এখনই’-র মতো স্লোগান উঠেছে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান ইউ চি-ওয়াই এই ফলকে ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের প্রতি প্রথম পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ২০২২ সালে পরবর্তী নির্বাচনেও এই ফলের বড়সড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন গণতন্ত্রকামী নেতারা। ইউয়েন লংয়ে জিতেছেন টমি চিউং নামে এক প্রাক্তন ছাত্রনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই হল গণতন্ত্রের শক্তি। এটা আসলে গণতন্ত্রের সুনামি।’’ আর এক প্রাক্তন ছাত্রনেতা লেস্টার শুম যিনিও এ বার জিতেছেন, বললেন, ‘‘লড়াইয়ের পরবর্তী পথ আমাদের খুঁজে নিতে হবে।’’ ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের সদস্য ডেভিড অ্যালটন, যিনি হংকংয়ের এক জন পর্যবেক্ষকও বটে, আজ বলেন, ‘‘এই ফলাফলই প্রমাণ করে দেয় হংকংয়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের বীজ বোনা রয়েছে।’’ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, হংকংয়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা জোশুয়া ওয়ং। বিক্ষোভ-আন্দোলনের সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন বছর একুশের জোশুয়া। পরে জামিনে ছাড়া পেলেও এ বারের স্থানীয় ভোটে লড়তে পারেননি তিনি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি জিতবেন জেনেই ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকানো হয়েছিল তাঁকে।
তবে গণতন্ত্রকামী এই প্রতিনিধিদের সাফল্যকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ বেজিং। চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই যেমন সাফ জানিয়েছেন, ফল যা-ই হোক না কেন হংকং চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবেই পরিচিত থাকবে। আর এ নিয়ে চিনের দুই রাষ্ট্র এক নীতিই বজায় থাকবে। টোকিয়োয় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছেন ই। সেখানেই সাংবাদিকেরা হংকংয়ের স্থানীয় এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে। যার জবাবে ই-র বার্তা, ‘‘হংকংয়ে গোলমাল পাকানোর কোনও প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। কেউ ওই এলাকার স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে গেলে সাফল্য পাবে না, এটা নিশ্চিত।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং-ও আজ ল্যামের প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy