জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে রং-আবির হাতে নিয়ে এডিনবরার প্রবাসীরাও মেতে ওঠেন রঙের খেলায়। ছবি: সুমনা আদক।
বসন্ত এলে রঙের উৎসব আর কত দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? শুধু ভারতেই নয়, দোলার আবেদন সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিদেশের মাটিতেও সমান জনপ্রিয়। বাংলার সাহিত্যভাণ্ডারও রঙের এই উৎসব নিয়ে চুপ করে নেই। বাংলার নানা গল্প-কবিতায় নানা ভাবে উঠে আসে রাঙিয়ে যাওয়ার এই মাহেন্দ্র ক্ষণ। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রং খেলার রীতি মেনে যেমন বাংলায় রং খেলা হয়, তেমনই এ আনন্দ থেকে বাদ যায় না প্রবাসীরাও।
দোলের এই আনন্দ থেকে বাদ যায় না স্কটল্যান্ডও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্থাপত্যের বিপুল ঐশ্বর্যে ভরপুর ইউরোপের এক অসাধারণ দেশ স্টিফেনসনের স্কটল্যান্ড। যা গ্রেট ব্রিটেনের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত। বরফেঢাকা পর্বত আর পাইন ঝাউয়ের বনে ঘেরা স্কটল্যান্ডের আভিজাত্যের রাজধানী এডিনবরাও দোলের আনন্দে মাতোয়ারা। তাই সারা বছরের হাজারো ব্যাস্ততা ভুলে প্রতি বছরই আট থেকে আশি সকল ভারতীয়ই এখানে মেতে উঠেন রঙের খেলার আনন্দে।
এডিনবরায় দোল উৎসব ‘হোলি’ নামেই সুপরিচিত। এ দিন সকাল থেকেই ক্র্যামন্ড ক্রিকের হল প্রাঙ্গনে একে একে ভিড় জমতে থাকে। বাঙালি-অবাঙালি সবাই মিলেই সেখানে উপস্থিত হয়। দোলের আগের দিন থাকে ‘হোলিকা দহন’ প্রথা; শুকনো ঘাস আর গাছের পাতা একসঙ্গে পোড়ানো হয়। অথার্ৎ পুরনোকে বর্জন করে নতুনকে স্বাগত জানানোই এই প্রথার মুখ্য বিষয়, এখানকার বেশির ভাগ নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই এই প্রথায় অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: সমুদ্রের গভীরে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে প্রেমিকা কী করলেন দেখুন
১৯৯৪ সাল থেকে হাতে গোনা কয়েক জন প্রবাসী ভারতীয় মিলে শুরু করেছিলেন একটি সংস্থা। যা বর্তমানে ‘স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান আর্টিস্ট ফোরাম’ (এসএআইএফ) নামে পরিচিত। এরই তত্ত্বাবধানে ১৯৯ সালে দোল উৎসব প্রথম পা রাখে এডিনবরার মাটিতে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশোরও বেশি ভারতীয় অংশ নেন এই উৎসবে। এখানে জাতি-বর্ণ নির্বিশেষ রং-আবির হাতে নিয়ে একে অপরের সঙ্গে মেতে ওঠেন রঙের খেলায়। তাই বলা হয়, বসন্ত উৎসবেরই আর এক নাম ‘ভালবাসার উৎসব’।
দিনে দিনে এডিনবরায় ভারতীয়দের সংখ্যাও যেমন বেড়েছে, তেমনই উৎসব-আনন্দের মাত্রাও আরও অধিক হয়েছে। শীতের শহরের কোর্ট-ব্লেজার ছেড়ে এই দিন প্রায় সকলকে সনাতন ভারতীয় পোশাকে দেখা যায়। ছেলেদের পরনে থাকে পাঞ্জাবি, মেয়েরা শাড়িতে সাজেন। তবে শান্তিনিকেতনের মতো পলাশ ফুল এখানে পাওয়া না গেলেও এডিনবরায় মেয়েরা খোঁপায় গোঁজেন অর্কিড ফুলের মালা। শাড়ি পরে কখনও সারিবদ্ধ ভাবে গান, আবার কখনও সাঁওতালি নাচেও অংশ নিয়ে থাকেন তাঁরা। কচিকাঁচাদেরও পরনেও থাকে ভারতীয় সাজ।
এসএএইএফ-এর বর্তমান সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘প্রতি বারের মতো উৎসবে এ বারেও ব্যবহার করা হবে ভেষজ আবির, আসলে স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা মাথায় রেখেই এই আয়োজন। প্রতি বছরই আবির আনা হয় লন্ডন কিংবা ভারত থেকে। সবাই একসঙ্গে যখন বলে ওঠেন ‘হোলি হ্যায়’, লাল-হলুদ-গোলাপি আবিরে রাঙা উৎসবের এই ছবিটাই তখন স্কটল্যান্ডের ফ্রেমে লেন্সবন্দি হয়।
আরও পড়ুন: রাজমুকুটের ভার: ব্রিটেনের রানির অভিযোগের জবাবে নেটিজেনরা বললেন...
ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে ক্র্যামন্ড চার্চের পুরোহিত এবং আরো অনেক নামীদামি বাক্তিও উপস্থিত থাকেন এই দিনটিতে। হোলির দিন সকালে ক্র্যামন্ড ক্রিকের হলে বাউল গানের আসর সকলকে মুগ্ধ করে। একতারার সুরে সবাই যেন হারিয়ে যান রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতনর সেই ছাতিম তলায়। পাশাপাশি শিশুরাও রবীন্দ্রসংগীত, অঙ্কন এবং আবৃত্তিতে অংশ নেয়। ইংরেজি বলা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে খুব সুন্দর ভঙ্গিতে বাংলা এবং হিন্দি আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। রবীন্দ্রসংগীত থেকে আধুনিক সে দিন সবকিছুরই অবারিত দ্বার।
সন্ধের পর অবশ্য ‘ডিজে’-র ব্যবস্থা থাকে। তখন আবার পশ্চিমী তালে নাচগানও হয়। দোলের দিন এডিনবরার ক্র্যামন্ড ক্রিকের সন্ধ্যে যেন আরও মায়াবী লাগে।
তবে অনুষ্ঠান, রং আর আনন্দেই বাঙালির উদ্যাপন শেষ না কি! পেটপুজো কি আর বাদ দেওয়া যায়? এডিনবরায় দোল উৎসবের দিন খাওয়াদাওয়ার পর্বও কিন্ত বেশ জমজমাট। লোভনীয় স্কটিশ খাবার ‘ক্যালেন্সিং’ ছাড়াও বেশির ভাগ ফুড স্টল ভর্তি থাকে ভারতীয় খাবারের সারিতে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, আবার পূর্ব থেকে পশ্চিম— সব প্রদেশেরই নামজাদা খাবার এক ছাদের তলায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভোট পায় ‘কলকাতার রসগোল্লা’। একসঙ্গে সবাই পাতপেরে খাওয়াদাওয়ার পরেই থাকে মিষ্টিমুখের পালা। এমন দিনে নবীন-প্রবীনের এই মেলবন্ধনকে সঙ্গে নিয়ে এডিনবরায়র দোল উৎসব যেন জেগে থাকে আবিরে-গুলালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy