পাকিস্তানের গদ্বর বন্দর। — ফাইল চিত্র।
আবার বিদ্রোহী হামলার ঘটনা পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে। বুধবার ওই প্রদেশের বন্দর শহর গ্বদরে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ জানিয়েছে, বন্দর এলাকায় জোরালো বিস্ফোরণের পাশাপাশি এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত ওই খবরে দাবি, গুলির লড়াইয়ে সাত জন হামলাকারী নিহত হয়েছেন।
স্বাধীনতাপন্থী বালোচ সংগঠন বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) হামলার দায় স্বীকার করেছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী চিন নিয়ন্ত্রিত ওই বন্দর এলাকায় বালুচ যোদ্ধাদের সঙ্গে পাক আধাসেনা ফ্রন্টিয়ার কোর ও পুলিশের গুলির লড়াই চলছে। মকরানের বিভাগীয় কমিশনার সঈদ আহমেদ উমরানির দাবি, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, গুলি চালিয়ে বন্দরের পোতাশ্রয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও নিরাপত্তারক্ষীরা পাল্টা হামলা চালিয়ে তাঁদের রুখে দেন।
পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। কিন্তু ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পরে গত কয়েক বছরে সেই লুট আরও বেড়েছে। পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া ওই রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।
ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের শাসকেরা বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে ‘বালোচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ), ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ। এমনকি, সম্প্রতি গ্বদর উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরাও চিনাদের আপত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে দীর্ঘ দিন ধরেই সশস্ত্র লড়াই চালাচ্ছে স্বাধীনতাপন্থী বালোচ সংগঠনগুলি। গত বছর বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় বড় হামলা চালিয়েছিল বিএলএ।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১১ অগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশীয় রাজ্য কালাত। ১২ অগস্ট কালাতের শাসক মির সুলেমান দাউদ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বাধীনতার মেয়াদ ছিল মাত্র সাত মাস। ১৯৪৮-এর ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বালুচিস্তানের মানুষের কাছে সেই দিনটা আজও যন্ত্রণার ‘পরাধীনতা দিবস’! সাত দশক আগে ওই দিনেই পাকিস্তানি সেনা দখল করেছিল বালুচিস্তান। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তৎকালীন শাসককে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে।
বালুচিস্তানের পরবর্তী ইতিহাস ফের নতুন স্বাধীনতার যুদ্ধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর কয়েক হাজার মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার। ‘বালুচিস্তানের গান্ধী’ বলে পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল কাদির বালোচ বছর কয়েক আগে দিল্লি এসে বলেছিলেন, তাঁরা চান ১৯৭১-এ ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবেই পাশে দাঁড়াক বালুচিস্তানের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বালুচিস্তানের উপর পাক নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy