গ্রিসের লাবিরি গ্রামে। ছবি: রয়টার্স।
ভূমধ্যসাগরের যে অংশটা তুরস্ক আর গ্রিসকে জলবিভক্ত করেছে, সেই স্থলরেখা বরাবর দাবানলে পুড়ছে দেশ দু’টি।
অগ্নিকাণ্ডের জেরে তুরস্কে এখনও পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রিসে কারও মৃত্যুর খবর নেই। তবে ধোঁয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে আজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ জন। মাইলের পর মাইল পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে সর্বগ্রাসী আগুন। জ্বলে গিয়েছে প্রচুর বাড়ি, দোকান, বসত এলাকা। এক সময়ের সাজানো জনপদে কার্যত এখন ধূসর ছাইয়ের স্তূপে পরিণত।
ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষা তুরস্ক, গ্রিস, ইটালির এই শান্ত এলাকাগুলি পর্যটকদের কাছে বিশেষ প্রিয়। এ সব এলাকায় আয়ের একটা বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে। গত বছর অতিমারির দাপটে সব কটি জায়গা প্রায় পর্যটকশূন্য ছিল। এ বছর টিকাকরণের পর অল্প অল্প করে সবে দরজা খুলতে শুরু করেছিল ভ্রমণপিপাসুদের জন্য। তার মধ্যে দাবানলের তাণ্ডব শুরু হওয়ায় ভূমধ্যসাগরীয় অর্থনীতি ফের ধাক্কা খেয়েছে।
এজিয়ান সাগরঘেঁষা তুরস্কের বদরামের এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে সমুদ্র। বুধবার থেকে সেই পাহাড়েই আগুন লেগেছে। বদরামের রিসর্টগুলি রাতারাতি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পাহাড় জ্বলছে। অগত্যা সমুদ্রপথে উদ্ধারকারী নৌকায় উঠতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। রাশিয়া জানিয়েছে, অন্তত ১০০ জন রুশ পর্যটক আটকে রয়েছেন বদরামে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানভগত আর মারমারিস শহর দু’টি। মানভগতে আগুনে জখম ৪০০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। মারমারিসে জখমের সংখ্যা দেড়শো পেরিয়েছে। শনিবার পর্যন্ত অন্তত ১০০টি আগুন লাগার খবর মিলেছে তুরস্কে। ঝোড়ো হাওয়া আর ঊর্ধ্বমুখী উষ্ণতা ইন্ধন দিচ্ছে তাতে। তবে বেশির ভাগ আগুনই নিয়ন্ত্রণে এনেছে দমকলবাহিনী। শনিবারেই হেলিকপ্টারে চেপে দাবানল-পীড়িত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ অনুদান এবং কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বলেন, আগুনের সঙ্গে লড়তে হেলিকপ্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬ থেকে ১৩ করা হয়েছে। ইউক্রেন, রাশিয়া, আজ়ারবাইজান, ইরান থেকেও ড্রোন ও বিমান আনানো হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কয়েক হাজার সেনা নামিয়েছে সরকার। এর্ডোয়ান বলেন, একটি জায়গায় খেলাচ্ছলে আগুন লাগিয়েছিল বাচ্চারা। বাকিগুলির ক্ষেত্রে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রিসের গড় তাপমাত্রা এখন ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫৬টি আগুন লেগেছে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। গ্রিসের তৃতীয় জনবহুল শহর পাত্রাস থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরের একটি পাহাড় জ্বলছে। শনিবার জরুরি ভিত্তিতে সেই পাহাড় সংলগ্ন চারটি গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
গ্রিস বা তুরস্কের এই এলাকাগুলিতে প্রতি বছর কমবেশি আগুন লাগার খবর মেলে। কিন্তু এ বছর দাবানলের সংখ্যা আর তীব্রতা চিন্তা বাড়াচ্ছে আবহবিদদের। গ্রিস, তুরস্ক ছাড়াও দাবানলে জ্বলছে ইটালি, বসনিয়া, রোমানিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্সের একাধিক অঞ্চল। আফ্রিকার শুষ্ক হাওয়ার দাপট আর বিশ্ব উষ্ণায়নকেই এর জন্য দায়ী করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy