হোয়াইট হাউসের কাছে প্রতিবাদীদের বিক্ষোভ। ইনসেটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
জর্জ ফ্লয়েডের খুনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-অশান্তি আরও ছড়িয়ে পড়ছে আমেরিকা জুড়ে। বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে গিয়েছেন হোয়াইট হাউসের দোরগোড়া পর্যন্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কিছুক্ষণের জন্য বাঙ্কারেও ঢুকে পড়তে হয়। এখনও বিক্ষোভ চলছে হোয়াইট হাউসের সামনে। চলছে গোটা আমেরিকা জুড়ে। প্রতিদিন নতুন নতুন শহরে ছড়াচ্ছে বিক্ষোভের আগুন।
২৫ মে মিনিয়াপোলিসে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে পা দিয়ে গলা টিপে খুন করা হয়। পুলিশি অত্যাচারের সেই ছবি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়া জুড়ে। সেই ঘটনার পর ছ’দিন কেটে গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসা দূর অস্ত, বরং গোটা মার্কিন মুলুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদের আঁচ। দেশের অন্তত ১৪০টি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদের আগুন। একাধিক শহরে বিক্ষোভ হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছে। অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যুও হয়েছে।
আগে থেকেই হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি এলাকায় প্রতিবাদীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছিল। পরিস্থিতি ঘোরাল হয়ে উঠতে পারে এই আঁচ করে শুক্রবার রাতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষী ও গোয়েন্দারা। ঘণ্টাখানেকের জন্য বাঙ্কারে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পর হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি এলাকায় ফের প্রতিবাদ দেখান বিক্ষোভকারীরা। আগুন জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
হোয়াইট হাউসের উদ্দেশে বিক্ষোভকারীদের মিছিল। ছবি: রয়টার্স
আরও পড়ুন: পিছোতে পারে জি-৭, ভারতকে চান ট্রাম্প
দেশ জুড়েই কোথাও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছে। কোথাও ঘটছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠপাটের মতো ঘটনাও। পুলিশের সঙ্গে মারপিটেও জড়িয়ে পড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া এবং লস অ্যাঞ্জেলসের মতো শহরে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। কোথাও পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ডেট্রয়েট, ইন্ডিয়ানাপোলিসে। সেখানে গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্র। তারা জানাচ্ছে, অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন, শিকাগো, মায়ামি, নিউ ইয়র্কের মতো দেশের অন্তত ৪০টি শহরে জারি করা হয়েছে কার্ফু। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই পথে নেমেছেন মানুষ।
বহু জায়গাতেই এমন ভাবে পুলিশের মুখোমুখি হয়ে প্রতিবাদীদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
অনেকেই বলছেন, বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদে এমন বড়সড় আন্দোলন ১৯৬৮-তে মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যুর পর আর দেখেনি আমেরিকা। সারা দেশ জুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই বহু জায়গায় লকডাউন না মেনে পথে নেমেছেন মানুষ। তাঁরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিও তোয়াক্কা করছেন না। করোনার প্রকোপে কিছু দিন আগেই বহু রাস্তা কার্যত জনমানবহীন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার পর সেখানে পথে নেমেছেন প্রতিবাদীরা। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি জুলুমের অভিযোগ নিয়ে আমেরিকায় ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছিলই। ফ্লয়েডের মৃত্যু তাতে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
আরও পড়ুন: নয়া মানচিত্র পাশে উদ্যোগী নেপাল
দেশের একাধিক জায়গায় এই সুযোগে লুঠপাটের ঘটনাও ঘটেছে। ফিলাডেলফিয়া, স্যান্টা মনিকা, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো কিছু জায়গায় লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিকে অনেকে ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া ‘লন্ডন হিংসা’র সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তত আটটি প্রদেশে নামানো হয়েছে পাঁচ হাজার ‘ন্যাশনাল গার্ড’। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘটনাস্থল মিনিয়াপোলিসের প্রায় সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম বার প্রদেশে ন্যাশনাল গার্ডের পুরো বাহিনীই এখন রাস্তায়। চার হাজার জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, বিক্ষোভ ঠেকাতে দেদার লাঠিচার্জের পাশাপাশি রবার-প্লাস্টিক বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে পুলিশ।
মিনিয়াপোলিস প্রশাসনের দাবি, ঝামেলা পাকাচ্ছে বহিরাগতেরাই। ট্রাম্প দুষছেন অতি-বাম চরমপন্থীদের। অতি-বাম গোষ্ঠী ‘অ্যান্টিফা’-কে ‘জঙ্গি সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, বর্ণবিদ্বেষের আগুন জ্বলছিলই, করোনায় বঞ্চনার ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেকারত্বের জ্বালা বাড়তি ঘি ঢেলেছে আগুনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy