লন্ডনে বুকার পুরস্কারের স্মারক হাতে গীতাঞ্জলি শ্রী। ছবি পিটিআই।
প্রথম ভারতীয় লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেলেন হিন্দি কথাসাহিত্যিক গীতাঞ্জলি শ্রী। তাঁর উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ এ বছর অনুবাদ সাহিত্যের এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে। গীতাঞ্জলির সঙ্গে যৌথ পুরস্কার প্রাপক— উপন্যাসের অনুবাদক ডেজ়ি রকওয়েল।
দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী গীতাঞ্জলি পুরস্কার নিতে এখন লন্ডনে। বললেন, “আমার শৈশব কেটেছে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে। বাবা ছিলেন সরকারি আমলা, তাঁর বদলি লেগেই থাকত। আমার প্রাথমিক শিক্ষা তাই স্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে। হিন্দি ভাষা এবং সাহিত্যের সঙ্গে আমার সংযোগ ছিল খুবই ব্যক্তিগত। মা মূলত হিন্দিটাই বলতেন। সে সময়ে উত্তরপ্রদেশে আমার চারদিকে শুধুই হিন্দি। আজকের ইংরেজি মাধ্যমের কোনও বাচ্চার তুলনায় আমি হিন্দি পত্রিকা অনেক বেশি পড়তাম। চাঁদমামা, পরাগ, নন্দন থেকে রামায়ণ-মহাভারতের গল্প, আরব্য রজনী, কথাসরিৎসাগর— হাতের কাছে যা পেতাম তা-ই পড়তাম, হয়তো আজকালকার বাচ্চাদের মতো ইংরেজি বই পাইনি বলেই। কিন্তু তাতে শাপে বর হয়েছিল।”
গীতাঞ্জলির লেখা মূল হিন্দি উপন্যাসটির নাম ‘রেত সমাধি’। প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। দেশভাগের আবহে গড়ে ওঠা কাহিনির প্রধান চরিত্র ৮০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা, স্বামীর মৃত্যুর পরে যিনি ‘মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে নিজেকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন’। গীতাঞ্জলি বলেন, ‘‘আমি জীবনে অনেক বৃদ্ধাকে দেখেছি যাঁরা গোটা দিন বিছানায় শয্যাশায়ী। আমাদের দিকে পিঠ করে থাকেন তাঁরা। আমার মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে, তাঁরা কি আমাদের দিকেই পিছন ফিরে থাকেন, না জীবনের থেকে।” উপন্যাসটির কেন্দ্রে রয়েছে— মৃত্যু। কিন্তু সেই অমোঘ পরিণতির পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে জীবনকে নতুন ভাবে অন্বেষণের, নতুন করে চিনে নেওয়ার এক অদম্য ইচ্ছে। গত কাল সন্ধেবেলা জয়ী উপন্যাসের নাম ঘোষণা করে বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ফ্র্যাঙ্ক ওয়াইন বলেন, ‘‘উপন্যাসটির মূল সুর সহানুভূতি। কাহিনীর পটভূমিকায় ভারত তথা দেশভাগ থাকলেও নারী ও পুরুষ, প্রবীণ ও নবীন, পরিবার ও দেশ— সব কিছু মিলে এই উপন্যাসে এক বর্ণিল ছবি আঁকা হয়েছে।’’
গীতাঞ্জলির ঝুলিতে রয়েছে পাঁচটি উপন্যাস এবং অসংখ্য ছোটগল্প। তাঁর লেখা আগেও ইংরেজি-সহ বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম কোনও ব্রিটিশ প্রকাশক তাঁর লেখা প্রকাশ করল। বিশ্বের যে কোনও ভাষায় লেখা উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ, যেটি ব্রিটেন বা আয়ারল্যান্ড
থেকে প্রকাশিত হয়েছে, সেটিই একমাত্র এই ‘ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ়’-এর জন্য গ্রাহ্য করা হয়। ‘রেত সমাধি’ হিন্দি তথা কোনও ভারতীয় ভাষায় লেখা প্রথম বই, যেটি এই পুরস্কার পেল। এর আগে শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কোনও নাগরিকই আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পাননি। তবে ইংরেজিতে লেখা উপন্যাসের জন্য বুকার ও ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ভি এস নয়পাল, সলমন রুশদি, অরুন্ধতী রায়, অরবিন্দ আডিগা, কিরণ দেশাইয়ের মতো বেশ কয়েক জন লেখক।
তাঁর এই জয়কে ‘ভারতীয় ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা’ হিসেবে দেখতে চান গীতাঞ্জলি। তিনি বলেন, “যে বই পুরস্কৃত হল, তার পিছনে হিন্দি এবং দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক ভাষা-সাহিত্যের এক দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। এই সব ভাষার বেশ কিছু অসামান্য লেখকের খোঁজ পেলে বিশ্ব সাহিত্যই ধনী হবে। জীবনের ভান্ডার বেড়ে যাবে এই ধরনের আদানপ্রদানে। তবে এটা ঠিক যে, সাহিত্যের জগতে আমেরিকা এবং ব্রিটেন এখন আরও বেশি করে ভারতীয়দের ইংরেজি লেখালিখির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।”
‘রেত সমাধি’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আমেরিকান লেখক-অনুবাদক ডেজ়ি রকওয়েল। গত কাল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করে বুকারের তরফে ফ্র্যাঙ্ক ওয়াইন বলেন, ‘‘রকওয়েল তাঁর ভাষার উৎকর্ষে মূল হিন্দি উপন্যাসটির যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করেছেন।’’ আর রকওয়েলের কথায়, ‘‘লেখক ও অনুবাদকের সম্পর্ক দুই বলরুম ডান্সারের মতো। সঙ্গত ঠিক মতো হলে অপূর্ব শিল্পকীর্তি সৃষ্টি হতে পারে।’’ বেশ কিছু বছর ধরে শুধু মেয়েদের লেখাই অনুবাদ করছেন রকওয়েল। হিন্দি এবং উর্দুতে তুখোড় এই অনুবাদকের কথায়, ‘‘অনেক দিন আগেই ঠিক করেছিলাম, শুধু মেয়েদের লেখাই অনুবাদ করব। পুরুষের ঈপ্সা ও মেয়েদের স্তনের বর্ণনা অনুবাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।’’
তথ্য সহায়তা: অগ্নি রায়
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy