Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫

গ্যাস স্টোভ ফেটে বিস্ফোরণ ট্রেনে, পাক পঞ্জাবে মৃত ৭৪

ভয়াল: আগুনের গ্রাসে সেই ট্রেন। টিভি ফুটেজ থেকে। বৃহস্পতিবার পাক পঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান জেলার কাছে। রয়টার্স

ভয়াল: আগুনের গ্রাসে সেই ট্রেন। টিভি ফুটেজ থেকে। বৃহস্পতিবার পাক পঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান জেলার কাছে। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

সকালের খাবার তৈরি করছিলেন পুণ্যার্থীরা। হঠাৎই দু’টি গ্যাস স্টোভ ফেটে আগুন ধরে যায় কামরায়। চলন্ত ট্রেনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন। দু’কিলোমিটার দৌড়ে ট্রেন দাঁড়িয়ে গেলেও ততক্ষণে ভয়াল আগুন ছড়িয়ে গেছে সব কামরায়। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন বাইরে। আগুনে পুড়ে এবং ঝাঁপাতে গিয়ে আহত হয়ে মারা গিয়েছেন বহু যাত্রী। পাকিস্তানের পূর্ব পঞ্জাব প্রদেশে চলন্ত ট্রেনে এই অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা রাত পর্যন্ত ছুঁয়েছে ৭৪। আহত অন্তত ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

করাচি ও রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে যাতায়াতকারী ‘তেজগম এক্সপ্রেস’ নামে জনপ্রিয় ওই ট্রেনটিতে প্রতি বছরই এই সময়টায় ভিড় জমান তীর্থযাত্রীরা। রেল এবং সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রান্নার সময় গ্যাস স্টোভ ফেটে আগুন লাগে ভোর ছ’টা নাগাদ। ট্রেনের প্রথম তিনটি কামরায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তা। কামরা তিনটি একেবারে ঝলসে গেছে। ওই তিনটি কামরা মিলিয়ে ছিলেন মহিলা-শিশু-সহ ২০০ জনেরও বেশি যাত্রী। ট্রেন তখন রহিম ইয়ার খান জেলার কাছে লিয়াকতপুরে। জায়গাটি লাহৌর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ জানিয়েছেন, ট্রেনের যাত্রীরা সকলেই লাহৌর যাচ্ছিলেন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। রান্না করার সময় দু’টি গ্যাস স্টোভ হঠাৎ ফেটে যায়। যাত্রীদের কাছে থাকা কেরোসিনের দৌলতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্য কামরাতেও।

প্রাথমিক ভাবে এক রক্ষী দেখেছিলেন, ট্রেনে রান্না করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রীর দাবি, ‘‘রক্ষীকে দেখে যাত্রীরা স্টোভ নিভিয়ে দেন। রক্ষী চলে যেতেই ফের তা জ্বালানো হয়।’’ রেলমন্ত্রীর দাবি, আগুন থেকে যত না মৃত্যু, তার থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে যাত্রীরা চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেওয়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীরাও দেখেছেন, অনেকে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এক জখম যাত্রীর কথায়, ‘‘মায়ের সঙ্গে ভাই আর বোনকে নিয়ে উঠেছিলাম ট্রেনে। ভোর ছ’টা নাগাদ হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ। তার পরেই কান্নাকাটি আর চিৎকার। আগুন ছোঁয়ার আগে সবাইকে বললাম, চলো ঝাঁপ দিই। আমি আর ভাই পেরেছি। মা, বোন পারেনি।’’ মাথায় আঘাত পেয়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান লিয়াকতপুর হাসপাতালের সুপার মহম্মদ নাদিম জিয়া।

তীর্থযাত্রীদের সংগঠন অবশ্য রেলমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে বলেছে, সিলিন্ডার ফেটে নয়, ট্রেনে বিস্ফোরণ হয়েছে শর্ট সার্কিট থেকে। কয়েক জন যাত্রীরও অভিযোগ, বুধবার মাঝরাতে ট্রেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের তাঁরা বলেছিলেন, কামরায় শর্ট সার্কিট হয়েছে। পোড়া গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তাতে কান দেননি। তার পরেই বৃহস্পতিবার ভোরে এই বিস্ফোরণ। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ট্রেনটির প্রতিটি কামরার জানলা দাউদাউ করে জ্বলছে।

ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মৃত ও আহতদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। মৃতদের মধ্যে অনেকের দেহ এমন ভাবে জ্বলে গিয়েছে যে শনাক্ত করা কঠিন। তাঁদের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন বেশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। সেনা হেলিকপ্টারে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন উদ্ধারকারী অফিসারেরা। রেলমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, তাঁদের তরফেও গাফিলতি রয়েছে। সিলিন্ডার নিয়ে কী ভাবে যাত্রীরা ট্রেনে উঠলেন, সেটা দেখা উচিত ছিল। এ দেশের সংবাদমাধ্যমের অবশ্য দাবি, দুর্নীতি, অব্যবস্থা এবং বিনিয়োগের অভাবে গোটা দেশের রেল-পরিকাঠামো ধুঁকছে এবং লাফিয়ে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যা। গত জুলাইয়েই একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Tezgam Express Explosion Death Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy