Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

আইএস ডেরায় চক্রী, সালাহ কোথায়

সিরিয়ার জঙ্গি ঘাঁটিতে বসেই প্যারিসে হামলার ছক কষা হয়েছিল, জানালেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভল। এর পিছনে মূল মস্তিষ্ক কে, তাকেও চিহ্নিত করে ফেলেছেন তদন্তকারীরা।

হামলার মূল চক্রী আবাউদ ও পলাতক সালাহ আবদেসলাম

হামলার মূল চক্রী আবাউদ ও পলাতক সালাহ আবদেসলাম

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস ও ব্রাসেলস শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

সিরিয়ার জঙ্গি ঘাঁটিতে বসেই প্যারিসে হামলার ছক কষা হয়েছিল, জানালেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভল। এর পিছনে মূল মস্তিষ্ক কে, তাকেও চিহ্নিত করে ফেলেছেন তদন্তকারীরা। বেলজিয়ামের নাগরিক আবদেলাহমিদ আবাউদ নামের ওই সাতাশ বছরের যুবককের ছবিও এ দিন প্রকাশ করা হয়েছে। ফরাসি প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে সিরিয়াতেই রয়েছে আবাউদ।

শুধু বেলজিয়ামের নাগরিক ওই যুবকই নয়, ফরাসি তদন্তকারীরা খোঁজ করছেন আরও এক জনের। ব্রাসেলসে বসবাসকারী সালাহ আবদেসলাম নামে ওই যুবক হানার পরপরই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে শার্লি এবদোর দফতরে হামলার সময় উঠে এসেছিল কোয়াশি ভাইদের নাম। তদন্তকারীদের দাবি, এ বারে আত্মঘাতী হানাতেও ঠিক একই ভাবে জড়িত রয়েছে অন্য তিন ভাই। তাদের এক জন, ব্রাহিম ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। দ্বিতীয় ভাই মহম্মদকে গ্রেফতার করেছে বেলজিয়াম পুলিশ। এখন তৃতীয় জন, সালাহকেই হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ।

ফরাসি পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সালাহকে হাতেই পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফস্কে পালিয়ে যায় সে। কী ভাবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, শুক্রবার হামলার রাতেই বেলজিয়াম সীমান্তে আটক করা হয় সালাহ-র গাড়ি। সামান্য জিজ্ঞাসাবাদের পরেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জেরে তখনও সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে পুরো তথ্য এসে পৌঁছয়নি সীমান্ত রক্ষীদের হাতে। তাতেই এই কাণ্ড বলে জানায় পুলিশ।

কিন্তু এখনও কেন সে অধরা? নিরুত্তর প্রশাসন। অন্য একটি সূত্র যদিও বলছে, পলাতক জঙ্গির আস্তানা সন্দেহে আজ ব্রাসেলসের একটি বাড়ি বিশাল বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিন্তু হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে সালাহ। তার নামে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বেলজিয়াম প্রশাসন।

এ দিকে ফ্রান্সে, সরকারি তরফে আজ আরও দুই হামলাকারীর নাম জানা গিয়েছে। আহমেদ আল মহম্মদ এবং স্যামি আমিমুর। আহমেদই যে শরণার্থী সেজে গ্রিস হয়ে ফ্রান্সে ঢুকেছিল তা এক প্রকার নিশ্চিত। পরিচয় জানা গিয়েছে বাতাক্লাঁ হলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সামি-রও। বছর আঠাশের এই ফরাসি যুবকের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশের কাছে। বিচারবিভাগীয় হেফাজতেও রাখা হয়। কিন্তু ২০১৩-য় স্যামি জেল ভেঙে পালায় বলে সূত্রের খবর। তার পরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে সে সিরিয়ায় গিয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

তবে স্তাদ দো ফ্রসেঁ স্টেডিয়ামের বাইরে আত্মঘাতী জঙ্গি বিলাল হাদফি যে চলিত বছরের শুরুতেই সিরিয়ায় গিয়েছিল, তা জানাচ্ছেন গোয়েন্দাদেরই একাংশ। আইএসের ডেরায় থাকাকালীন সে অন্তত দু’টি আলাদা নাম ব্যবহার করত বলে সূত্রের খবর।

পতাকার রঙে রেঙেছে আইফেল টাওয়ারও।
সোমবার রয়টার্সের ছবি।

সব মিলিয়ে তাই প্যারিস হামলায় সিরিয়া-যোগের পক্ষেই সওয়াল করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, বেলজিয়ামে থাকা একটি দলকে সক্রিয় করে এবং ফ্রান্স থেকে পাওয়া সমর্থনকে কাজে লাগিয়েই সিরিয়া থেকে এই সংগঠিত হামলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এক দিকে, পশ্চিম এশিয়া থেকে ব্রাসেলস শহরতলি। আর অন্য দিকে, গ্রিসের লেরোস দ্বীপ থেকে প্যারিস ছাড়িয়ে খুব সম্ভবত জার্মানি পর্যন্ত এই জঙ্গি চক্র ছড়িয়েছিল। সূত্রের খবর, সিরিয়া-ইরাকের ডেরা ছেড়ে বেরিয়ে আসা আইএসের এই আন্তর্জাতিক চক্র ভাঙতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরুরি বৈঠকে ডাকতে চলেছে ফ্রান্স।

এরই মধ্যে গত কাল রাত থেকে সিরিয়ায় ফের বিমান হামলা শুরু করেছে ফ্রান্স। যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইএসের বিরুদ্ধে আজ কার্যত যুদ্ধ ঘোষণাই করেছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী। তবে ফ্রান্স যে জঙ্গিদের ছেড়ে কথা বলবে না, তা শুক্রবারের হামলার পর পরই জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। আজ প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘‘শুধু ফ্রান্সে নয়, ইউরোপের অন্য দেশগুলির বিরুদ্ধেও প্যারিসের ধাঁচে সন্ত্রাসের ছক কষা হচ্ছে।’’

প্যারিসে এই ধরনের হামলা যে হতে পারে, ইরাকের দাবি, তা নাকি আগেই তারা জানিয়েছিল ফ্রান্সকে। আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির নির্দেশেই হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। তার পরেও কেন বাড়তি সতর্কতা নেয়নি, প্রশ্ন উঠছে।

একই প্রশ্ন তুলেছে তুরস্কও। আত্মঘাতী হামলায় নিহত জঙ্গি ওমর ইসমাইল মোস্তেফির পরিচিতি গত কালই প্রকাশ করেছে ফরাসি পুলিশ। তুরস্কের দাবি, ফরাসি এই যুবক যে দেশে সন্ত্রাস হামলা চালাতে পারে, তা নিয়ে অন্তত দু’বার প্যারিসকে সতর্ক করেছিল তারা। শেষ বার চলতি বছরের শুরুতই। প্রশাসন তবু তাতে কান দেয়নি বলে অভিযোগ।

এ বার হুমকি ওয়াশিংটনকে

প্যারিসের পর এ বার জঙ্গি-নজরে ওয়াশিংটন! এমনই হুঁশিয়ারি দিয়ে সোমবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ল একটি নতুন ভিডিও। ইসলামিক স্টেটের নাম করে প্রকাশিত এই ভিডিওটিতে ব্যবহৃত হয়েছে প্যারিসের হত্যাকাণ্ড এবং প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের কিছু টেলিভিশন

ফুটেজ। ভিডিওটিতে মুখ না ঢেকেই সামনে এসেছেন এক জঙ্গি। সাবটাইটেলে তাঁর নাম লেখা হয়েছে, আল ঘরিব দ্য আলজিরিয়ান। তাঁর হুমকি, শুধু আমেরিকার রাজধানীই নয়, মার্কিন যৌথ বাহিনীর শরিক প্রতিটি দেশেরই প্যারিসের মতো অবস্থা হবে। এই ভিডিওটি আদৌ আইএসের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন গোয়েন্দারা। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, আইএসের ইরাকি শাখা সংগঠন উইলায়াত কিরকুক এই ভিডিওটি প্রকাশ করে থাকতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy