হেনরি কিসিঞ্জার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রয়াত হলেন আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার। সদ্য ১০০ বছরে পা দিয়েছিলেন প্রবীণ এই কূটনীতিক। কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীরা জানিয়েছেন, কানেকটিকাটে নিজের বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। বার্ধক্যজনিত একাধিক রোগে বেশ কিছু বছর ধরেই ভুগছিলেন কিসিঞ্জার। তাঁর মৃত্যুতে আমেরিকার কূটনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায় সমাপ্ত হল বলে মনে করছেন অনেকে।
আমেরিকার দুই প্রেসিডেন্টের আমলে বিদেশ সচিব হিসাবে কাজ করেছেন কিসিঞ্জার। প্রথমে রিচার্ড নিক্সনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনে, পরে জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে। মনে করা হয় যে, বহু আন্তর্জাতিক সঙ্কটে আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থানের নেপথ্যে মূলত কিসিঞ্জারেরই হাত ছিল। বিদেশ সচিব হিসাবে ১৯৭৩ সালে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে হওয়া ইয়ম কিংপুরের যুদ্ধ থামাতে তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন কেউ কেউ। আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর প্যারিস শান্তি চুক্তির অন্যতম স্থপতি হিসাবেও কেউ কেউ তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করেন।
তবে একাধিক বিতর্কেও জড়িয়েছে কিসিঞ্জারের নাম। যেমন মানবাধিকারের প্রশ্নে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরিবেশ বজায় রাখা, চিলির মতো বেশ কিছু দেশে স্বৈরাচারী শাসকদের মদত দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন শতায়ু এই কূটনীতিক। ১৯৬৯ সালে নিক্সন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে কিসিঞ্জার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিসিঞ্জারের ভূমিকা নানা কারণ সমালোচনার মুখে পড়েছিল। নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল ওয়াশিংটনের।
সেই সময় নিক্সনের দূত হয়ে কিসিঞ্জার ভারতেও এসেছিলেন। তদানীন্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। সেই বৈঠক ভারতের পক্ষে খুব ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, সে সময় আমেরিকা এবং পাকিস্তান পরস্পরের ঘোষিত মিত্র ছিল। ভারত-পাক বিবাদে আমেরিকা সে সময় পাকিস্তানের পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) সাধারণ মানুষের উপর পাক সেনা যে অত্যাচার চালাচ্ছিল, তার বিরুদ্ধেও আমেরিকা সে সময় কিছুতেই মুখ খোলেনি। সেই সময় কিসিঞ্জারের উগ্র ‘ভারত-বিরোধিতা’ নিয়েও চর্চা শুরু হয়। পরে অবশ্য এই নিয়ে একাধিক সাক্ষাৎকারে তাঁর উপর নানাবিধ ‘চাপ’ থাকার কথা বলেছিলেন কিসিঞ্জার।
১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্ম কিসিঞ্জারের। নাৎসি শাসনে ভীত কিসিঞ্জারের পরিবার ১৯৩৮ সালে আমেরিকায় চলে আসে। ১৯৪৩ সালে কিসিঞ্জার আমেরিকার নাগরিকত্ব পান এবং তিন বছরের পর সে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে সেনার গোয়েন্দা শাখাতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পিএইচি করার পর এই দীর্ঘ দিন আমেরিকার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে প্রথম খ্যাতি পান কিসিঞ্জার। তার পর ধাপে ধাপে বিদেশ সচিব হন তিনি। বিতর্ককে সঙ্গী করেই ১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy