Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাবা কারাবন্দি, কাঁধে একশো কেজি গম নিয়ে পাকদণ্ডি বেয়ে ওঠা সেই ছেলেই আজ রাষ্ট্রপ্রধান

ছয়ের দশকের শেষে চিনে শুরু হল মাও জে দংয়ের ‘ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড মুভমেন্ট’। তরুণ শি চিনফিং-কে পাঠিয়ে দেওয়া হল শানজি প্রদেশের ইয়ানচুয়ান গ্রামে। সেখানে রোজ কাঁধে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের গমের দানা নিয়ে পাড়ি দিতে হত পাহাড়ি পাকদণ্ডি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৫২
Share: Save:
০১ ১৯
তাঁর বাবা ছিলেন মাও জে দং-য়ের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তাতে কোনও বাড়তি সুবিধে হয়নি শি চিনফিংয়ের। কার্যত শূন্য থেকে শুরু করে নিজের যোগ্যতায় আজ তিনি চিনের প্রেসিডেন্ট।

তাঁর বাবা ছিলেন মাও জে দং-য়ের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তাতে কোনও বাড়তি সুবিধে হয়নি শি চিনফিংয়ের। কার্যত শূন্য থেকে শুরু করে নিজের যোগ্যতায় আজ তিনি চিনের প্রেসিডেন্ট।

০২ ১৯
চিনফিংয়ের জন্ম বেজিংয়ে। ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন। তাঁর বাবা জি ঝোংজান এবং মা কি জিন, দু’জনেই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য।

চিনফিংয়ের জন্ম বেজিংয়ে। ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন। তাঁর বাবা জি ঝোংজান এবং মা কি জিন, দু’জনেই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য।

০৩ ১৯
১৯৪৯ সালে মাও জে দং-য়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এরপর দলের তথা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন চিনফিংয়ের বাবা, জি ঝোংজান।

১৯৪৯ সালে মাও জে দং-য়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এরপর দলের তথা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন চিনফিংয়ের বাবা, জি ঝোংজান।

০৪ ১৯
তবে দল এবং সরকারের সঙ্গে বারবার মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঝোংজান। তার মাশুলও তাঁকে দিতে হয়। ১৯৬৩ সালে তাঁকে দল থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হেনান প্রদেশে, একটি কারখানায় কাজের জন্য।

তবে দল এবং সরকারের সঙ্গে বারবার মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঝোংজান। তার মাশুলও তাঁকে দিতে হয়। ১৯৬৩ সালে তাঁকে দল থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হেনান প্রদেশে, একটি কারখানায় কাজের জন্য।

০৫ ১৯
১৯৬৬ সালে গোটা চিন উত্তাল ‘গ্রেট প্রোলেটারিয়ান কালচারাল রেভোলিউশন’-এ। ব্যাহত হয় চিনফিংয়ের পড়াশোনা। পাশাপাশি, কয়েক বছরের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাবার সঙ্গে যোগাযোগ।

১৯৬৬ সালে গোটা চিন উত্তাল ‘গ্রেট প্রোলেটারিয়ান কালচারাল রেভোলিউশন’-এ। ব্যাহত হয় চিনফিংয়ের পড়াশোনা। পাশাপাশি, কয়েক বছরের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাবার সঙ্গে যোগাযোগ।

০৬ ১৯
‘কালচারাল রেভোলিউশন’-এর বিরোধিতা করায় বন্দি করা হয় ঝোংজানকে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২, এই চার বছর জি ঝোংজান ছিলেন পরিবারবিচ্ছিন্ন এবং কারাবন্দি।

‘কালচারাল রেভোলিউশন’-এর বিরোধিতা করায় বন্দি করা হয় ঝোংজানকে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২, এই চার বছর জি ঝোংজান ছিলেন পরিবারবিচ্ছিন্ন এবং কারাবন্দি।

০৭ ১৯
ছয়ের দশকের শেষে চিনে শুরু হল মাও জে দংয়ের ‘ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড মুভমেন্ট’। তরুণ শি চিনফিং-কে পাঠিয়ে দেওয়া হল শানজি প্রদেশের ইয়ানচুয়ান গ্রামে। সেখানে রোজ কাঁধে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের গমের দানা নিয়ে পাড়ি দিতে হত পাহাড়ি পাকদণ্ডি।

ছয়ের দশকের শেষে চিনে শুরু হল মাও জে দংয়ের ‘ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড মুভমেন্ট’। তরুণ শি চিনফিং-কে পাঠিয়ে দেওয়া হল শানজি প্রদেশের ইয়ানচুয়ান গ্রামে। সেখানে রোজ কাঁধে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের গমের দানা নিয়ে পাড়ি দিতে হত পাহাড়ি পাকদণ্ডি।

০৮ ১৯
গ্রামের জীবন ভাল না লাগায় চিনফিং পালিয়ে গেলেন বেজিংয়ে। আবার তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামাঞ্চলেই। সে সময় ক্যাম্পে গিয়ে পরিখা কাটার কাজও করতে হয়েছে তাঁকে।

গ্রামের জীবন ভাল না লাগায় চিনফিং পালিয়ে গেলেন বেজিংয়ে। আবার তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামাঞ্চলেই। সে সময় ক্যাম্পে গিয়ে পরিখা কাটার কাজও করতে হয়েছে তাঁকে।

০৯ ১৯
ঝঞ্ঝা বিধ্বস্ত শৈশব ও কৈশোর হলেও উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন চিনফিং। বেজিং-এর শিঙ্ঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উত্তীর্ণ হন। তাঁর পরিচয় ছিল কর্মী-কৃষক-সৈন্য-ছাত্র।

ঝঞ্ঝা বিধ্বস্ত শৈশব ও কৈশোর হলেও উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন চিনফিং। বেজিং-এর শিঙ্ঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উত্তীর্ণ হন। তাঁর পরিচয় ছিল কর্মী-কৃষক-সৈন্য-ছাত্র।

১০ ১৯
১৯৭১ সালে চিনফিং কমিউনিস্ট পার্টির যুবশাখায় যোগ দেন। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি চেষ্টা শুরু করেন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের। সাফল্য আসে দশম বারের প্রচেষ্টায়।

১৯৭১ সালে চিনফিং কমিউনিস্ট পার্টির যুবশাখায় যোগ দেন। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি চেষ্টা শুরু করেন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের। সাফল্য আসে দশম বারের প্রচেষ্টায়।

১১ ১৯
কয়েক বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরে বাড়ল দায়িত্বভার। ১৯৮২ সালে ডেপুটি পার্টি সেক্রেটারি করে তাঁকে পাঠানো হল হেবেই প্রদেশের ঝেংডিং গ্রামে।

কয়েক বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরে বাড়ল দায়িত্বভার। ১৯৮২ সালে ডেপুটি পার্টি সেক্রেটারি করে তাঁকে পাঠানো হল হেবেই প্রদেশের ঝেংডিং গ্রামে।

১২ ১৯
১৯৯৯ সালে তাঁর পদোন্নতি হয় ফুজিয়ান প্রদেশের ভাইস গভর্নর পদে। এক বছর পরে তিনি ওই প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান।

১৯৯৯ সালে তাঁর পদোন্নতি হয় ফুজিয়ান প্রদেশের ভাইস গভর্নর পদে। এক বছর পরে তিনি ওই প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান।

১৩ ১৯
এরপর তিনি ঝেঝিয়াং প্রদেশের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি একই দায়িত্বে ছিলেন সাংহাই প্রদেশেও।

এরপর তিনি ঝেঝিয়াং প্রদেশের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি একই দায়িত্বে ছিলেন সাংহাই প্রদেশেও।

১৪ ১৯
২০০৭ সালে সপ্তদশ পার্টি কংগ্রেসে তিনি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হন। তার পরের বছরই তিনি চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার চার বছর পরে তিনি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি পদের দায়িত্বে এবং ২০১৩ সালে চিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০৭ সালে সপ্তদশ পার্টি কংগ্রেসে তিনি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হন। তার পরের বছরই তিনি চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার চার বছর পরে তিনি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি পদের দায়িত্বে এবং ২০১৩ সালে চিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৫ ১৯
শি চিনফিংয়ের প্রথম স্ত্রী ছিলেন আমেরিকায় চিনের রাষ্ট্রদূত কে হুয়ার মেয়ে কে লিংলিং। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৭৯ সালে। তবে সেই দাম্পত্য স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। তিন বছর পরে ১৯৮২ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

শি চিনফিংয়ের প্রথম স্ত্রী ছিলেন আমেরিকায় চিনের রাষ্ট্রদূত কে হুয়ার মেয়ে কে লিংলিং। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৭৯ সালে। তবে সেই দাম্পত্য স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। তিন বছর পরে ১৯৮২ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

১৬ ১৯
প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চিনফিং। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পেং লিইউয়ান চিনের নামী লোকসঙ্গীতশিল্পী। বিয়ের পরে দু’জনেই ব্যস্ত নিজেদের কাজের জগতে। তাঁদের একমাত্র মেয়ে শি মিংজে ২০১৫ সালে স্নাতক হন হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চিনফিং। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পেং লিইউয়ান চিনের নামী লোকসঙ্গীতশিল্পী। বিয়ের পরে দু’জনেই ব্যস্ত নিজেদের কাজের জগতে। তাঁদের একমাত্র মেয়ে শি মিংজে ২০১৫ সালে স্নাতক হন হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

১৭ ১৯
কমিউনিস্ট চিনফিং চিনের প্রাচীন দার্শনিক ভাবধারাতেও উদ্বুদ্ধ। কম হলেও, তাঁর বক্তব্যে শোনা যায় প্রাচীন চিনের দার্শনিক মতবাদ।

কমিউনিস্ট চিনফিং চিনের প্রাচীন দার্শনিক ভাবধারাতেও উদ্বুদ্ধ। কম হলেও, তাঁর বক্তব্যে শোনা যায় প্রাচীন চিনের দার্শনিক মতবাদ।

১৮ ১৯
দিনভর ব্যস্ততার মাঝে সময় পেলেই এই রাষ্ট্রপ্রধান চোখ রাখেন বইয়ের পাতায়। রুশ সাহিত্যের ভক্ত চিনফিংয়ের প্রিয় সাহিত্যিক নিকোলাই গোগোল। তিনি বলেন, দেশবাসী তাঁকে এই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তিনি চিনের মানুষকে নিয়ে যেতে চান সবার উপরে।

দিনভর ব্যস্ততার মাঝে সময় পেলেই এই রাষ্ট্রপ্রধান চোখ রাখেন বইয়ের পাতায়। রুশ সাহিত্যের ভক্ত চিনফিংয়ের প্রিয় সাহিত্যিক নিকোলাই গোগোল। তিনি বলেন, দেশবাসী তাঁকে এই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তিনি চিনের মানুষকে নিয়ে যেতে চান সবার উপরে।

১৯ ১৯
২০১৭ সালে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মানুষের আখ্যা দেয়। ২০১৮ সালে ‘ফোর্বস’ পত্রিকার বিচারে তিনিই বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর আগে এই তকমা টানা পাঁচ বছর ধরে পেয়ে এসেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

২০১৭ সালে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মানুষের আখ্যা দেয়। ২০১৮ সালে ‘ফোর্বস’ পত্রিকার বিচারে তিনিই বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর আগে এই তকমা টানা পাঁচ বছর ধরে পেয়ে এসেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy