গ্রাবোভোয় নিহত শিশুদের আত্মার শান্তি কামনায় চিফোল বিমানবন্দর বাইরে ফুল ও টেডি বিয়ার। ছবি: রয়টার্স
এক রাতেই যেন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে বছর দশেকের ছেলেটা। ঘুরে ফিরে এসে দাদুকে বলছে, “তোমার ছেলে চলে গিয়েছে, তো কী হয়েছে। আমি তো আছি!”
এমএইচ১৭ বিমানের স্টুয়ার্ড ছিলেন ছোট্ট ছেলেটার বাবা সঞ্জিদ সিংহ সাঁধু। মা-দাদু-ঠাকুমার মুখে সে শুনেছে, বাবা যে বিমানে ছিলেন, সেটা জঙ্গি হানায় ভেঙে পড়েছে। সব যাত্রীই মারা গিয়েছেন। টিভিতেও দেখেছে সে, বিমানের ভগ্নস্তূপ, ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা দেহ। খুদে যে ঠিক কী বুঝেছে, দাদু জানেন না। ৭১ বছরের বৃদ্ধ শুধু জানালেন, নাতি তাঁকে বারবারেই বলছে, “আমিই এখন তোমার ছেলে। এই বাড়ির কর্তা।”
প্রায় একই ছবি কুয়ালা লামপুর শহরের অদূরে রিনাদের বাড়িতেও। এমএইচ১৭-তে দেশে ফিরছিলেন এই বাড়ির মেয়ে রিনা। টালির চালওলা বাড়িটায় যে লোক রয়েছে, বোঝা যায় শুধু টিভির শব্দে। অধীর অপেক্ষায় বাড়ির সকলে, যদি কোনও খবর মেলে তাঁদের মেয়েটার। যদি জানতে পারেন, কবে তাঁরা রিনার দেহ ফিরে পাবেন।
আজলিন ইয়াকুব অবশ্য আশায় বুক বেঁধে। “বোনের দেহ নিশ্চয়ই ফিরে পাব। এই আশাতেই রয়েছি...। আজরিনের শেষকৃত্যটা অন্তত ঠিকমতো হোক”, বললেন মাঝবয়সী মহিলা। জানালেন, এমএইচ৩৭০-র কথা তাঁর বারবার মনে পড়ছে। অতগুলো লোকের কোনও শেষকৃত্য হয়নি। তাঁর কথায়, “প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে ফুল রেখে আসার জায়গাটুকু পাননি ওঁরা। কোথায়ই বা রাখবেন! কবরই তো দেওয়া যায়নি!”
আজরিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর স্বামী মাটিতে বসে দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে খেলছেন। বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছেন। তাঁদেরই এক জন বললেন, “ছ’বছরের ছেলেটা শুধুই বলছে, ‘মাম্মি কাজে গিয়েছে’।” একই অবস্থা শাহিদান কাসিমের। তাঁর বোন ডোরা এমএইচ১৭-র চিফ অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন। ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, “তিন দিন হয়ে গিয়েছে। অনেক তো হল! যা হয়েছে, মনকে বুঝিয়েছি। মেনেও নিয়েছি। কিন্তু কবে দেহাবশেষ ফিরে পাব?”
মালয়েশিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে ইউরোপের দেশগুলোতেও একই পরিস্থিতি। এক সাংবাদিককে সামনে পেয়ে গর্জে উঠলেন ব্রিটেনের বাসিন্দা হুগো হোর। তাঁর ভাই ওই বিমানে ছিলেন। বললেন, “হচ্ছেটা কী! বিদ্রোহীরা ঘটনাস্থল থেকে দেহাবশেষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা ওগুলো নিয়ে কী করবে কে জানে!” ভাইপোর দেহ আদৌ হাতে পাবেন কি না, সে আশঙ্কায় ব্রিটেনের জর্ডন উইদারস-ও। তাঁর কথায়, “যা দেখছি-শুনছি, দেহগুলোয় ইতিমধ্যেই পচন ধরেছে। দেহ পেলেও, কী পাব কে জানে!” আজই আবার একটি ডাচ দৈনিকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এক সন্তানহারা বাবা। খোলা চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন, “রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ও ইউক্রেন সরকার আমার একমাত্র সন্তানকে খুন করার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমার তরতাজা মেয়েটাকে মেরে নিশ্চয়ই আপনারা গর্ববোধ করছেন!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy