Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

তিন ডিমেই তিন শতক, প্রয়াত ঊনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র প্রতিনিধি এমা

চোখের সামনে দু-দু’টো বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে দেখেছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারিয়েছিলেন প্রেমিককেও। তার পর বিয়ে হলেও সুখের হয়নি সে সম্পর্ক। তাঁর জীবদ্দশায় ৯০ বারেরও বেশি সরকার বদল হয় ইতালিতে।গত ৯০ বছর ধরে প্রতিদিন খেতেন তিনটে করে ডিম।

এমা মোরানো

এমা মোরানো

সংবাদ সংস্থা
রোম শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:২৯
Share: Save:

চোখের সামনে দু-দু’টো বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে দেখেছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারিয়েছিলেন প্রেমিককেও। তার পর বিয়ে হলেও সুখের হয়নি সে সম্পর্ক। তাঁর জীবদ্দশায় ৯০ বারেরও বেশি সরকার বদল হয় ইতালিতে। গত ৯০ বছর ধরে প্রতিদিন খেতেন তিনটে করে ডিম। দু’টো কাঁচা। একটা ভাজা। ১১৭ বছর পাঁচ মাসে থামল তিন শতক ছোঁয়া সেই দীর্ঘ জীবন। ইতালিতে মৃত্যু হল ঊনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র প্রতিনিধি এমা মোরানোর।

এমার চিকিৎসক কার্লো বাভা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে ইতালির ভের্বানিয়ায় তাঁর দু’কামরার ছোট্ট বাড়িতে মৃত্যু হয় এমার। গত ২০ বছর ধরে ওই বাড়িরই বাসিন্দা তিনি। জন্ম উত্তর ইতালির চিভিয়াস্কোতে। ১৮৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর। আট ভাইবোনের মধ্যে এমাই ছিলেন সব চেয়ে বড়। ভাইবোনদের মধ্যে সব থেকে বেশি বেঁচেওছেন তিনি। ২০ বছর বয়সে ধরা পড়ে রক্তাল্পতা। তখনই চিকিৎসকরা নিদান দেন, প্রতিদিন খেতে হবে দু’টো করে কাঁচা ডিম। সেই থেকে ডিমে অগাধ ভরসা এমার। অন্তত ২৭ বছর ধরে সেই নিয়মের নড়চড় হতে দেখেননি চিকিৎসক বাভা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যখন ওঁকে প্রথম দেখি তখন থেকে তিনটে করে ডিম খেতেন দিনে। সকালে দু’টো কাঁচা। আর দুপুরে একটার ওমলেট। আর রাতে মুরগির মাংস। শাকপাতা বা ফল বিশেষ খেতে দেখিনি কখনও।’’

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যু হয় এমার প্রেমিকের। তার পর আর বিয়ের ইচ্ছে ছিল না ছিটেফোঁটাও। ২৬ বছর বয়সে তাঁকে রীতিমতো জোর করেই বিয়ে করেন এক জন। বিয়ের পর শুরু হয় অত্যাচার। সাত মাসের সন্তানের মৃত্যুর পর এমা ইতি টানেন সেই বিবাহিত জীবনে। ১৯৩৮ সালে স্বামীকে ছেড়ে চলে আসেন তিনি। তার পর আর বিয়ে করেননি। কেন? তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাইনি কেউ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায় দিয়ে কিছু করাক।’’ ১৯৭৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদও হয়নি তাঁদের। দীর্ঘ ৮০ বছর একাই কাটিয়েছেন।

শেষ কুড়ি বছর থেকেছেন ভের্বানিয়ায়, লেক মাজোর-এর তীরে তাঁর ছোট্ট বাড়িটিতে। ৭৫ বছর বয়সে একটি বোর্ডিং স্কুলে রান্নার কাজ থেকে অবসর নেন। আট ভাইবোনের মধ্যে সব চেয়ে দীর্ঘায়ু ছিলেন তিনিই। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে আত্মীয়-পরিজনের সংখ্যা। কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা থুত্থুড়ে বুড়ির বন্ধু-বান্ধবই বা তখন কোথায়!

বেঁচে থাকা গুটি কয়েক পরিজন মিলেই গত বছর শেষ জন্মদিন পালন করেন এমার। কথায় কথায় উঠে আসে তাঁর লম্বা জীবনের গল্প। দুই বিশ্বযুদ্ধ, পাটের কারখানায় তাঁর ব্যাগ বানানোর দিনগুলো, অত্যাচারিত হয়ে স্বামীর থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত— সব। এমা জানিয়েছেন, দীর্ঘ জীবনের বীজ তাঁর জিনেই। তাঁর মা, মাসি এবং পরিবারের আরও অনেকেই ৯০ পেরিয়েছিলেন। তাঁর এক বোন আঞ্জেলা মোরানো মারা যান ১০২ বছর বয়সে। গত মে মাসে নিউ ইয়র্কে সুসানা মুশাট জোনসের মৃত্যুর পর এমাই ছিলেন সরকারি ভাবে প্রবীণতমা। তাঁর মৃত্যুর পর রইলেন জামাইকার ভায়োলেট ব্রাউন। এমার থেকে পাঁচ মাসের ছোট তিনি।

চিকিৎসক কার্লো জানিয়েছেন, গত শুক্রবারও এমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। বাকি দিনগুলোর মতোই তিনি হাতটা জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ডাক্তারকে। এর পর ফের তাঁদের দেখা হয় শনিবার। বাড়ির আরাম কেদারায় তখন চিরঘুমে এমা।

অন্য বিষয়গুলি:

World's oldest person Emma Morano Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy