—প্রতীকী চিত্র।
এক মাস ধরে ভোট চলছে ভারতে। চলবে আরও সপ্তাহ দু’য়েক। দূরে থাকলেও নানা সংবাদ চ্যানেল আর ইউটিউবারদের মাধ্যমে আমরা তার আঁচ দিব্বি টের পারছি।
আজকে বলি, ভারত থেকে অনেক দূরে, আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম ভাগের একটি ফ্রাঙ্কোফোন দেশ কোত্ দিভোয়ারের ভোটের গল্প। ‘কোত্ দিভোয়ার’— ফরাসি এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘হস্তিদন্তের উপকূল’। ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে এই উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক হারে হাতির দাঁতের ব্যবসা হত। তাই থেকেই দেশের এই নাম।
এ দেশে ২১ বছর ধরে রয়েছি। ফলে এখানকার সরকার, নির্বাচন প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। কোত্ দিভোয়ার একটি গণতান্ত্রিক, প্রজাতান্ত্রিক দেশ। প্রেসিডেন্ট এখানকার রাষ্ট্রপ্রধান। পাঁচ বছরের জন্যে নির্বাচিত হন তিনি। তা ছাড়া, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আছেন ২৫৫ জন। সকলেই পাঁচ বছরের জন্যে সরাসরি নির্বাচিত হন। এখানে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং এই তিনটি দল থেকেই কোনও না কোনও সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া, আরও কয়েকটি ছোটখাটো রাজনৈতিক দলও আছে। কিন্তু তাদের ওই ৫ বছরে তেমন কোনও সরাসরি ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ থাকে না।
এ বার বলি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কথা। এই দেশে দু’টি পর্যায়ে নির্বাচন হয়। প্রথমটি প্রেসিডেন্ট পদের জন্যে সরাসরি নির্বাচন। প্রার্থীদের মধ্যে যদি কেউ ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পান, তা হলে তো মিটেই গেল। যদি তা না হয়, তখন দ্বিতীয় বার ভোট হয় সব থেকে বেশি ভোট যে দু’জন প্রার্থী পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেলে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যে উপযুক্ত প্রার্থী বেছে নেন।
দ্বিতীয় নির্বাচনটি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির। যেখানে ২৫৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়। যদি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কোনও কারণে হঠাৎ শূন্যপদ তৈরি হয়, তা হলে তা তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হয়।
ভোট দেওয়ার জন্যে ২১ বছর বয়স হতে হবে। যদি কেউ বিদেশে থাকেন হন, তিনি সে দেশের আইভোরিয়ান দূতাবাসে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তবে অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত থাকলে বা মানসিক স্থিতিশীলতা না থাকলে এ দেশে ভোটাধিকার নেই।
প্রার্থী হওয়ার জন্য আইভোরিয়ান এবং ২৫ বছর বয়স হতে হবে। তা ছাড়া, অবশ্যই ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হবে। প্রার্থী স্বাধীন ভাবে বা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হওয়ার অন্তত ২১ দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। মনোনয়নের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ধার্যমূল্য জমা দিতে হয়, অন্ততপক্ষে ১০ শতাংশ ভোট পেলে সেই ধার্যমূল্য ফেরত দেওয়া হয় প্রার্থীকে। আমাদের দেশে যেমন জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, এই নিয়ম সে রকমই।
এ বার বলি কারা প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রধান বিচারক, সহকারী বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, সরকারি উচ্চপদাধিকারী, শিক্ষা-শ্রম-সামাজিক খাতের আধিকারিক, অর্থনীতি-সমাজ পারিষদ, যে সরকারি পদগুলি নিজস্ব নির্বাচন বা নিয়োগ দ্বারা হয়, কোনও আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক লগ্নিকারী সংস্থার আধিকারিক ও কোনও জাতীয় উদ্যোগ বা রাষ্ট্রীয় ছাড় থেকে উপকৃত ব্যক্তি কোনও ভাবেই প্রাথী হতে পারবেন না। যদি না তাঁরা সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন।
এখানে ভোটের জন্যে কোনও দেওয়াল লিখন নেই। মাইক বাজিয়ে, বাড়ি বা রাস্তায় ঘুরে প্রচার করা হয় না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দফতরের দেওয়ালে লিখতে পারেন। এ ছাড়া প্রত্যেক প্রার্থী নিজের এলাকায় বিল বোর্ড নিয়ে নিজেদের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। সপ্তাহান্তে কোনও পার্ক বা ফুটবল মাঠে সভা করতে পারেন। আর এই সব সভার পরে সকলের জন্যে টুকটাক খাবার, পানীয়, এ সবের ব্যবস্থাও থাকে। দ্রোগবা, ইয়াইয়া, কালু-র দেশের তরুণ ফুটবলারদের জন্যে অবশ্যই থাকে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। আর থাকে প্রার্থীর নাম ও ছবি দেওয়া টি-শার্ট, টুপি, ব্যাগ, ছাতা— এ সব উপহার। আসলে এগুলোও তো এক ধরনের বিজ্ঞাপন ও প্রচারের অঙ্গ।
ভোটের দিন এখানে ছুটি থাকে। কারণ প্রতিটি পাড়ার সরকারি স্কুলগুলিতে ভোটদান কেন্দ্র করা হয়। আর যে সব গ্রামের লোকেরা শহরে থাকেন কাজের সুবাদে, তাঁরাও যাতে যে যাঁর গ্রামে গিয়ে নিজের ভোটটি দিতে পারেন, সে দিকে নজর রেখেই সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
কোত্ দিভোয়ারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলাসান দ্রামান উয়াতারা পরপর তিন বার নির্বাচিত হয়ে কাজ করে চলেছেন। ২০২৫-এর অক্টোবরে পরবর্তী নির্বাচন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy