Advertisement
E-Paper

একই দিনে ছ’বার ভূমিকম্প! মায়ানমারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৪, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সাহায্য চাইছে প্রশাসন

মায়ানমারের মন্দালয় শহরে ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। সেখানে এখনও আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। এক নদীর উপর ভেঙে পড়েছে একটি সেতু। সে দেশের সরকার সব দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে।

মধ্য মায়ানমারে ভেঙে পড়েছে একটি বহুতল। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

মধ্য মায়ানমারে ভেঙে পড়েছে একটি বহুতল। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ছবি: রয়টার্স

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ২১:২২
Share
Save

একই দিনে পর পর ছ’বার কেঁপে উঠেছে মায়ানমার। শুক্রবার প্রতিবেশী সেই দেশে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৭। আর তার জেরেই প্রায় দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে দেশের বড় অংশ। সেখানে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৪৪। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৩২ জন। প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন সেনা-সরকারের প্রধান মিন আং হলাইং। সকল দেশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। কম্পনের আঁচ পড়েছে তাইল্যান্ডেও। সেখানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে আটকে পড়েন ১১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। তবে মায়ানমারে বিপর্যয় অনেক বেশি।

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মায়ানমার। তার মধ্যে এই ভূমিকম্প বিপত্তি বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী নেপিদ। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি হয় ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। প্রথমটির উৎস মায়ানমারের বর্মার ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। তার পর আরও পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছে মায়ানমারে। চলেছে আফটারশক। তার জেরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে মায়ানমারের বিস্তৃত এলাকার বাড়িঘর, স্মৃতিসৌধ, এমনকি, মসজিদও। উপড়ে গিয়েছে শয়ে শয়ে গাছ। ফাটল ধরেছে রাস্তায়, সেতুতে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইলের টাওয়ার। বহু এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। তবে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মায়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির ছবি এখনও স্পষ্ট নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বহু এলাকায় কম্পনের প্রভাব কতটা পড়েছে, সে বিষয়ে কোনও খবরই নেই প্রশাসনের কাছে। আমেরিকার সরকারি সংস্থার হুঁশিয়ারি, মায়ানমারে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কম্পনের মাত্রা দেখেই এমনটা মনে করছে তারা। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও হতে চলেছে বিপুল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রসের আশঙ্কা, মায়ানমারের বড় বাঁধগুলিতেও কম্পনের জেরে ফাটল ধরতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কাও থাকবে।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মায়নমারের রাজধানী নেপিদের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এক হাসপাতালের জরুরি বিভাগই ভূমিকম্পের জেরে ভেঙে পড়েছে (আনন্দবাজার ডট কম সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। চিকিৎসকেরা হাসপাতালের বাইরে এসে রোগীদের চিকিৎসা করছেন।

মায়ানমারে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে মান্দালয় শহরের দূরত্ব মাত্র ১৭.২ কিলোমিটার। ওই শহরে ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। সেখানে এখনও আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। ইর্‌রাওয়াড্ডি নদীর উপর ভেঙে পড়েছে ৯০ বছরের পুরনো আভা সেতু। ইয়াঙ্গন-মান্দালয় এক্সপ্রেসওয়েতেও একটি সেতু এবং একটি রেল সেতু ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের ঐতিহাসিক প্রাসাদও ভেঙে পড়েছে। রেড ক্রসের আধিকারিক মারি মানরিক জানিয়েছেন, মায়ানমারে ভূমিকম্পে সড়ক, সেতু, সরকারি ভবনের মতো পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। তাঁদের উদ্বেগ এখন মায়নামারের বাঁধগুলি নিয়ে। সেগুলি ভেঙে পড়লে বিপর্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে দেশের সরকার সব দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে যে কোনও রকম সাহায্য করতে প্রস্তত নয়াদিল্লি।

শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তর তাইল্যান্ডেও। রাজধানী ব্যাঙ্ককে মেট্রো এবং রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পায়েটংটার্ন শিনাবাত্রার শুক্রবার ফুকেতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সরকারি সফর তিনি বাতিল করে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তার পরেই তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়। ওই শহরে একটি নির্মীয়মান বাড়ি ভেঙে পড়ে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

চিনের ইউনান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে কম্পন। চিনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯। তবে চিনে কেউ হতাহত হননি। শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে কলকাতা, মণিপুরের একাংশে। সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৪। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রামও ভূমিকম্পে কেঁপেছে। আফটারশকের জেরে কেঁপেছে ভিয়েতনামও।

ভূমিকম্প অবশ্য মায়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সে দেশে সাত বা তার বেশি মাত্রার ছ’টি ভূমিকম্প হয়েছিল। মায়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে সাগাইং চ্যুতিরেখা। প্রায়ই ভূ-আন্দোলনের কারণে ভূমিকম্প হয় ভারতের এই পড়শি দেশে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}