কন্যার স্কুলের অডিটোরিয়ামে বসেছিলেন। হঠাৎ অনুভব করলেন মাথাটা কেমন যেন চক্কর খাচ্ছে। প্রেশার বাড়ল নাকি! একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক সেকেন্ড পরেই সেই অল্প ভয় আতঙ্কে বদলে গেল। তা হলে প্রেশার ভেবে যে ভুল করেছিলেন, মাথা চক্কর সেই কারণে নয়! তত ক্ষণে চিৎকার, চেঁচামেচি আর আতঙ্কে ছোটাছুটি করছিলেন। বুঝতে আর বাকি রইল না কী ঘটে চলেছে। ব্যাঙ্ককের প্রবাসী ভারতীয় প্রেম কিশোর মোহান্তি ভূমিকম্পের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র কাছে।
শুক্রবার সকালে জোড়া ভূমিকম্প হয় মায়ানমারে। সেই কম্পন অনুভূত হয় মায়ানমার ছাড়িয়ে পড়শি দেশ তাইল্যান্ড, চিন, ভারত এবং বাংলাদেশেও। আমেরিকার জিয়োলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, কম্পনের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭.৭ এবং ৬.৪। আবার ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনের মাত্রা ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৭।
এনডিটিভি-কে মোহান্তি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ককে মেয়ের স্কুলের অডিটোরিয়ামে বসে ছিলাম। স্কুল শেষ হলে প্রতি দিনের মতোই মেয়েকে নিয়ে যাই। তাই ওখানেই বসে থাকি। শুক্রবার অডিটোরিয়ামে বসে থাকার সময় হঠাৎ মনে হল মাথা ঘুরছে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডেই বুঝলাম, মাথা ঘোরানো নয়, আসলে ভূমিকম্প হচ্ছে। ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছাদের দিকে তাকাতেই দেখলাম ভয়ানক ভাবে দুলছে লাইট, পাখা। মনে হচ্ছিল এখনই ছাদটা মাথার উপর ভেঙে পড়বে। সাহসে ভর করেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম।’’ মোহান্তি জানান, স্কুলে তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। সকলকে স্কুলের বাইরে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বলা হচ্ছিল।
কিন্তু সেই ফাঁকা জায়গায় যেতে হলেও বড় বড় বাড়িগুলির পাশ দিয়ে যেতে হবে। মোহান্তি বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল বহুতলের পাশের গলি না ধরতে। কিন্তু সকলে সেই রাস্তা ধরেই এগোচ্ছিলেন। আমিও ওই রাস্তা ধরি। যাওয়ার সময় বহুতলগুলির দিকে তাকাতেই বুক কেঁপে উঠেছিল। বহুতলগুলি ভয়ানক ভাবে দুলছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমাদের উপর ভেঙে পড়বে। সেগুলির মাথায় থাকা সুইমিং পুল থেকে জল চলকে চলকে নীচে পড়ছিল। ওই দৃশ্য ভুলে যাওয়ার মতো নয়!’’
মোহান্তি জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর পরিবার সুরক্ষিত আছেন। তবে যে বাড়িতে তাঁরা থাকেন, সেই বাড়িতে খুব ক্ষতি না হলেও ভূমিকম্পের জেরে ফাটল ধরে গিয়েছে। এই ভূমিকম্পের জেরে তাইল্যান্ডে মৃত্যুর সংখ্যা কিছু জানা গেলেও, মায়ানমারে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে অসরকারি সূত্রে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।