বিপর্যয়: ভূমিকম্পের জেরে গ্যাস লিক। তা থেকেই ছড়াল আগুন। নেভাতে তৎপর দমকল। দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ার রিজক্রেস্টে। এএফপি
রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কাল আবার ঘর-দোর সব দুলে উঠল। বৃহস্পতিবারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। পরে টিভি দেখে বুঝলাম কারণটা। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা এ বার ৭.১! এবং স্থায়িত্ব প্রায় ৪৯ সেকেন্ড। পর-পর দু’দিনে দু’টো ভূমিকম্প? কোনটা শক, আফটারশক বুঝিনা। কিন্তু যা হল, সেটা বিভীষিকাই!
সবে আড়াই বছর হল নিউ অর্লিয়্যান্স থেকে দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় এসেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবারের আগে কম্পন সে ভাবে টের পাইনি। গোড়ায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে টিভি-ইন্টারনেটে দেখলাম, ১৯৯৯-এর পরে এই মাত্রায় কম্পন নাকি আর হয়নি এখানে। রেকর্ড ৬.৪! সেটাও ভেঙে গেল শুক্রবার। মেয়েকে নিয়ে বাড়ির কাছেই দাবা খেলার একটা জায়গায় গিয়েছিলাম। সেখানে হঠাৎ দেখি, সোফাটা নড়ছে। যেন পুরো বাড়িটা পাগলপারা ঢেউয়ে ওঠা-নামা করছে। সামনের এক ভদ্রলোক দেখলাম হেডফোন খুলে উঠে দাঁড়ালেন। উপরে তাকিয়ে দেখি, সিলিং থেকে ঝোলানো বাতিগুলো এ-দিক থেকে ও-দিকে যাচ্ছে। গায়ে কাঁটা দিল— মাথায় না ভেঙে পড়ে!
পাশের ঘরে গেলাম মেয়ের খোঁজ নিতে। দেখি, খেলা বন্ধ। অনেকে বাইরে চলে গিয়েছেন। মেয়ে অবশ্য ওখানেই বসে। তখনই আবার স্ত্রীর ফোন— ‘‘বাড়িটা প্রচণ্ড দুলছে যে। কী হবে?’’ কুক্ষণে বলেও ফেললাম যে, বৃহস্পতিবার ক্যালটেক-এর ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন বটে খুব শিগগিরি আরও একটা বড় ভূমিকম্প হতে পারে। এটা হয়তো সেটাই। তা-ও ফোনে যতটুকু পারা যায়, শান্ত করলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সব দাবাড়ুরা ফিরে এলেন। শুরু হল খেলা।
বাড়ি ফিরে টিভি-ইন্টারনেট খুলে বসতেই চোখ কপালে উঠল— বাইরে তো তাণ্ডব চলেছে! বৃহস্পতিবার কম্পনের উৎসস্থল রিজক্রেস্ট শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের খাঁড়ার ঘা পড়ল এর আশপাশেই। লাস ভেগাসে ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এনবিএ) সামার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল শুক্রবার। ভেস্তে গেল। চ্যানেল পাল্টে দেখলাম, ‘লাইভ’ নিউজের পুরনো ফুটেজ দেখাচ্ছে। দুই উপস্থাপক বলছেন, ‘‘সম্ভবত আবার বড় কম্পন হল। মনে হয়, টেবিলের নীচে ঢুকে পড়াই ভাল।’’ হলও তাই। আচমকা বিজ্ঞাপন বিরতি নেওয়ার আগে তাঁরা যেন জোর করেই বলে গেলেন, ‘‘ফিরে আসছি বিরতির পরে।’’
ফেসবুক, টুইটার দেখলাম উপচে পড়ছে নোটিফিকেশনে। এক-একটায় এক-এক রকম লন্ডভন্ডের ছবি। কোথাও সুইমিং পুলের জল ফুঁসছে। তো কোথাও হাঁ-মুখ বেরিয়ে গিয়েছে কংক্রিটের রাস্তার। এক জন ওয়ালমার্টের ছবি দিয়েছেন দেখলাম— সস, জ্যামের বোতল সব ভেঙে পড়েছে মাটিতে। রিজক্রেস্টের কাউন্টি লাইব্রেরির একটা ছবিতে দেখলাম, কে যেন ভয়ানক আক্রোশে সব বই তাক থেকে নামিয়ে রেখেছে। কোথাও রেস্তোরাঁর দেওয়ালে চওড়া ফাটল, তো কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি বেঁকে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের মতো এ দিনও দেখলাম বেশ কিছু বাড়ি, রেস্তোরাঁয় গ্যাস লিক করে আগুন লেগেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। বেকার্সফিল্ড এবং ট্রনা থেকে প্রায় দেড়শো জনকে সরিয়ে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হয়েছে, খবর পেলাম। টিভিতেই দেখলাম, বিপর্যয় মোকাবিলায় ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর প্রেসিডেন্টের তরফে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আর্জি জানিয়েছেন। ট্রনা শহরে প্রায় হাজার দুয়েক লোক জল, বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে রয়েছেন। লাস ভেগাসে খেলা বন্ধ। এ দিন কম্পন অনুভূত হয়েছে মেক্সিকোতেও। মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই শুনেছি, ডিজনিল্যান্ড-এর রাইডগুলো সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভূতাত্ত্বিকেরা বলছিলেন, মূল কম্পনের আগে ও পরে অনেক ধরনের কম্পন হয়। আশা করছি, বৃহস্পতিবার ছিল তেমনই প্রাক্-কম্পন। শুক্রবার ছিল প্রধানটি। এবং তাতেই ইতি। এখন সময়ই বলবে, কী হয়!
লেখক সিভিল এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy