ঠাকুর এল কলকাতা থেকে।
পুজো মানে ঘরে ফেরা, পুজো মানে ফিরে দেখা। বাড়ির পুজো, পাড়ার পুজোর গন্ধই আলাদা। বারোয়ারি পুজোর অবশ্যই জাঁকজমক আছে, কিন্তু বড় অভাব প্রাণের টানের। বহু বছরের প্রবাস জীবনের সেই অভাব মেটাতে গত বছর থেকে ঘরোয়া পুজোতে ইস্ট লন্ডন আর এসেক্স-এর বাসিন্দারা মেতে উঠেছেন। ঠাকুর এসেছে কলকাতা থেকে। ঢাকে কাঠি পড়তে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিন।
এই বছরে উদ্দীপনা একটু বেশি সমস্ত বাসিন্দার মধ্যে। কারণ, শুধু একদিন নয়, বাড়ির পাশেই পুজো হবে গোটা উইকেন্ড জুড়ে। যে ছেলেমেয়েরা সারা বছর বিদেশি সাজসজ্জায় অভ্যস্ত, তারাই পুজোতে কোন শাড়িটা পরবে কিংবা নতুন কায়দার ধুতি-পাঞ্জাবিটা ইউনিক কিনা তা নিয়েই ব্যস্ত।
আরও পড়ুন: গৌর সিটিতে মাতৃবন্দনার প্রস্তুতি তুঙ্গে
কর্তা-গিন্নিরা এই ক’দিন ছুটি নিয়েছেন, কারণ স্বদেশের পুজোর আনন্দটা বিদেশে সপরিবার ভাগ করে নেওয়া যাবে বাড়ির খুব কাছে থেকেই।
শিউলি সৌরভ না থাকলেও জমজমাট পুজোর আমেজ রয়েছে একশো শতাংশ।
এসেক্স ইন্ডিয়ান্স কমিউনিটি গ্রুপ-এর পুজো সাড়া জাগিয়েছে সবার মধ্যে। এ বারের পুজো হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে, বিশপ হল কমিউনিটি সেন্টারে। ব্রেন্টউড-এর শহরতলিতে, ওয়েস্টার জোনের মধ্যেই গন্ত্যবস্থল। চার দিকে খোলা মাঠ, বাগান— সব মিলিয়ে মনের কোণে একটা সুরই শুধু গুন্ গুন্ করছে, আয় রে ছুটে আয়, পুজোর গন্ধ এসেছে। পুজোর সাজসজ্জার সামগ্রী এসেছে সুদূর কলকাতা থেকে।
পুজোর কয়েকটা দিন বিদেশের মাটিতেই পাওয়া যাবে কলকাতার গন্ধ।
কারণ আয়োজকেরা নতুন প্রজন্মকে ট্র্যাডিশনাল পুজোর সাজসজ্জার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। তাই কালীঘাটের পটুয়াপাড়ার সঙ্গে এসেক্স-এর মা দুর্গার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন মঞ্চসজ্জাশিল্পী নীলকৌশিক। কলকাতার ছবির ক্যানভাস দিয়ে সাজানো হবে পুরো হলটি। সারা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গার মতো এসেক্স-ও মেতে উঠবে ঢাকের তালে, ধুনোর গন্ধে। ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে আসবে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে। অষ্টমীর অঞ্জলিতে, নবমীর সন্ধিপুজোতে, দশমীর সিঁদুর খেলায় আর বিজয়ার মিষ্টিমুখে মেতে উঠবে এসেক্স। পুজোর পুরো উইকেন্ড সবার হেঁশেল বন্ধ। কারণ পুজোর প্রসাদ আর ভোগের স্বাদই আলাদা।
নতুন প্রজন্মও মেতে ওঠে পুজোর আনন্দে।
বাঙালি-অবাঙালি সবার কাছেই এই পুজোর একটাই নাম— আমাদের দুর্গাপুজো। এসেক্স ইন্ডিয়ান্স-এর কর্মকর্তারা মনে করেন, দুর্গাপুজো শুধু সামাজিক উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘আমার দুর্গা’ আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেবে সেই দায়িত্বের কথা গান, নাচ আর কবিতার মাধ্যমে, সাধারণ মেয়েরা হয়ে উঠবে কমলাসুন্দরী। শরতের সপ্তাহান্তের পুজো মনে করিয়ে দেবে সকালবেলার শিউলিফুলের গন্ধ, পায়ের নীচের শিশিরভেজা ঘাস, আকাশবাণীর পুজোর গান আর ফেলে আসা শিকড়ের টান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy