পুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
চার পাঁচ জন বাঙালি এক সঙ্গে হলেই দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়— এ রকম একটা কথা শোনা যায় বটে। কথাটা একটুও ভুল নয়। প্রবাসে বাঙালির দুর্গাপুজো কিন্তু কলকাতা তথা বাংলার দুর্গাপুজোর থেকে অনেকটাই আলাদা। জাঁকজমক দেশের দুর্গাপুজোর সঙ্গে কোনও ভাবেই তুলনীয় নয়, কিন্তু আন্তরিকতা, কর্মব্যস্ততা বা আনন্দের কোনও খামতি চোখে পড়ে না প্রবাসের পুজোয়।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। স্বামীর কর্মসূত্রে সেই নাইজেরিয়ার সব চেয়ে কর্মব্যস্ত শহর লেগোসের বাসিন্দা আমি। লেগোসের অবস্থান বিষুবরেখার খুব কাছাকাছি। তাই এখানে শীত-গ্রীষ্মের ফারাক খুব একটা বোঝা যায় না। শরতের পেঁজা তুলোর মতো মেঘ বা কাশফুলের বাহার চোখেও পড়ে না। কিন্ত লেগোসের সব বাঙালি তথা ‘নাইজেরিয়ান বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের’ উদ্যোগে দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানের উৎসাহে কোনও ভাটা দেখা যায় না।
পুজোর তিন-চার মাস আগে থেকেই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। লেগোসের দুর্গাপুজো চল্লিশ বছরেরও বেশি পুরনো। বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রপাত সেই ১৯৭৮ সালে। এখানে কিন্তু সপ্তাহান্তে দুর্গাপুজো হয় না। রীতিমতো তিথি-নক্ষত্র মেনে পাঁচ দিন ধরে মা দুর্গার আবাহনে মেতে ওঠে লেগোসের বাঙালি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রবাসে দুর্গাপুজোর ছুটির আশা করা যায় না। অফিসের কর্মব্যস্ততা, দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যেও পুজোর গোছগাছ, নৈবেদ্য সাজানো, মণ্ডপ প্রস্ততি, চাঁদা তোলা, স্পনসরশিপ জোগাড় করা, পুজোর পাঁচ দিন দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা, সন্ধেবেলা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রতিযোগিতার আয়োজনে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সুনিপুণ দক্ষতা দেখার মতো।
এখানে প্রতিমা প্রতি বছর পাল্টানো সম্ভব নয়। ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত একই প্রতিমায় পুজোর পরে ২০১৭-তে কলকাতা থেকে নতুন প্রতিমা আনা হয়েছে। আমাদের দু’জন পুরোহিতমশাই কিন্তু পেশাগত ভাবে পুরোহিত নন। নিজেদের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে সময় বার করে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর এই পাঁচ দিন তাঁরা পৌরোহিত্য করেন। পুজোতেই প্রকাশিত হয় পুজোর স্যুভেনির— ‘আমাদের কথা’। বিভিন্ন লেখা ছাড়াও সারা বছর ধরে চলা নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খবর থাকে এখানে।
হোক না সীমিত আয়োজন, নিউ ক্যাসেল হোটেলের কমিউনিটি হল আমাদের কাছে পাঁচ দিনের জন্য হয়ে যায় কলকাতার বারোয়ারি পুজো মণ্ডপ। এই কয়েক দিনে এখানকার প্রবাসী বাঙালি ফিরে যায় তার অতি প্রিয় আড্ডা, খাবারদাবার, নাচ-গান, আর রাজনীতি নিয়ে উত্তপ্ত আলাপ-আলোচনার জগতে। এই দুর্গাপুজো তাই আমাদের মতো প্রবাসীদের কাছে এক বিশাল পাওনা। সারা বছর আমরা এই পাঁচটা দিনের জন্যই অপেক্ষা করে থাকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy