২০১৯-এর এপ্রিল থেকে আয়ারল্যান্ডে রয়েছি। এমনিতে ‘হোমসিকনেস’ খুব একটা না-থাকলেও সে বছর পুজোর কাউন্টডাউন শুরু হতেই মন চঞ্চল হয়ে উঠল। ও দিকে অফিসের কাজের কল্যাণে বাড়ি ফেরা তখন দূর অস্ত্। মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে ইউটিউবে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম। মন খারাপের মাঝে আশার আলো দেখালেন এক প্রবাসী বন্ধু। জানতে পারলাম, আয়ারল্যান্ড দুর্গোৎসব কমিটি প্রতি বছর ডাবলিনের কমার্শিয়াল রোয়িং ক্লাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে। মন একটু হালকা হল। লক্ষ্য করলাম আয়ারল্যান্ডের নীল আকাশেও পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।
আমি যেখানে থাকি, সেই অ্যাথলোন থেকে ডাবলিন প্রায় একশো কুড়ি কিলোমিটারের পথ। মহাষ্টমীর সকালে বাস ধরে রওনা দিলাম ডাবলিনের উদ্দেশে। ডাবলিনের পশ্চিম প্রান্তে রেল স্টেশন হিউস্টনের বাস স্টপে পৌঁছলাম এগারোটা নাগাদ। সেখান থেকে লিফি নদী পার করে আর একটি বাস ধরে যখন কমার্শিয়াল রোয়িং ক্লাবে পৌঁছলাম, তখন সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে। ক্লাব চত্বরে ঢোকার সাথে সাথে কানে ভেসে এলো ঢাকের শব্দ। বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঢাকের আওয়াজ— সে এক রোমাঞ্চ! চারপাশে পাজামা-পাঞ্জাবি, লাল পাড়-সাদা শাড়ি পরা মানুষজন। যেন এক টুকরো বাংলা। মনোরম পরিবেশের সাহচর্য পেয়ে মন উৎফুল্ল হয়ে উঠল, মুহূর্তে ভুলে গেলাম এতটা পথ আসার ক্লান্তি। দেখা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত কিছু মানুষের সঙ্গে, আলাপ হল নতুন কিছু লোকজনের সঙ্গেও।
এই পুজোর সূচনা ২০১৭ সালে। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে লিফি নদী। শহরের পশ্চিম ভাগে সবুজে মোড়া ফিনিক্স পার্কের দক্ষিণ প্রান্তে এবং লিফি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত কমার্শিয়াল রোয়িং ক্লাব। আয়ারল্যান্ড দুর্গোৎসব কমিটি ও রোয়িং ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে ওই ক্লাবঘরে আয়োজিত হয় পুজো। এই দেশের অন্যান্য শহর, যেমন গলওয়ে, কর্ক, লিমেরিক থেকেও বাঙালি, এবং অবাঙালিরা এখানে ভিড় জমান। বেশ কয়েক জন আইরিশকেও দেখলাম পুজোর আনন্দ উপভোগ করছেন।
উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে পারলাম, দুর্গাপ্রতিমা আনা হয়েছে কলকাতা থেকে। সাবেকি ধাঁচে গড়া প্রতিমা আর ক্লাবঘরের অলঙ্করণ দেখে কে বলবে— বাংলার বাইরে আছি! কুমারী পুজো, অঞ্জলি, সন্ধ্যারতি, সন্ধিপুজো থেকে শুরু করে সিঁদুরখেলা, উৎসবের সব রীতি সুচারু ভাবে পালন করা হয় এই পুজোয়। আর বহু দিন ভাল বাঙালি খাবার খেতে না পারা বাঙালির কাছে কচুরি, আলুর দম, চাটনি, পায়েস সহযোগে ভোগের প্রসাদ এক নির্ভেজাল পরিতৃপ্তি। পুজোর অধিকাংশ উপকরণ কলকাতা থেকে আনা হলেও পদ্মফুলের অভাবে লিলি ফুলে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোর নৈবেদ্য সাজানো হয়। সরকারি ছাড়পত্রের অভাবে অবশ্য প্রতিমা নিরঞ্জনের পরিবর্তে ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে মাকে বিদায় জানানো হয়।
ভাগ্যচক্রে এ বছরও পুজোয় দেশে ফিরতে পারব না। পুজো কমিটির ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে জানতে পারলাম, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর ভার্চুয়ালি পুজো সম্পন্ন হলেও এ বছর আবার কমিটি ধুমধাম করে পুজোর আয়োজনে কোমর বেঁধেছে। বর্তমান অবস্থার জন্য কিছু বিধিনিষেধ হয় তো থাকবে, তবুও উদ্যোক্তাদের আশা ২০১৯-এর ৭৫০ জন জনসমাগমের রেকর্ড হয় তো এই বছর ভেঙে যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy