প্রতীকী ছবি।
গাছের পাতার রং পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে শরতের রাত দীর্ঘ হতে শুরু করে। আর লন্ডনের কনকনে ঠান্ডা সকালগুলো জানান দেয়, পুজো আসছে। বছরের যে চারটে দিনের জন্য লন্ডন আর তার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা অপেক্ষা করে থাকেন, সেই শারদ উৎসব কার্যত দরজায় কড়া নাড়ছে।
লন্ডনে শরৎ কাল মানে আক্ষরিক অর্থেই পুজোর অনুভূতি। পুজো বাড়ির ফুল, ধূপ আর কর্পূরের গন্ধে এখানকার সব বাঙালিই ফিরে পেতে চান দেশে তাঁদের ফেলে আসা দিনগুলো। আর যে প্রজন্মের এখানেই জন্মানো আর বেড়ে ওঠা, তারা নিজেদের শিকড় অনুভব করতে পারে বছরের এই ক’টা দিন। রোজকার ‘অফিস লুক’ ছেড়ে লন্ডনের বাঙালি এই চারটে দিন শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবি, শালের মতো ‘ট্র্যাডিশনাল’ পোশাকই পছন্দ করেন।
গত বছর অতিমারির আবহে এখানে বেশির ভাগ পুজোই অনুষ্ঠিত হয়েছিল অনলাইনে। এ বার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে। তাই বেশ কয়েকটি পুজো সংগঠন এ বছর চার দিন ধরে পুজো করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লন্ডন শহর ও তার সংলগ্ন এলাকায় সব মিলিয়ে ৪০টির মতো দুর্গাপুজো হত। গত বছর ঢাকে কাঠি পড়েনি অনেক মণ্ডপেই। তবে এ বার তাদের মধ্যে অনেকেই সামনাসামনি পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল ‘ইলিং টাউন হল’-এর দুর্গাপুজো। গত বছরও খুব ছোট করে পুজোর আয়োজন করেছিল তারা। ‘বেঙ্গল হেরিটেজ’ আর ‘লন্ডন শারদ উৎসব’ আয়োজিত এই পুজো শুধু লন্ডন নয়, গোটা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পুজো। অতিমারির আগে পুজোর ক’টা দিন ১০ হাজার মানুষ জড়ো হতেন এখানে। ভোগের আয়োজন থাকত অন্তত চার হাজার লোকের জন্য। করোনা আবহে এ বার তেমন বড় করে না হলেও বিধি-নিষেধ মেনেই পুজোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
‘মা আসছেন’ ব্যানার পড়েছিল আগেই। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বছরে তাঁদের থিম হল ‘ইয়া দেবী’। এই থিমের মাধ্যমে মাতৃত্বের উদ্যাপন হবে এ বার। অঞ্জলি থেকে ভোগ, বোধন থেকে বরণ— থাকবে সব কিছুর আয়োজনই। চার দিন হবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। তবে পুজোর ঠিক প্রথাগত তারিখ নয়। ইলিং টাউন হলে পুজো হবে ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর। সপ্তাহের শুরুতে কাজের দিনে কেউই অফিসে ছুটি পাবেন না। খোলা রয়েছে স্কুলগুলিও। তাই সবাই যাতে সপ্তাহান্তে আনন্দ করতে পারেন, অন্য প্রবাসী পুজোর মতো এখানেও দিনের রদবদল করা হয়েছে।
ষষ্ঠীতে থাকছে নাচের অনুষ্ঠান। সপ্তমীর সন্ধে জমবে অন্তাক্ষরীর আসরে। হবে ফ্যাশন শো-ও। অষ্টমীতে ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতার আয়োজন করছেন উদ্যোক্তারা। সকালে কুমারী পুজো, সন্ধি পুজোও হবে নিয়ম মেনে। এ বার চার দিনই থাকবে চণ্ডীপাঠের ব্যবস্থা। দশমীতে হবে বরণ আর সিঁদুরখেলা। পুজোর ভোগের পাশাপাশি বসবে চপ-কাটলেটের স্টল। সঙ্গে থাকবে হস্তশিল্পের নানা জিনিসের স্টলও। ছোটদের জন্য থাকছে ফেস পেন্টিংয়ের ব্যবস্থা।
কোভিড আবহে সব বিধি মেনে এত কিছু আয়োজন করা যাবে? লন্ডন শারদ উৎসবের তরফে সৌরভ নিয়োগী আনন্দবাজারকে জানালেন, সব রকমের বিধি মেনেই সব কিছুর আয়োজন করা হচ্ছে। ইলিং কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় এ নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে বলে জানালেন নিয়োগী। তা ছাড়া তাঁদের টিমে থাকছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরাও। পুজোর হলে যেমন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা সকলকে বলা হবে, সেই সঙ্গে ওই এলাকা বারবার স্যানিটাইজ় করার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। মণ্ডপে রাখা থাকবে মাস্ক। যাঁরা আসবেন, তাঁদের আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যাতে ভ্যাকসিনের তথ্যও তুলে রাখা যায়।
অতিমারির একাকীত্ব আর স্বজন হারানোর ব্যথা দূরে সরিয়ে প্রবাসী বাঙালিরা যাতে ক’টা দিন বিধি মেনে আনন্দ করতে পারেন, উদ্যোক্তারা সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy