প্রতীকী চিত্র।
টরন্টোয় এখন ‘ফল সিজন’। চারদিকে প্রকৃতি যেন মেতে উঠেছে দোলখেলায়। কী রং নেই গাছের পাতায়— লাল, হলুদ, গোলাপি, কমলা, আরও কত কী! এত সবের মধ্যেও যখন কয়েক দিন আগে মা ফোনে বলল— ‘মনে আছে তো, কাল মহাষষ্ঠী’— কী জানি কেন কাশফুল আর শিউলির সাদা রং সব কিছুকে ছাপিয়ে চোখে ভেসে এল। বুকের ভিতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি দোলা দিল। এ ভাবেই হয় তো সব প্রবাসী বাঙালির মধ্যেই গেঁথে রয়েছে দুর্গাপুজোর অনুরাগ।
গত বছর প্রবাস জীবনের শুরুতে যখন লোকাল স্টোরে পাঁচফোড়ন ও পোস্ত দেখতে পাওয়ায় উৎফুল্ল আর ডলার থেকে টাকাতে কনভার্ট করার অনুশাসনে ব্যস্ত, তখনও বুঝিনি এই বিদেশ-বিঁভুইয়ে বাঙালিরা কীভাবে স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের বাঙালি আবেগকে! টরন্টোয় অনেকগুলো দুর্গাপুজো হয় খুব ধুমধাম করে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হল ‘টরন্টো কালীবাড়ি’, ‘টরন্টো দুর্গাবাড়ি’, ‘কানাডা বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির’, ‘বেদান্ত সোসাইটি অব টরন্টো: রামকৃষ্ণ মিশন’, ‘প্রবাসী বাঙালি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ ইত্যাদি। কলকাতার মতো বিশাল প্যান্ডেল না-হলেও, লাইন দিয়ে মন্দিরে ঢোকার ভিড় কোনও অংশে কম যায় না। শুধুমাত্র টরন্টো না, আরও চারপাশের শহরতলি থেকে অনেকেই আসেন পুজো দেখতে, পুষ্পাঞ্জলি দিতে।
তবে এ বছরে পুজো একেবারে অন্য রকম। টরন্টো এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ‘সেকন্ড ওয়েভ’ বা ‘দ্বিতীয় ঢেউ’য়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক প্রশাসনের নির্দেশ মেনে উদ্যোক্তারা এ বছর আর কোনও আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করছেন না। কোথাও পুজোর সব অনুষ্ঠানই বাতিল হয়ে গিয়েছে, কোথাও বা আবার উদ্যোক্তারা বলছেন, পুজো এবং পুষ্পাঞ্জলি হবে অনলাইনে। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন।সত্যিই এই বছর করোনা থাবা বসিয়েছে নতুন জামাকাপড়, গয়নার সাজগোজ, ভক্তিভরা চোখের সারি, খুদেদের অনুষ্ঠান, পুজোর আড্ডা, খিচুড়ি ভোগ আর দেশ থেকে আসা শিল্পীদের লাইভ পারফরম্যান্সের উপরে। কিন্তু এর পরেও মনখারাপ করা মুখ নিয়ে যখন শ্রীমতী বলে ওঠে, ‘দেখো না, মেপল পাতাগুলোর সঙ্গে দুর্গার ত্রিশূলের ত্রিফলার কী আশ্চর্য মিল’, তখন বুঝতে পারি যে, এত সহজ নয় দুর্গাপুজো ঘিরে বাঙালির আবেগ ও উদ্দীপনাকে দমিয়ে রাখা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy