ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
ইরান এ-দিকে মসজিদের মাথায় ‘যুদ্ধের নিশান’ লাল পতাকা ওড়াল। বেরিয়ে এল ২০১৫-র পরমাণু চুক্তি থেকেও। আর ও-দিকে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানালেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে এ বার ‘খুব দ্রুত এবং ‘বড় হামলা’ হবে ইরানে। লিখলেন, ইরানের ৫২টি ‘টার্গেট’ ঠিক করে রেখেছে আমেরিকা। কাসেম সোলেমানি খুনের বদলা চেয়ে গোড়া থেকেই ফুঁসছে ইরান। মুখে ‘যুদ্ধ চাই না’ বলছেন বটে, কিন্তু ধারাবাহিক হুমকি দিয়ে চলেছেন ট্রাম্পও। এই পরিস্থিতিতে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস-ও।
শুক্রবার ভোররাতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত হন ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের কাডস ফোর্সের কমান্ডার সোলেমানি। তার পর-পরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে বদলার দাবিতে সুর চড়াতে শোনা গিয়েছিল। শনিবার শিয়া অধ্যুষিত কোম শহরের ঐতিহ্যবাহী জামকরন মসজিদের উপর ধর্মীয় নীল পতাকার বদলে উড়তে দেখা গেল যুদ্ধের নিশানবাহী লাল পতাকা। বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের দাবি, ইরানের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। তাঁদের মতে, এর অর্থ— দেশের জনগণকে যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে বলা। গত কাল রাতেই বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ও বালাড বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার খবর আসে। বাগদাদে মার্কিন ‘গ্রিন জ়োন’ লক্ষ্য করেও ইরানের তরফে মর্টার হামলা হয় বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের।
এরই পাল্টা ট্রাম্পের আজ ‘৫২টি টার্গেটের’ টুইট বলে মনে করছেন অনেকে। কয়েক বছর আগে ইরানের মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জনকে পণবন্দি করার পাল্টা হিসেবেই এই সংখ্যা বেছেছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলি ইরান ও তার সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড়সড় হামলা হবেই। আমেরিকা আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না।’’ এ দিকে শনিবারই ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়’ এই দাবিতে আমেরিকার ৩৪টি প্রদেশের ৮০টি শহরে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ।
রবিবার রাতে ইরান ঘোষণা করে, এই মার্কিন আগ্রাসনের মুখে ২০১৫-র পারমাণবিক চুক্তি আর মানবে না তারা। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানান, যে কোনও মুহূর্তে তাঁর দেশ পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক গবেষণা এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দিতে সক্ষম। এই চুক্তি থেকে ২০১৮-তেই বেরিয়ে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইরানের তরফে প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ট্রাম্পের নির্দেশে কাল থেকেই নানা দেশের সঙ্গে বার্তালাপ শুরু করে দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, পম্পেয়ো ফোনে কথা বলেছেন পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়ার সঙ্গে। ইরাক ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর। সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও হোয়াইট হাউসের কথা হয়েছে। কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, ইরানকে ‘জবাব’ দিতে আমেরিকা অন্য দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চাইছে। বিশেষত ট্রাম্পের নজর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দিকে।
কিন্তু আফগানিস্তান যে সেটা করতে দেবে না, শুক্রবারই তা স্পষ্ট করে দেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪-য় কাবুল-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল, তা মেনে কোনও ভাবেই অন্য দেশের উপর আঘাত হানতে আমাদের মাটি কাউকে ব্যবহার করতে দিতে পারি না।’’
আজ একই সুরে ‘না’ বলল পাকিস্তানও। বার্তা দিয়েছে সৌদি আরবও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রিয়াধের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, ড্রোন হামলার আগে সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি আমেরিকা। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে ইরাকের তদারকি প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দেল মাহদিকে ফোন করেন সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, আমেরিকার মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি ও আরব আমিরশাহির উপরেও হামলা চালাতে পারে ইরান।
এ-দিকে আজ সোলেমানির শেষ যাত্রাতেও দাবি উঠল বদলার। কাল ছিল ইরাকে। আজ ইরানেও মিছিলে কার্যত জনসমুদ্রের চেহারা নেয়। স্লোগান উঠতে থাকে, ‘শয়তান আমেরিকা, নিপাত যাক’। শিয়াপন্থী বিপুল সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিছিলে পা মেলান রাজনৈতিক নেতাদেরও একটা বড় অংশ। কাল ইরাকে বাগদাদ থেকে শুরু হওয়া মিছিল কারবালা ঘুরে পৌঁছয় নজাফ শহরে। তেহরানের মিছিল শেষে আজই সোলেমানির দেহ পৌঁছবে তাঁর জন্মস্থান কেরমানের শহরতলিতে। সেখানেই শেষকৃত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy