ছবি এএফপি।
আর ঠিক এক বছর। ‘টি-২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের’ দিকে তাকিয়ে শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের একটা বড় অংশ। এ বারও কি ডোনাল্ড ট্রাম্প? নাকি হোয়াইট হাউসে অন্য কেউ! ব্যালট-বাদ্যি শুরুর ঢের আগে থেকেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এমন মেরুকরণের চাপ এর আগে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সামলাতে হয়নি। প্রথম দফার মেয়াদে প্রেসিডেন্ট যা-যা করেছেন, কেউ বলছেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’, তো কেউ এখনই ইমপিচমেন্ট চাইছেন ট্রাম্পের।
এরই মধ্যে আবার কাল থেকেই ফের ‘শাট ডাউনের’ ভূত চেপেছে হোয়াইট হাউসের ঘাড়ে! খোদ প্রেসিডেন্টই ইঙ্গিত দিয়ে বসলেন, মাস পেরোনোর সময় এগোলে তাঁর সরকার চালানোর মতো অর্থ ঘরে আছে কি না, তাই নিয়ে ফের সংশয়ের মেঘ। যা দেখে অনেকেরই ধারণা, বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা যখন ইমপিচমেন্ট তদন্ত নিয়ে এগোনোর পথ বিস্তৃত করছেন, তখনই সরকার না-চলার ইঙ্গিত দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন ট্রাম্প।
সেনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার-সহ বেশ কয়েক জন ডেমোক্র্যাট নেতা সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ইমপিচমেন্ট বিতর্ক থেকে জনতার নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প ফের ‘শাট ডাউন’-এর পথে হাঁটতে পারেন। এই নিয়ে প্রশ্ন করায় গত কাল হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন না যে ডেমোক্র্যাটরা এমনটা ভাবছেন। ফের সাংবাদিকরা জানতে চান, শাট ডাউন এড়ানোর চেষ্টা কি করবেন? প্রেসিডেন্ট তাতে বলেছেন, ‘‘কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়। কী ধরনের মীমাংসা আলোচনা হবে, তার উপরে সব নির্ভর করবে।’’ শাট ডাউন মানেই সরকারি কাজে নিযুক্ত কর্মীরা বেতন পাবেন না। গত বছর এবং এ বছরের গোড়ায় ৩৫ দিনের আংশিক শাট ডাউনের সাক্ষী হয়েছে আমেরিকা। কিন্তু এ বার যে-হেতু বছরখানেকের মধ্যেই ভোট, তাই পরিস্থিতি আদৌ সে দিকে যাবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।
রাজনীতির অলিন্দে দাঁড়িয়ে বেশির ভাগ প্রশ্নের অভিমুখই তাই ২০২০-র ভোট-কেন্দ্রিক। যেমন, ট্রাম্পকে টেক্কা দেওয়ার মতো কে আসছেন ডেমোক্র্যাটদের তরফে? বিরোধী দলের মধ্যে মতাদর্শগত ফারাক চোখে পড়ছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। তা ছাড়া প্রদেশ-ভিত্তিক বিভাজনও উঠে এসছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের মধ্যে। হেভিওয়েটের তালিকা লম্বা। কিন্তু প্রাইমারি ভোটের দৌড় এখন ডেমোক্র্যাটরা কী ভাবে সামলায়, সে দিকে সব চেয়ে বেশি নজর রাখছেন রিপাবলিকানরাই।
ট্রাম্প সমর্থকদের একটা বড় ভরসা দেশের পোক্ত অর্থনীতি। শেয়ার বাজারের লম্বা লম্বা লাফ। তবে নানাবিধ কারণে মন্দার যে পূর্বাভাস রয়েছে, সেটাও তাঁদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। বেকারত্বের হারও গত পাঁচ দশকের মধ্যে সব চেয়ে খারাপ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে—৩.৬ শতাংশ। এর মধ্যে আবার ইমপিচমেন্ট কাঁটা! বিরোধীরা বলছেন, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস যদি প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করেই দেয়, তা হলে ট্রাম্পের কাছে এই ভোট হবে নিছক নিয়মরক্ষা।
তাই আশা-আশঙ্কা রয়েছে দু’তরফেই। ধোঁয়াশাও। তবু ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে দেশের আড়েবহরে ভাগ হয়ে যাওয়ার ছবিটা। রাজনীতির দ্বন্দ্ব বাড়াচ্ছে নাগরিক অধিকার নিয়ে রোজকার বিক্ষোভ-আন্দোলন। প্রেসিডেন্টের শাসনকাল নিয়ে ইতিহাসবিদ মার্ক আপডিগ্রোভ যেমন বলেই দিলেন, ‘‘দু’টি দলই এখন মনে হচ্ছে সমান একগুঁয়ে আর অবাধ্য। কেউ নিজের জায়গা ছাড়তে নারাজ। ভিত্তি থাক বা না-থাক, দু’দলই নিজেদের মতো করে ‘বাস্তব’ ব্যাখ্যা করছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের।’’ মার্কের মতো আরও বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক এই মেরুকরণই সমাজ ও অর্থনীতিতে দু’ভাগ করে ফেলেছে আমেরিকাকে। এমন বিভাজন এর আগেও দেখেছে আমেরিকা। কিন্তু ট্রাম্পই তাঁর চার বছরের শাসনকালে এতে হাওয়া দিয়েছেন বলে মত অনেকের। বিরোধীদের বরাবরই ‘অপদার্থ’ বলে এসেছেন প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটরা আবার ট্রাম্পের নীতি, আদর্শকে আমেরিকার ভবিষ্যতের পক্ষে ‘অভিশাপ’ বলে দাবি করেন।
শুধু আসন্ন ভোট নিয়ে আগ্রহ দু’তরফেই এক রকম। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে চমক দেখতেও মুখিয়ে সবাই। সে দেশেরই এক সংবাদ সংস্থার সমীক্ষা বলছে, ডেমোক্র্যাটদের ৮২ শতাংশ এবং রিপাবলিকানদের ৭৪ শতাংশ ভোট নিয়ে বিপুল আগ্রহী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসন এবং বর্ণবিদ্বেষমূলক নীতির কারণে এ বার চাপে পড়তে পারেন ট্রাম্প। রিপাবলিকানরা আবার প্রেসিডেন্টের কড়া অভিবাসন নীতিকেই ফের ভোটের ‘টনিক’ বলে ধরতে চাইছেন। তাঁদের দাবি, ২০১৬-র ভোটে ট্রাম্পের পক্ষে যে সমর্থন ভোটবাক্স পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি, এ বার তা ছাপিয়ে যাবে। সূত্রের খবর, দ্বিধাবিভক্ত ডেমোক্র্যাট নেতা-কর্মীদের ‘ভাঙানোর’ কাজও শুরু করে দিয়েছে ট্রাম্প শিবির।
দেশে কর্মসংস্থানে ধাক্কা লাগলেও ২০১৭-য় ‘ট্রাম্পের উপহার’ বিরাট কর-ছাঁটাই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি তাঁদের পালে বাড়তি হাওয়া দেবে বলে মনে করছেন রিপাবলিকানরা। দলের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য জ্যাসন চাফেজ় যেমন বললেন, ‘‘মানুষ নিজের পকেট মোটা দেখলেই খুশি হয়। বাকিদের কী হচ্ছে, দেশটা কেমন চলছে— অনেকেই সে সব নিয়ে মাথা ঘামায় না।’’ কিন্তু আগামী কয়েক মাসে কোনও ভাবে ছবিটা বদলালে, ট্রাম্পের পক্ষে পাশা পাল্টাতে পারে বলেও জানান তিনি।
কম সুদের হার নিয়ে গ্রাহকেরা খুশি। কিন্তু ট্রাম্প জমানায় আবাসন শিল্প কিংবা ছাত্রদের ঋণ খাতে মধ্যবিত্তের বাজেটে বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। চিনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধও প্রভাব ফেলেছে। বিরোধীরা তাদের প্রচারে এ সব বিষয় তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প-বিরোধিতা ছাড়া ডেমোক্র্যাটরা এখনও ভোটের কোনও কৌশল ঠিক করতে পারেনি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। লড়াই তাই সমানে-সমানে। ময়দানে ধোঁয়াশাও যথেষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy